লাগাতার ঘেরাও-বিক্ষোভ, গোলমালের ‘চাপ’ সহ্য করতে না পেরে ইস্তফা দিতে চাইলেন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তম রায়। উত্তমবাবুর ইস্তফাপত্র গৃহীত হলে গত এক বছর আট মাসে এই কলেজে চার বার অধ্যক্ষ পরিবর্তন হবে।
বৃহস্পতিবার উত্তমবাবুকে প্রায় ঘণ্টা খানেক ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাদের এক সমর্থককে মারধরে অভিযুক্ত ছাত্র পরিষদের এক সমর্থকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে এদিন দুপুর দু’টো থেকে ঘেরাও শুরু করে টিএমসিপি। বিরাট পুলিশ বাহিনী কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরই উত্তমবাবু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র ফ্যাক্স করে দেন। উপাচার্য সমীরকুমার দাস বলেন, “পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। আজ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উত্তমবাবু বলেন, “কলেজে লাগাতার ঘেরাও, বিক্ষোভ, গোলমাল লেগেই রয়েছে। আমি অসুস্থও। নানা চাপ সহ্য করে কলেজ ঠিক মতো পরিচালনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তবে কাউকে দায়ী করতে চাই না।”
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অজয় সরকারের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, “উত্তমবাবু ছাত্র পরিষদের চাপেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তাঁকে পদে থাকার অনুরোধ করেছি।” জেলা ছাত্র পরিষদ নেতা নব্যেন্দু ঘোষের পাল্টা দাবি, “তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালেই এক ছাত্র অহত হয়েছে। আমরা উত্তমবাবুর উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করিনি।”
এই কলেজেই ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি তিলক চৌধুরী, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা পর্যবেক্ষক প্রিয়ব্রত দুবে সহ তৃণমূূলের সমর্থকের বিরুদ্ধে। তাঁরা কলেজে ঢুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরদিন ইস্তফা দেন দিলীপবাবু।
তারপর থেকেই কলেজে গণ্ডগোল লেগেই রয়েছে। শত্রুঘ্ন সিংহ ও দেবাশিস বিশ্বাসও যে কারণে এই সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দেন। ২০১২ সালের ৮ মার্চ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে উত্তমবাবুও বারবার গোলমালের মধ্যে পড়েছেন। কলেজ সূত্রের খবর, গত জুন থেকে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি একাধিকবার ছাত্র ভর্তি সহ বিভিন্ন দাবিতে উত্তমবাবুকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। গত ১ জুলাই উত্তমবাবুকে প্রায় তিন ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখে ছাত্র পরিষদ। গত ২১ অগস্টও একই দাবিতে দেড়শো পড়ুয়া গভীর রাত পর্যন্ত উত্তমবাবুকে ঘেরাও করেন। গত ৩০ অগস্টও অনেক রাত পর্যন্ত উত্তমবাবুকে ঘেরাও থাকতে হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর কলেজ গেটের বাইরে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর গত তিন দিন ধরে দু’পক্ষই কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ রোখার
দাবিতে অধ্যক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ। |