সংসদে বকেয়া বিলের প্রচার, আপত্তি তৃণমূলের
লোকসভায় বিল পাশ হয়েছে। কিন্তু রাজ্যসভায় এখনও বকেয়া। এই অবস্থাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের বিপুল প্রচার! এমন ঘটনায় সংসদ এবং তার সঙ্গে দেশের মানুষকেও খাটো করা হচ্ছে বলে তীব্র আপত্তি তুলল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে সাফল্য-কাহিনি প্রচারে মরিয়া কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ করছে।
হকারদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে লোকসভার সদ্যসমাপ্ত বাদল অধিবেশনে পাশ হয়েছে ‘স্ট্রিট ভেন্ডর্স (প্রোটেকশন অফ লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেশন অফ স্ট্রিট ভেন্ডিং) বিল, ২০১২’। অধিবেশনের শেষ দিনে, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিলটি রাজ্যসভার তালিকায় ছিল। কিন্তু অন্যান্য কার্যসূচির জন্য শেষ পর্যন্ত ওই দিন বিলটি পাশ হয়নি। আগামী অধিবেশনের আগে সংসদের উচ্চ কক্ষে হকার পুনর্বাসন বিলটির ভাগ্য নির্ধারণের কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে বিলটির পক্ষে ঢালাও প্রচার চলছে! বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ছোট করে একটি বিজ্ঞপ্তি থাকছে যে, এই বিলটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে এবং আপাতত তা সংসদের বিবেচনাধীন। তৃণমূলের নৈতিক আপত্তি এখানেই। তৃণমূল নেতৃত্বের প্রশ্ন, কোনও খেলার বিরতিতে কেউ যদি ১-০ এগিয়ে থাকে, দ্বিতীয়ার্ধ খেলার আগেই সে নিজেকে বিজয়ী বলে দাবি করতে পারে কি?
অধিবেশনের শেষ দিনে রাজ্যসভায় বিলটির পক্ষে কয়েক মিনিটের বক্তৃতা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী গিরিজা ব্যস। কিন্তু বিলটি সেই দিন পেশ হচ্ছে না বলে মন্ত্রীর ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ নথি থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই তথ্য জানিয়েই তৃণমূলের রাজ্যসভার সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন বৃহস্পতিবার বলেছেন, “ওই বিল এখনও সংসদের সম্পত্তি। সংসদের বিবেচনাধীন কোনও বিষয়ে এই ভাবে প্রচার চলতে পারে না। এটা সংসদকে অপমান করা, মানুষের সঙ্গেও প্রতারণা করা!” বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ছোট্ট করে বিজ্ঞপ্তি থাকছে বলেই বিষয়টি নিয়ে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনা যায় কি না, তা নিয়ে ভাল করে ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। ডেরেকের কথায়, “ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলছি। এ তো ‘ইতি গজ’র মতো হল! সংসদ চালু থাকলে আমরা হয়তো স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব এনেই ফেলতাম! পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে এখন দলে আলোচনা করব।”
ঘটনাচক্রে, নির্দিষ্ট হকার নীতি মেনে প্রতিটি শহুরে এলাকায় হকিং জোন নির্ধারিত হওয়ার আগে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হকার-উচ্ছেদ চলবে না বলে এ দিনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে নথিভুক্ত হকারেরা টাউন ভেন্ডিং কমিটির (টিভিসি) রূপরেখা মেনে কাজ করবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের হকার বিলটিতেও ওই কমিটি গড়ার কথাই বলা হয়েছে।
তৃণমূল প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বিলের প্রচারে আপত্তির কিছু দেখছে না। এর আগে ভূমি বিল বা খাদ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একই জিনিস করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রতিটি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রিসভা বিষয়টি অনুমোদন করেছে। সংসদে এখন তা বিবেচনাধীন। অর্থাৎ সংসদে তা পাশ বা খারিজ, যে কোনও কিছুই হতে পারে। এখানে কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। তা হলে এতে আপত্তির কী আছে?
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কেন্দ্রীয় সরকারের ঢক্কানিনাদ নিয়ে একই নৈতিক প্রশ্ন আছে তৃণমূলের প্রবল প্রতিপক্ষ সিপিএমেরও। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “আগে বিল পাশ হোক, তার পরে তো বিজ্ঞাপন! ইউপিএ সব উল্টো করছে!” ‘ভারত নির্মাণ’-এর প্রচারের জন্য যোজনা কমিশনের কাছ থেকে ইউপিএ সরকার ৬৩০ কোটির টাকার অনুমোদন পেয়েছে। লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই কি তারা এ বার মরিয়া হয়ে তড়িঘড়ি প্রচারে নেমেছে?
ডেরেকের জবাব, “আমাদের প্রশ্ন নৈতিকতা নিয়ে। আর শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে খারাপ পণ্য চালিয়ে দেওয়া যায় না! এনডিএ-র ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ বিজ্ঞাপনের পরিণতি মনে নেই?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.