|
|
|
|
অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত দুই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
ঘিঞ্জি এলাকা। তারই মধ্যে ইতিউতি বাজি কারখানা। বলাবাহুল্য অবৈধ ভাবে শব্দবাজি তৈরি করছে অধিকাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে বেলদার খাকুড়দার কাছে গুড়দলা সংলগ্ন বড়মোহনপুর গ্রামে এমনই এক বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দুই শ্রমিকের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় হৃষিকেশ দাস অধিকারীর (১৯)। পরে জখম অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় আনন্দ পাড়ির (২৬)। দু’জনের বাড়িই স্থানীয় গুড়দলা গ্রামে। জখম হয়েছিলেন আরও কয়েকজন। তাঁরা অবশ্য পালিয়ে গিয়েছেন। পালিয়েছেন বাজি কারখানার মালিকও। বাজির বেআইনি কারবার বন্ধের দাবিতে এ দিন স্থানীয় একটি রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। |
|
বেলদার বাজি কারখানায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বড়মোহনপুরে বাজি তৈরীর কারখানা গড়েছেন স্থানীয় লোচন দাস অধিকারী। তাঁর খাকুড়দা বাজারে একটি বিছানার দোকানও রয়েছে। দোতলা বাড়ির বাইরের জমিতে একটি অ্যাসবেস্টসের শেড দেওয়া বাড়িতে চলে এই বাজি তৈরীর কাজ। ভিতরে একাধিক ছোট-ছোট ঘরেও হরেকরকমের বাজি তৈরি হয়। প্রতি দিনের মতো এ দিনও সকাল ছ’টা থেকে কাজ শুরু হয়। ৭টা নাগাদ হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ শুনে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। দেখা যায় আগুন জ্বলছে ওই কারখানায়। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে হৃষিকেশের মাথা। পাশে পড়ে রয়েছেন প্রায় ছ’-সাত জন জখম কারিগর। এর মাঝেই পালিয়ে যান কারখানা মালিক লোচন ও তাঁর পরিবার। এক জন গুরুতর জখম ছাড়া পালিয়ে যান অন্য শ্রমিকেরাও। খবর যায় পুলিশে। এরপর আগুন নেভাতে ছুটে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। আনন্দ নামে জখম এক শ্রমিককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনার পরেই এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মৃতদেহ ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। অবরোধ করা হয় খাকুড়দা থেকে রেড়িপুর যাওয়ার পথ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মহকুমা পুলিশ আধিকারিক-সহ পুলিশের বিশাল বাহিনী। স্থানীয় কবিতা বারিক বলেন, “শব্দ শুনেই ছুটে এসেছিলাম। দেখলাম পাশের গ্রামের ছেলেরা মারা গিয়েছে। আগে অনেকবার পুলিশকে বলা হয়েছে অবৈধ এই ব্যবসা বন্ধ করতে। কাজ হয়নি।”
বস্তুত, এলাকার গুড়দলা গ্রাম এই বাজি তৈরির আঁতুড়ঘর বলেই পরিচিত। এই এলাকা থেকেই শক্তিশালী গাছবোমা, জলবোমা, চকলেট বোমা, দোদোমা থেকে নানা ধরনের শব্দবাজি প্রস্তুত হয়। সেগুলিই কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া সংলগ্ন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায়। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই কারবার এখন রমরমিয়ে চলছে। এলাকার প্রায় ৯টি বাড়িতে বিধি না মেনেই চলছে বাজি তৈরি। এ দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে খড়্গপুর দমকলের ওসি রবীন্দ্রনাথ সর্দার বলেন, “তিন ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের দু’টি ইঞ্জিনের প্রচেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। জনবহুল এলাকায় এই কারখানা হওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
ইদানীং গুড়দলা ছাড়িয়ে ব্যবসার বিস্তার বেড়েছে পাশের বড়মোহনপুর গ্রাম পর্যন্ত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ সব জেনেও বরাবর নীরব। স্থানীয় নিমাই পড়িয়া, চিত্তরঞ্জন সাউ বলেন, “কিছু কারখানার আতসবাজির অনুমতি থাকলেও শব্দবাজি তৈরির অনুমতি নেই। তা জেনেও পুলিশ চুপ থাকে।” পুলিশ অবশ্য এ দিন সক্রিয় ভাবেই এলাকায় অভিযান চালায়। |
|
|
|
|
|