ভাড়াটের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুই বাড়িওয়ালা এবং তাঁর তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায়। গ্রেফতার করা হয়েছে এক বাড়িওয়ালাকে। নাম অরুণ সিংহ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, নন্দলাল মিত্র লেনে প্রায় আট কাঠা জমিতে ছোট ছোট টালির চালের ঘরে থাকত ১১টি পরিবার। মাস আটেক আগে দুই বাড়িওলা অরুণ সিংহ ওরফে মুন্না এবং কিশোর সিংহ ওই জমিতে বহুতল তৈরির জন্য এক প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি করেন। অভিযোগ, এর মধ্যে ভয় দেখিয়ে এবং টাকা দিয়ে ১০ জন ভাড়াটেকে তুলে দিলেও রাজেন্দ্র সিংহের পরিবারকে তুলতে পারেননি বাড়িওয়ালারা। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেখানে ঘর ভাড়া করে ছিলেন রাজেন্দ্র। তাঁরা না ওঠায় কাজ শুরু করতে পারছিলেন না প্রোমোটারও। এ নিয়ে বাড়িওলাদের সঙ্গে গোলমাল চলছিলই। তাই ওই পরিবারকে ‘শিক্ষা’ দিতেই বাড়ির সামনে রাজেন্দ্রর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ দুই বাড়িওয়ালা অরুণ ও কিশোর এবং আরও তিন জন স্থানীয় যুবক বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ জওহর এবং হরিলাল তিওয়ারি রাজেন্দ্রকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পরে রাজেন্দ্রর চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন, বাড়ি থেকে কিছুটা দুরেই তাঁর গোটা শরীর দাউদাউ করে জ্বলছে এবং তা নেভাতে তিনি ছোটাছুটি করছেন। পুলিশ জানায়, এর পর রাজেন্দ্রর স্ত্রী ও মেয়েরা তাঁর গায়ে কাঁথা-কম্বল চেপে ধরে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক।
পুলিশ জানায়, ওই রাতেই রাজেন্দ্রর স্ত্রী তনুজা সিংহ গোলাবাড়ি থানায় বাড়ির দুই মালিক এবং তাঁদের তিন সহযোগী বাপি, জওহর এবং হরিলালের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই ঘটনার তদন্তে নামেন এসিপি (নর্থ) জয়িতা বসু। গ্রেফতার করা হয় অরুণকে। বাকিরা পালিয়ে যায়।
শুক্রবার সকালে হাওড়া জেলা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তনুজা জানান, বাড়ি ছেড়ে উঠে যাওয়ার জন্য গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছিল। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হয়েছিল। তনুজা বলেন, “কাল সন্ধ্যায় যখন ওঁরা আমার স্বামীকে সন্ধ্যায় ডাকতে আসেন তখনও বুঝিনি, ওঁরা এমন করবে। পরে আমার স্বামীর চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি, তাঁর গোটা শরীর দাউদাউ করে জ্বলছে এবং তা দেখে হাসছে অরুণ ও কিশোর।” তনুজা জানান, তিনি যখন আগুন নেভাতে ব্যস্ত, তখনই পালান অভিযুক্তেরা। হাওড়ার ডিসি সদর নিশাত পারভেজ বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে এক জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। খুব শীঘ্রই ধরা পড়ে যাবে বলে মনে হয়।” |