পুলিশ এবং বিএসএফের চোখে ধুলো দিয়ে সরকারি হোম থেকে পালানো ২০ জন বিচারাধীন কিশোর বন্দিকে শেষ পর্যন্ত ধরে ফেললো বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের ও পারে বাংলাদেশের দিনাজপুর এলাকার ঘটনা। এ দিন ভোর সাড়ে ৩টা নাগাদ বালুরঘাটের শুভায়ন হোম থেকে দল বেধে ২২ জন বিচারাধীন কিশোর বন্দি পালায়। তাদের ১৯ জন বাংলাদেশের নাগরিক। ৩ জন এ জেলার হিলি ও গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা।
প্রায় দুবছর আগে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশের নাগরিক ওই কিশোরেরা এ পারে ধরা পরে। |
বালুরঘাটের শুভায়ন হোম। —নিজস্ব চিত্র। |
এদের একাংশের সাজা শেষ হয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এ পারের বাসিন্দা পলাতক ওই তি নজন কিশোরের জুভেনাইলে আদালতে বিচার চলছিল। হোমের চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “হোম থেকে পালানোর পর পরই বাংলাদেশের নাগরিক এক কিশোর রাস্তা ভুল করে ফেলায় তাকে ধরে ফেলা হয়। জেলার বাসিন্দা আর এক কিশোরকে দুপুর ১২টা নাগাদ হিলির পুলিশ ধরে ফেলে। এরপরই খবর আসে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে বাকি ২০ জন।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী এ দিন বলেন, “হোমের পুলিশি নিরাপত্তা এড়িয়ে কি করে কিশোরেরা পালাল তা হোম সুপার ও মহকুমাশাসককে তদন্ত করে জানাতে বলেছি, পাশাপাশি ডিএসপির নেতৃত্বে পুলিশও তদন্ত করছে।” জেলাশাসক জানান, “বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা হয়েছে। শুক্রবার হিলিতে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং করে পলাতক কিশোর বন্দিদের ফেরানোর বিষয়ে কথা হবে।”
দিনের আলোয় হিলি বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে কি করে সীমান্ত টপকে কিশোরের দল ওপারে চলে গেল, তা নিয়ে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক বিএসএফ আধিকারিকের বক্তব্য, হিলির একাংশ এলাকা উন্মুক্ত জমির পথ ধরে কাঁটাতারবিহীন ওই সমস্ত এলাকা দিয়ে দলটি বাংলাদেশ ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে হিন্দি সিনেমার কায়দায় দলবেধে ওই কিশোরদের পালানোর কৌশল জেনে অবাক হন তদন্তে যাওয়া মহকুমাশাসক সুদীপবাবু এবং ডিএসপি উত্তম ঘোষ। তারা বলেন, “রীতিমত ছক কষে ক’দিন আগে থেকেই পালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।” শুভায়ন হোম চত্বরে দুটি আলাদা ভবনের একটিতে থাকে দুঃস্থ ও অনাথ শিশু কিশোরেরা। অন্যটিতে রাখা হয় শিশু কিশোর অপরাধীদের। হোম সূত্রের খবর, মোট ৩৩ জন বন্দি কিশোর আবাসনে ছিল। পাশের ঘরে পাহারায় থাকেন এক জন এএসআই, ২ জন কনস্টেবল এবং ৩ জন এনভিএফ। মহকুমাশাসক বলেন, “বন্দি কিশোরদের ঘরে টিভি, ক্যারাম বোর্ড সহ খেলাধুলা ও মনোরঞ্জনের উপকরণ রাখা হয়। সন্ধে থেকেই কলের লোহার পাইপ দিয়ে ঘরের জানলার নিচের দিক থেকে দেওয়ালের ইট বের করে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়। পাশের ঘরে থাকা পুলিশ কর্মীরা পাছে শব্দ না পান তার জন্য টিভির শব্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।” ধৃত এক কিশোরকে জেরা করে পুলিশ আরও জেনেছে, এর পর সুড়ঙ্গের মতো গর্ত করে ঘর থেকে একে একে বেরিয়ে পেছনের সীমানা পাঁচিলে পৌঁছয় ২২ জনের কিশোরের দলটি। প্রায় ১০ ফিট উঁচু পাঁচিলের ওপর বসানো তারকাঁটার বেড়ার উপর কম্বল ফেলে তারা টপকে পালিয়ে যায়।
বালুরঘাটের শুভায়ন হোম থেকে বিচারাধীন শিশু ও কিশোর বন্দি পালানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এই হোম থেকে কিশোর পালানোর ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরে তাদের হদিশ মেলে না। ৮ মাস আগেও হোম থেকে আবাসিক ৭ জন খুদে পড়ুয়া পালিয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪ জনকে পরে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রতিবারই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে হোমে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়। এদিন হোমে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের দেওয়াল গুলিতে ফাটল ধরেছে ঘরগুলিও স্যতস্যাতে মহকুমাশাসক সুদীপবাবু বলেন, “সব ঠিক করা হবে।”
তবে বিচার শেষের পরেও দীর্ঘদিন ধরে কেন কিশোরদের বন্দি হয়ে থাকতে হয় তানিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে প্রশাসন হোমের একাংশ কর্মী মনে করেন, চার দেওয়ালের মধ্যে দীর্ঘ বন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠা কিশোরেরা বাড়ি ফেরার টানেই পালায় তবে বাংলাদেশের নাগরিক ওই বন্দি কিশোরেরা সীমান্ত টপকে পালিয়েও তাদের আর শেষ অবধি বাড়ি ফেরা হলো না। ধরা পড়ে গেল নিজ দেশের সীমান্তরক্ষীর(বিজিবি) হাতে। |