গাছের ডাল কেটে হোর্ডিং হাসপাতাল চত্বরে, প্রশ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
যে সংস্থাকে হাসপাতালের বাগান দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ তারাই হাসপাতাল চত্বরে গাছের ডালপালা কেটে বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিতে হোর্ডিংয়ের পরিকাঠামো বসাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ওই ঘটনায় হইচই পড়েছে। কেন না হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেউ বিজ্ঞাপন বসাতে পারে কি না বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউকে সেই সুবিধা দিতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ি পুরসভার তরফেও অভিযোগ তোলা হাসপাতাল চত্বরে সরকারে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিজ্ঞাপন লাগানো যেতেই পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে কেউ বিজ্ঞাপন লাগালে তাদের অনুমতি নিতে হবে। অথচ এ ক্ষেত্রে তাদের কোনও অনুমতি কেউ নেননি বলে অভিযোগ। হাসপাতাল চত্বরে থাকা দুটি ছোট বাগান শুধুমাত্র দেখভালের বিনিময়ে কী ভাবে মাসে বহু লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন তোলার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে সুযোগ করে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক, কর্মীদের মধ্যেও। এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পি এস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সঞ্জীব মজুমদার বলেন, “হাসপাতালের ভিতরে দুটি বাগান অপরিষ্কার হয়ে পড়েছিল। তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ দায়িত্ব নিচ্ছিলেন না। সে জন্য ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট ’ (ইওআই) পদ্ধতিতে উৎসাহীদের খোঁজা হয়। তখন ওই সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা কোনও টাকা না নিয়েই বাগানের দেখভাল করবেন বলে জানান। বিনিময়ে তারা ওই জায়গায় তিনটি হোর্ডিংয়ের অনুমতি চান। তা নিয়ে আপত্তি থাকলে রোগী কল্যাণ সমিতিতে তা আলোচনা করে দেখা হবে।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগী কল্যাণ সমিতিতে ওই বাগান দেখভালের বিষয়টি উৎসাহী কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বা অপর কাউকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো ওই সংস্থাকে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ওই কাজের বিনিময়ে হাসপাতাল চত্বরকে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া যুক্তি যুক্ত নয়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ সেখানে অতিকায় ওই হোর্ডিংগুলি বসানো হচ্ছে তা বিপজ্জনক। কোনও কারণে তা ভেঙে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনাা ঘটতে পারে। যে সংস্থা পি এস এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার প্রদীপ্ত সরকার বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাগানের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল। তাদের অনুমতি নিয়েই আমরা হোর্ডিং বসাচ্ছি। কোনও গাছ কাটা হয়নি। তবে গাছের ডালপালা একাংশ ছাঁটা হয়েছে।” তাঁরা জানান, প্রতি বছর চুক্তি নবিকরণ হবে। সেই মতো বাগানের সৌন্দর্যকরণ, গাছ রক্ষণাবেক্ষণ তাঁরা দেখভাল করবেন। পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ভাবে বিজ্ঞাপন বসাতে দিতে পারেন না। তা হলে পুরসভার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ওই সংস্থার তরফে কয়েকটি জায়গায় অনুমতি ছাড়া হোর্ডিং বসানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।” পুরসভার একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে হিলকার্ট রোডে মহানন্দা সেতুতে ওঠার মুখে অতিকায় খুঁটি পুঁতে একই ভাবে হোর্ডিং বসানোর চেষ্টা করেছিল এই সংস্থা। পরে তা তাদের সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
|