ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে বিক্ষোভ,
ছাত্রী আবাসনে দুষ্কৃতী হামলা
ভীর রাতে কলেজের ছাত্রীনিবাসের বাইরে দাপিয়ে বেড়ালো দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ছাত্রীনিবাসে চড়াও হয় কয়েকজন যুবক। বন্ধ জানালা খুলে গরাদের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে ঘুমন্ত আবাসিকদের পা ধরে টেনে, কখনও লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ক্রমাগত উত্যক্ত করতে থাকে তাঁরা। জানালা ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টাও করে ওই দুষ্কৃতীরা। আবাসিক ছাত্রীদের অভিযোগ, নৈশ প্রহরীকে ডাকাডাকি করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায় নি। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে রাত তিনটে নাগাদ পুলিশ এসে পৌঁছলে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ আবাসিক ছাত্রীরা শুক্রবার সকালে কলেজের প্রধান দরজা আটকে উপযুক্ত নিরাপত্তা ও হস্টেল সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে ছিলেন ঝাড়গ্রাম থানার আইসি জ্ঞানদেও প্রসাদ সাহু-ও। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত আশ্বাস দেন, ছাত্রীদের হস্টেলে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এখন থেকে দু’জন নৈশপ্রহরী থাকবেন। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে ছাত্রীনিবাসের জানালাগুলি ছিটকিনির বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যক্ষ। সেই সঙ্গে রাতে পুলিশের গাড়িও এলাকায় টহল দেবে বলে আশ্বাস দেন আইসি। উপযুক্ত আশ্বাস পাওয়ার পর দুপুর ১টায় বিক্ষোভ ওঠে। এই ঘটনার জেরে এ দিন কলেজের পঠন পাঠনের কাজ ব্যহত হয়।
আবাসিক ছাত্রীদের অভিযোগ, মেয়েদের দোতলা হস্টেল ভবনটির বেহাল অবস্থা। ছাদ ছুঁইয়ে জল পড়ে। জানালা গুলির ছিটকিনি মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অগত্যা দড়ি কিংবা গামছা দিয়ে জানালার গরাদের সঙ্গে পাল্লা বেঁধে রাখতে হয়। রাতে মাঝে মধ্যেই বাইরে থেকে হস্টেল লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। শুনতে হয় অশ্লীল কটূক্তিও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটির পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও আতঙ্কে রয়েছেন আবাসিক ছাত্রীরা। রাজ কলেজের মোট তিনটি হস্টেল। দু’টি ছেলেদের ও একটি মেয়েদের। ছাত্রীনিবাসটি কলেজ চৌহদ্দির মধ্যেই রয়েছে। ছাত্রী নিবাসের কোনও স্থায়ী সুপার নেই। হস্টেলের একজন মেট্রন আছেন, তিনিও রাতে হস্টেলে থাকেন না। কার্যত অভিভাবকহীন অবস্থায় ৫৮জন আবাসিক ছাত্রী হস্টেলে রাত কাটান।
ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে? অন্যন্য দিনের মতো এ দিনও এক তলার ঘরগুলির আবাসিকেরা দড়ি ও গামছা দিয়ে গরাদের সঙ্গে জানালার পাল্লা বেঁধে ঘুমোচ্ছিলেন। একটি ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে দড়ি কেটে জানালা খুলে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তারপর লাঠি দিয়ে ঘুমন্ত তিন আবাসিককে খোঁচাতে থাকে। ওই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিন জন ছাত্রী। ওই ছাত্রীরা জানালেন, গভীর রাতে এমন ঘটনায় আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে হস্টেলের ভিতরে বারন্দায় চলে আসেন তাঁরা। ওই সময় পাশের ঘরেরও জানালার পাল্লার সঙ্গে বাঁধা থাকা দড়িটি পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপর গরাদের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে ঘুমন্ত এক ছাত্রীর পা ধরে টানতে থাকে দুষ্কৃতীরা। একতলার ঘরগুলির আবাসিকেরা আতঙ্কে দোতলায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে হুড়মুড়িয়ে ওঠার সময় কয়েকজন পড়ে গিয়ে জখম হন। ওই সময় দুষ্কৃতীরা জানালার গরাদ ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীরা পাইপ বেয়ে দোতলায় ওঠার চেষ্টা করে। ছাত্রীদের অভিযোগ, মোবাইল ফোন থেকে নৈশ প্রহরীকে ঘটনাটি জানানো হলে তিনি না বেরিয়ে উল্টে আবাসিকদের জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ার পরামর্শ দেন। আতঙ্কে অসুস্থ এক ছাত্রীকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত-র দাবি, “রাতে নৈশ প্রহরীই পুলিশে খবর দেন।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, হস্টেল ভবন সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে ছিটকিনি লাগানো হবে। এ দিন থেকেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে হস্টেলের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও মেট্রন-রা কেন রাতে হস্টেলে থাকেন না, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি নিমাইচাঁদবাবু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.