সমস্যার শুরুটা আজকের নয়। দীর্ঘদিন ধরেই রূপনারায়ণের ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি। তার সাম্প্রতিক সংযোজন, হাওড়া বাগনান ১ ব্লকের গোবিন্দপুর ও বিরামপুর গ্রাম এবং ২ ব্লকের সামতা গ্রাম। প্রবল ভাঙনে এই গ্রামগুলি তলিয়ে যেতে বসেছে রূপনারায়ণের জলে। বিঘের পর বিঘে চাষজমি, গাছ-গাছালি লুটিয়ে পড়ছে নদীতে। ২০০৭ সাল নাগাদ সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন মেরামতের কাজ শুরু হলেও পরে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। গত দশ বছর ধরে কখওনই পাকাপাকি ভাবে মেরামতের কাজ আরম্ভ হয়নি বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।
সামতা, গোবিন্দপুর ও বিরামপুর-সহ বহু গ্রামের চাষিরা রূপনারায়ণের চরে চাষবাসের উপরেই নির্ভরশীল। গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা দুখিরাম ধাড়া বলেন, “রূপনারায়ণ নদী ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ বড় বাঁধের দিকে এগিয়ে আসছে। অথচ মেরামতের ব্যাপারে উদ্যোগী নয় প্রশাসন। নিজের চাষের জমি হারিয়ে এখন আমাদের অন্যের জমিতে দিনমজুরি খেটে বা মাছ ধরে চালাতে হচ্ছে।” গোবিন্দপুর গ্রামেই কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দিদি অনিলাদেবীর বাড়ি। সামতা গ্রামে বাড়ি শরৎচন্দ্রের। |
অনিলাদেবীর নাতির ছেলে প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগে শরৎবাবুর বাড়ির দু’কিলোমিটার দূর দিয়ে রূপনারায়ণ নদী বইত। এখন রয়েছে মাত্র ২০০ মিটার দূরে। অবিলম্বে মেরামত শুরু না করা হলে শরৎবাবু, অনিলা দেবীর বাড়ি-সহ বহু গ্রামবাসীর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।” রূপনারায়ণ নদীর ভাঙনের ফলে চিন্তিত শরৎবাবুর বাড়ির কেয়ারটেকার দুলাল মান্নাও। গেবিন্দপুর এবং বিরামপুর গ্রাম দু’টি আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রের এলাকায় পড়ে। সামতা গ্রাম পড়ে বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেনের এলাকায়। অসিতবাবু বলেন, “রূপনারায়ণ নদী ভাঙন মেরামতের বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি। এ ছাড়া, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করা যায়, শীঘ্র এ বিষয়ে উদ্যোগ করা হবে।” একই কথা জানিয়েছেন অরুণাভবাবুও। ওই এলাকায় ভাঙন মেরামত সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করে মহিষরেখা সেচ দফতর। ওই সেচ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার চিররঞ্জন দত্ত বলেন, “আগে অস্থায়ী ভাবে ভাঙন মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ বার আমরা একটা নতুন প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এলাকাটি ইতিমধ্যেই প্রকল্প তৈরি হয়ে দিয়েছে। চলতি বছরেই নভেম্বর মাস নাগাদ কাজ শুরু হবে। |