পঞ্চাশ খুদে ক্রিকেটারের বয়স ভাঁড়ানো নিয়ে যখন প্রবল ঠকঠকানি চালু হয়ে গিয়েছে কলকাতার অধিংকাংশ নামীদামী ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে, ভিডিওকন স্কুল অব ক্রিকেট, মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমি থেকে শুরু করে পি সেন মেমোরিয়াল, ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি শহরের বড়-মেজো-সেজো ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের মানসম্মান নিয়ে যখন তীব্র টানাটানি চলছে, কোচিং সেন্টারদের কাঁপুনি তখন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল সিএবি।
নতুন কড়া ‘ওষুধ’ আমদানি করে!
আগামী অম্বর রায় টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব-১৪) যে সব কোচিং সেন্টার খেলবে, তাদের প্রত্যেকের কোচ ও সচিবকে সই করতে হবে ক্রিকেটারদের জন্মনথিতে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই লিখিত দিতে হবে যে, ক্রিকেটারদের বয়সের দায়িত্ব সম্পূর্ণ ভাবে কোচিং সেন্টারের সচিবের। কোচের। তার পরেও বয়স ভাঁড়িয়ে ধরা পড়লে? সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সঙ্গে তার কোচিং সেন্টারের সচিব ও কোচেরও সাত বছরের নির্বাসন! সিএবি-র কোনও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন তো করা যাবেই না, উল্টে গাঁটের কড়ি খরচ করে অন্যায়ের মাসুল দিতে হবে এক লক্ষ টাকার জরিমানায়।
এবং নতুন দাওয়াইয়ের মেজাজ যদি এতটা উগ্র হয়, তা হলে প্রত্যুত্তরের ঝাঁঝটাও ঠিক ততটাই চড়া!
কী রকম?
ভিডিওকনের চার খুদে ক্রিকেটারের বয়স ভাঁড়িয়ে ধরা পড়া নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে চরম উত্তেজিত শোনাচ্ছিল ভিডিওকনের অন্যতম মুখ্য কর্তা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের গলা। “সিএবি-কে আগে বলুন একটা গাইডলাইন তৈরি করতে। নইলে অম্বর রায় টুর্নামেন্টটা যেন বন্ধ করে দেয়। এখন আমাদের দায়ী করছেন সিএবি সচিব। এত দিন কিছু করা হয়নি কেন?” ক্ষুব্ধ ভাবে আনন্দবাজারকে বলছিলেন স্নেহাশিস। একটু থেমে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অগ্রজের পরবর্তী সংযোজন, “সিএবি লিগে গাইডলাইন তৈরি করতে পারছে, জে সি মুখোপাধ্যায়ে তৈরি করতে পারছে, আর অম্বর রায় টুর্নামেন্টে করা যাচ্ছে না? কোন নথি চলবে, সেটা আমরা কেন ঠিক করব?”
যার পাল্টা এল পাঁচ মিনিটে। ঠিক সমপরিমান ঝাঁঝে সিএবি যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও বলে রাখলেন, “স্নেহাশিস চার বছর সিএবি-র সহ সচিব ছিল। তার পরেও এ সব বলছে? যে সব টুর্নামেন্টে বাংলা খেলে (অনূর্ধ্ব ১৬ ও ১৯) সেগুলোর দায়িত্ব তো সিএবি-ই নেয়। কিন্তু অম্বর রায় তো আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট। আমরা করতে দিই কারণ বাচ্চাগুলো খেলে বলে। এর পর সেই টুর্নামেন্টে কী ভাবে ওরা ক্রিকেটার নিচ্ছে, তার দায়িত্ব সিএবি নেবে?” এখানেই না থেমে সচিবের আরও উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া, “গাইডলাইন? সবাইকে সেমিনারে ডেকে তো বলে দেব যে, ক্রিকেটারের বয়সের দায় তোমাদের। আমরা মুখ খুললে কিন্তু সবাইকে পালাতে হবে। আমরা কিন্তু সবার কীর্তিকলাপের প্রমাণ হাতে নিয়ে কথা বলব!”
ঘটনা হচ্ছে, স্নেহাশিস ব্যতিক্রম। তাঁর মতো পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার রাস্তা বাকি অভিযুক্ত কোচিং সেন্টারের মুখ্যদের কেউ ধরছেন না। আকস্মিক ধাক্কায় তাঁরা যথেষ্ট নড়বড়ে।
মেনল্যান্ড সম্বরণ অ্যাকাডেমির প্রধান সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন। রঞ্জিজয়ী বাংলা অধিনায়ক ঠিক করেছেন, পুরসভার ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের হাতে এ বার ক্রিকেটারদের বার্থ সার্টিফিকেট মেলাবেন! বলে দিচ্ছেন, “আমি খুব সৎ ভাবে ক্রিকেটটা খেলেছি। এ সব আমি মানতে পারছি না।” কিন্তু বলা হচ্ছে, তাঁর অ্যাকাডেমির বাবু পাল নামে এক অভিভাবক যথেচ্ছ জাল বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করেন ক্রিকেটারদের! সম্বরণ বলছেন, এমন কাউকে চেনেন না। ময়দান বলছে, সম্বরণ চেনেন। খুব ভালই চেনেন! ভিডিওকন জানাচ্ছে, এর পর থেকে পুরসভার বার্থ সার্টিফিকেটের সঙ্গে স্কুল থেকেও ক্রিকেটারের জন্মনথি নেবে। পি সেন মেমোরিয়াল আবার সিএবি-র কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে চিঠি পাঠিয়ে। অভিযুক্তদের শাস্তি সিএবি ঘোষণা করার আগেই তারা জানিয়ে দিয়েছে, এক বছরের নির্বাসন। ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এ বার ক্রিকেটারের জন্মনথিতে ম্যাজিস্ট্রেটের সই চায়। নইলে নাকি কোচিং সেন্টারে ঢোকা বন্ধ!
রাতে সব দেখেশুনে এক সিএবি কর্তা তির্যক ভাবে বলছিলেন, “আসলে অম্বর রায় বন্ধ হলে সিএবি বাঁচবে। কোচিং সেন্টারগুলো বাঁচবে না। মাথা তো ঝোঁকাতেই হবে।” কথাটা বোধহয় ঠিকই। শুধু বয়স ভাঁড়ানো বিতর্কেই নয়, নানাবিধ অন্যান্য চাপকেও তো আর আমল দেওয়া হচ্ছে না। ময়দানের বিখ্যাত ‘অনুরোধের আসর’-এ দাঁড়ি টানা হচ্ছে।
উদাহরণ? অনূর্ধ্ব উনিশের এক ক্রিকেটার। শুরুর দিকে প্রাথমিক দলে ঢুকে পড়েও লাভ হয়নি। সিএবি সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় চূড়ান্ত ‘প্রোবাবেলস’ থেকে বার করে দিয়েছেন উপযুক্ত পারফরম্যান্সের অভাবে।
বলে রাখা ভাল, ক্রিকেটারের বাবা বাংলা জুনিয়র টিমের কোচ। শত চেষ্টা করেও নাকি ছেলেকে তিনি ‘বাঁচাতে’ পারেননি!
|