আলো দিয়ে সাজানো কলার ভেলা ভাগীরথীর বুকে ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘প্রতীকী’ হয়ে ওঠে তিনশো ন’বছরের ‘বেরা’ ভাসান উৎসব।
কিন্তু ভাসান শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল বেরার যাত্রাপথ। তোপঘাট থেকে কোনও ভাবে জেটি পর্যন্ত গিয়ে আটকে যায় বেরার যাত্রাপথ। ফলে ভাসান দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন লক্ষাধিক মানুষ। শেষ পর্যন্ত আতশবাজি পুড়ে যাওয়া দেখেই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হল! উৎসবমুখর দর্শনার্থীদের ভাড়া করা নৌকার ভিড়ের চাপে ভাগীরথীতে স্বচ্ছন্দে বয়ে যেতে না পেরে থমকে গেল আলোয় মোড়া বেরার ভাসান। সেই সঙ্গে দুটি নৌকার ধাক্কায় অন্য একটি নৌকা উল্টে যাওয়ার উপক্রমও হয়। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এত নৌকা ভাগীরথীতে কী ভাবে ঘুরতে পারল?
যদিও প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নৌকা ভাড়া করে জলপথে লালবাগের বেরা ভাসানে যোগ দেন। কিন্তু নৌকা ভাড়া করে বহরমপুরের দিক থেকে এবং জিয়াগঞ্জের দিক থেকে আসা দর্শনার্থীদের ওই দুই প্রান্তে ভাগীরথীর বুকে কোনও নিরাপদ দূরত্বে দাঁড় করিয়ে রাখার পরিকল্পনা করা যেত বলেও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ মনে করেন। ভারপ্রাপ্ত লালবাগ মহকুমাশাসক তারক মল্লিক বলেন, “বেরা উৎসবের যাবতীয় পরিকল্পনা মুর্শিদাবাদ এস্টেট করে থাকে। ভাগরীথীর বুকে নৌকার নিয়ন্ত্রণ থাকলে ভাল হত। সামনের বছর নৌকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |
বৃহস্পতিবারের রাত সাড়ে দশটা। ভাগীরথীর দু’পাড় জুড়ে তখন উপচে পড়া মানুষের ভিড়। বেরা ভাসানের সঙ্গেই মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় হাউই। আকাশ ছুঁয়ে আলোকমালা ঝরে পড়ে ভাগীরথীর বুকে।আতশবাজির আলোয় রঙিন হয়ে বয়ে যায় ভাগীরথীর জল।
কিন্তু বেরা ভাসান সূচনার অনেক আগে থেকেই ভাগীরথীর বুকে ভেসে বেড়ায় নিয়ন্ত্রণহীন যন্ত্রচালিত ভুটভুটি নৌকা। খুব কাছ থেকে বেরা ভাসান দেখার জন্য সেই নৌকায় উৎসাহী মানুষের ভিড়। ভাগীরথীর মাঝ নদীতে এরকমই দুটো বড় নৌকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই দিক থেকেএসে ধাক্কা দেয় ছোট একটি নৌকায়। দুটি নৌকার ধাক্কায় উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয় ওই ছোট নৌকার। কোনও রকমে প্রাণে বাঁচেন ওই নৌকার সওয়ারিরা। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসনের উচিত ছিল পিকনিক পার্টির নৌকাগুলি আটকে দেওয়া। তাদের জন্যই বেরা তোপঘাট থেকে জেটির কাছে গিয়ে আটে গেল। বেরা ভাসান দেখতে পেলেন না দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা।”
এ বছরের বেরা উৎসবে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল। ভিড় দু’পাড় উপচে পড়ে। মানুষের মাথার সারি পাড় বরাবর জেগে রয়েছে রাত ১২ টাতেও।
ভাঙনের কবলে পশ্চিমপাড়ের মাটি আলগা হয়ে রয়েছে। ওই অবস্থায় দু’পাড়ে গ্যালারির মত করে অন্ধকারের মধ্যে দর্শনার্থীরা বসে রয়েছেন। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শনার্থীরা সংখ্যা কম নয়। পিছন থেকে কোনও ভাবে ধাক্কা লাগলে পাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা দর্শনার্থী সটান জলে গিয়ে পড়বেন। নির্বিঘ্নে বেরা উৎসব পালনের জন্য প্রশাসনের তরফে প্রায় তিনশো জন পুলিশ কর্মী ছিলেন। কিন্তু পাড়ের দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও পুলিশ কর্মীর দেখা মেলেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার (লালবাগ, মুর্শিদাবাদ) বলেন, “প্রশাসনের ১১টি নৌকা ছিল। তার মধ্যে দুটি নৌকায় সার্চ লাইট-সহ পুলিশ অফিসারের নেতৃত্ব চার জন করে পুলিশ কর্মী ছিলেন। বাকি ন’টি নৌকায় পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ন’জন ডুবুরি রাখা ছিল। তবে গত বারের তুলনায় এবার নৌকায় নিয়ন্ত্রণ ছিল।” |