গুপীর আমলকী গ্রাম, বাঘার হরিতকী গ্রাম ভেসে উঠবে নীল জলে। গুপীর মুখে শোনা যাবে রবি ঠাকুর, লালনের সুর। বাঘার ঢোলের সঙ্গে বাজবে একতারা। কলকাতার অ্যান্ডারসন ক্লাবের উদ্যোগে এ বার উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’-কে দেখা যাবে একেবারে অন্য মেজাজে।
ভূতের রাজা, নাকি সুরের চাঁচাছোলা গলায় বিশ্বজিৎ দাশগুপ্তর কণ্ঠে গান ধরবেন, জলের তলার সবুজবনে। ভূতের মুখে রামনামের মতো শোনা যাবে একদল ভূতের হরিনামের সম্মেলক।
কিন্তু জলের তলায় হাঁড়ি ভর্তি মন্ডা, মিঠাই কেমন করে হাল্লা রাজার যুদ্ধ আটকাবে?
জলের তলায় এই দৃশ্য তৈরি করতে যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছে উদ্যোক্তা সুদর্শন রায়কে। একদল বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে থালা উপচে পড়া মন্ডা, মিঠাই। হাল্লার রাজার সৈনিকরাও সেই মিষ্টির টানেই নাকি ভুলে যাবেন যুদ্ধের কথা! |
গুপী গ্রাম থেকে বিদায় নেবে প্রহরীর গানের তাড়া খেয়ে। তবে গুপী বাঘা ভূতের বর পেলেও এখানে দর্শকদের সামনে পুরোপুরি মিলিয়ে যেতে পারবেন না, ডুব দিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উধাও হবেন তারা। এই উধাও হওয়ার ঝকমারির দায়িত্ব নিয়েছেন কণিষ্ক সেন। তাঁর আলোর খেলায়।
গুপী-বাঘার জঙ্গলেই ভূতের সঙ্গে দেখা হবে, কিন্তু জল কেমন করে জঙ্গলের চেহারা নেবে? আবার কোন ভূতের খেলায় এক লহমায় জঙ্গল ভুতুড়ে আখড়ায় বদলে যাবে? সব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে ১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর অ্যান্ডারসন ক্লাবে।
ওয়াটার মিডিয়ামে গুপী-বাঘা, ভূতের রাজার জাদু খেলা আর হাল্লা- শুন্ডির লড়াইকে জমজমাট চেহারা দিতে সঙ্গীত নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন গুপী বাঘা ওয়াটার ব্যালের সঙ্গীত আয়োজক তবলা বাদক শুভেন চট্টোপাধ্যায়।
সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই শুভেন চট্টোপাধ্যায় নতুন গান জুড়েছেন এই নতুন মাধ্যমে। গুপীর চিরাচরিত গান শোনা যাবে না এখানে। ভূতের রাজা থেকে শুরু করে রাজার প্রহরী সকলের কণ্ঠেই সুর বসিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক। |
রমাপ্রসাদ বণিকের এই চিত্রনাট্যে সত্যজিতের জেলখানায় বন্দি বাঘা যেখানে ‘এক যে ছিল রাজা’ গানে দর্শকদের মন ভিজিয়েছিল ঠিক সেই অংশেই এবার জলের বাঘা ধরবেন লালনের গান। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’। অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে গুপীর গানে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহার করার সময় শুভেন চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের গানের গতিকে অনেকটা বাড়িয়ে গাইয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ আর লালনের পাশাপাশি থাকছে সত্যজিতের ‘মহারাজা তোমারে সেলাম’ গানটির প্রথম কলি।
‘বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর গলা শোনা যাবে শুন্ডির মন্ত্রীর সংলাপে, আর গুপীর গ্রামের জমিদারের কথায়। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ‘‘গুপী গায়েন যেমন উপেন্দ্রকিশোরের তেমনি সত্যজিতেরও। এমন কাজ করে খুবই আনন্দ পেয়েছি।’
বাঘার জন্যে কণ্ঠ দিয়েছেন ডঃ রামাদিত্য রায় আর গুপীর জন্য সুদর্শন রায়। জলের কথা মাথায় রেখে ব্যবহার করা হয়েছে লাইক্রার ফ্যাব্রিক কার বিশেষ ধরনের পোশাক, আর মেক আপ থাকছে পুরোপুরি ওয়াটারপ্রুফ। গুপী-বাঘা এবার জলের ধারায় বাঙালির নস্ট্যালজিয়াকে জাগিয়ে তুলবে। |