|
|
|
|
স্ত্রী যখন অন্যের বক্ষলগ্না |
স্ত্রীকে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে পরদায় দেখানো হলেই নাকি অনেক স্বামীর গলা শুকিয়ে আসে। ইতালিতে বিয়ের পরে স্বামীর
সামনে ঘন রোম্যান্টিক দৃশ্যে শু্যটিং করতে কোয়েল-এর কেমন লাগল? সাক্ষী থাকলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
কোমো থেকে মাত্র দশ মিনিটের ড্রাইভেই সুইজারল্যান্ডের বর্ডারে যাওয়া যায়। তবে প্যারিস যেতে কত দূর যেতে হয়, সেটা জানা ছিল না। জানলে হয়তো মন্দ হত না, কারণ কোয়েল মল্লিকের কোমো-তে শু্যটিং দেখতে দেখতে হঠাৎ এক ফরাসি অভিনেত্রীকে নিয়ে সিনেমার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল সে দিন।
সিনেমার নাম ‘মাই ওয়াইফ ইজ অ্যান অ্যাকট্রেস’। এক সাংবাদিক আর তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী-কে নিয়ে তৈরি এক রোম্যান্টিক কমেডি। খ্যাতির বিড়ম্বনা যে কী বিভ্রাট সৃষ্টি করতে পারে, এক পুরুষের ইগো কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করে যদি তাঁর স্ত্রীকে তিনি দেখেন অন্য কোনও হিরোর সঙ্গে রোম্যান্টিক দৃশ্য করতে সে সব নিয়ে ইভঁ আতাল আর শার্লট গেইনসবুর্গ-এর এক মজাদার সিনেমা।
কাট টু কোমো।
সিনেমার নাম ‘রংবাজ’। সেখানে দেব আর কোয়েলের গানের দৃশ্য। প্রেম, আবেগ, সব কিছুই একেবারে টইটম্বুর। রোম্যান্টিক গান শু্যট করতে গেলে যে ধরনের পাঁচফোড়ন লাগে, তার সব উপকরণই ছিল। ক্যামেরার পিছনে পরিচালক রাজা চন্দ, কোরিওগ্রাফার বাবা যাদব ছাড়াও আর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। প্রাথমিক ভাবে তাঁর পরিচয় তিনি ফিল্মের প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে, সুরিন্দর ফিল্মসের কর্ণধার। কিন্তু তাঁর আরও একটি পরিচয় মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। তিনি কোয়েলের স্বামী।
আর সেখানেই একটা অদ্ভুত সমীকরণ তৈরি হয়। আজও প্রচুর পুরুষ আছেন যাঁদের গার্লফ্রেন্ড অভিনয় করলে অসুবিধে হয় না, কিন্তু স্ত্রী অভিনেত্রী হলে হয়তো একটু অসুবিধে থাকে। স্ত্রীকে অন্তরঙ্গ দৃশ্য করতে দেখাটা তাঁদের পৌরুষে লাগে। বাইরে যা হোক না কেন, চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁরা বলেই ফেলেন যে ‘মাই ওয়াইফ ইজ অ্যান অ্যাকট্রেস’ বলার জন্য যে মূল্যটা তাঁদের দিতে হয়, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই বেশ যন্ত্রণাদায়ক। সেখানে ব্যক্তিগত জীবন আর পেশা ব্যাপারটা গুলিয়ে যায়। ঠিক ‘ওই’ দৃশ্যগুলো পরদায় দেখানো হলেই নাকি তাঁদের জলতেষ্টা পায়, পপকর্ন কেনার হিড়িক পড়ে। এমনও শোনা গিয়েছে যে এক বলিউড অভিনেত্রীর সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল কারণ তাঁর ‘জেট-সেটিং’ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার বয়ফ্রেন্ড ‘ওই’ দৃশ্যগুলো দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন সিনেমা করতে হয় করো, কিন্তু বিয়ের পর ওই সব দৃশ্য নয়। অভিনেত্রী সম্পর্কে ইতি টেনে দেন। |
|
কোমোতে কোয়েল-রানে। ছবি: প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
এ ক্ষেত্রে পুরুষদের দোষ দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে এটাও ঠিক যে স্ত্রী-কে পরপুরুষের গালে চুমু খেতে দেখলে নিজের ইগোতে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগিয়ে ঘোরাটা একদমই সহজ ব্যাপার নয়। ইতালিতে রানেকে অবশ্য দেখলাম এ সব বিষয়ে একদম পেশাদার। মনিটরে দেব-কোয়েলের নাচ দেখে হঠাৎ শক্ত গলায় বলে ওঠেন, কোয়েল, নাচের সময় মুখের উপর অত চুল এসে যাচ্ছে কেন? এই কস্টিউমের সঙ্গে স্মোকি আইজ হলে ভাল লাগবে!
শু্যটিং চলাকালীন কোনও ‘পিডিএ’ অর্থাৎ সম্পর্কের দেখনদারি নেই। হঠাৎ বৃষ্টিতে শু্যটিং বন্ধ হয়ে যাওয়াতে একবারই শুধু কোয়েলকে নিয়ে ‘মি-টাইম’ কাটাতে গিয়েছিলেন কোমো লেক-এর ধারে। ছবির রেকি করতে গিয়ে রানে লেক কোমোতে জলসফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোয়েলের যাওয়া হয়নি। তখন প্রযোজকের ইমেজটা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে শুধুমাত্র কেয়ারিং স্বামীর ভূমিকায় রানে। যিনি হাত ধরে কোয়েলকে রাস্তা পার করিয়ে নিয়ে যান। বৃষ্টিস্নাত কোয়েলকে আগলে রাখেন। জেটিতে দাঁড়িয়ে এক একটা ভিলার দিকে দেখিয়ে তাদের গল্প শোনান। দু’দণ্ড রোডসাইড কাফের ছাতার তলায় বসে চুমুক দেন জুসের গ্লাসে। ফেরার পথে ফুটপাথে কোয়েলের চোখ চলে যায় এক গিটারবাদকের দিকে। তিনি গাইছিলেন রোনান কিটিংয়ের ‘ইউ সে ইট বেস্ট হোয়েন ইউ সে নাথিং অ্যাট অল’। কথাগুলো কোয়েলের খুব প্রিয়। একটু দাঁড়িয়ে শুনলেন। তার পর ছোট্ট একটা নাচ। গানের শেষে কয়েকটা ইউরো রেখে আসেন শিল্পীর সামনে রাখা গিটারের কেসে। আর তার পর রানেকে হেসে বলেন, “এই গানটা একদম তোমার জন্য প্রযোজ্য।” আমাকে মুখে কিছু বলতে হয় না। রানে আমার বলার আগেই সব বুঝে যায়। এতটাই অ্যান্ডারস্ট্যান্ডিং আর ইন্টেলিজেন্ট ও।
পড়ন্ত বেলায় কোমো থেকে মিলান ফেরার পথে কোয়েলকে গাড়িতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কী ভাবে পেশাদার আর ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যালান্স করে শুটিং করেন? দূরে ময়ূরকণ্ঠী রঙের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, “বিয়ের পরে আমি দু’বার রানেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ওর এই রকম দৃশ্যে কোনও আপত্তি আছে কি না? স্বামীকে ভালবাসি। এমন কিছু করতে চাইনি যাতে ওর আপত্তি থাকবে। আমার প্রশ্ন শুনে ওর উত্তর ছিল, ‘তুমি কি পাগল হলে?’ রানে ইজ আ ম্যান হু ইজ এক্সট্রিমলি লিবারাল অ্যান্ড ওপেন-মাইন্ডেড। ক্যামেরার সামনে ওর কাছে আমি শুধু মাত্র সিনেমার একজন চরিত্র। সেখানে পার্সোনাল কোনও ফিলিংসকে গুলিয়ে ফেলে না।”
কোয়েল ফারসি ছবিটা দেখেননি।
পরিবার তাঁর কাছে অক্সিজেনের সমতুল্য। অভিনেত্রীদের কেরিয়ার খুব ডিম্যান্ডিং। তাই সংসার সামলে অভিনয় করবেন কি না, সে নিয়ে কথা উঠতেই রানে নাকি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, “আমি যদি দু’টোকে ব্যালান্স করতে পারি, তুমি কেন পারবে না?” “আমরা দু’জনেই খুব হার্ড ওয়ার্কিং। যখন সেটে থাকি তখন পুরোটাই কাজ। সেখানে আমি ওর স্ত্রী বলে আলাদা কোনও ট্রিটমেন্ট নেই। আর যখন আমরা হলিডেতে, তখন ও সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। এই ইতালিতেই তো আমরা হানিমুনে এসেছিলাম। তখন রানে ছিল একদম আলাদা। তবে ওর মনে যা থাকে সেটা ও মুখের ওপর বলে দেয়। মাইন্ডগেম খেলে না।”
রানের মতে তিনি ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে জানেন বলে এই নিয়ে এত ভাবেন না। বলছেন, “কোনও ইনসিকিওরিটি আমার মধ্যে থাকলে আমি তো ওকে অভিনয় করতেই দিতাম না। সেটে আমি ওকে অন্য হিরোইনদের মতোই সম্মান করি। বেশিও না। কমও না। ও যদি প্রোডাকশনের কাজ করতে চায়, আমি তখন ওকে বাধা দিই। একদিন তো ইউনিটের খাওয়ার থালাগুলো নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে যাচ্ছিল। আমি বারণ করলাম। অন্য কোনও হিরোইন হলে তো এটা আমি করতে দিতাম না। তা হলে ওর ক্ষেত্রে আলাদা হবে কেন? তা ছাড়া খাওয়া-দাওয়ার পরে আমি তো রেস্ট নিতে পারব। কিন্তু ওকে তো শট্ দিতে হবে। তাই ও এই সব করে টায়ার্ড হয়ে গেলে কী করে চলবে?”
চোখ বন্ধ করে একবার যদি নিজেকে রানের জায়গাতে ভাবতে বলা হয় কোয়েলকে? যদি বাস্তবে তাঁকে বলতে হয়, “মাই হাজব্যান্ড ইজ অ্যান অ্যাক্টর?” পারবেন কি নিজে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে স্বামীকে অন্য এক হিরোইনের সঙ্গে র্যোমান্টিক দৃশ্য করতে দেখতে? কাচের গায়ে আছড়ে পড়ে বৃষ্টির ছাঁট। সন্ধে নেমে আসে অচিরেই। পাহাড় কেটে তৈরি সুড়ঙ্গের মধ্যে গাড়ি দ্রুতবেগে ছুটতে থাকে। সামনের সিটে বসা রানের দিকে তাকিয়ে কোয়েল বলেন, “আমি একদম ‘হিস্টেরিকালি পোজেসিভ’। ছোটবেলা থেকেই এমনি। বাড়ির থেকে বেরোলে বাবাকে সবার শেষে আমার দিকে হাত নাড়তে হত। তার পরে আর কাউকে হাত নাড়ানো চলবে না। আমি এতটাই পোজেসিভ! তাই ওই রকম একটা ভাবনা মনের মধ্যে আনাটাও আমার পক্ষে খুব কঠিন।”
|
প্রথম প্রথম সঞ্জয়ের বুঝতে অসুবিধে হত। ও তো এই ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপারে জানত না। আমি কত বার ওকে সেটে আসতে বলেছি যখন ‘ওই দৃশ্যগুলো’ শু্যট করতাম। কিন্তু ও আসেনি। একটা অস্বস্তি থাকত। যেমনটা হয়েছিল ‘তৃষ্ণা’র ক্ষেত্রে। তবে এখন জিনিসটা আলাদা। নিজেদের প্রোডাকশন আছে। ও বোঝে আমরা কতটা মেকানিক্যালি এগুলো শু্যট করি। এই তো সে দিন আমার বাড়ির ছাদে টোটার সঙ্গে ‘ভিলেন’য়ের শু্যট করছিলাম। ঠাট্টার ছলে কথা উঠল ইন্টারনেটে নাকি একটা লিঙ্ক আছে, যার নাম ‘ঋতু-টোটা হট সিন’। আমরা ভেবে পাইনি, ‘ভিলেন’য়ে আবার হট সিন কোথায়? তখন বুঝলাম ওটা ‘আলোয় ফেরা’র দৃশ্য। যেখানে আমি এক অন্ধ মেয়ে। যার গায়ের আঁচলটা টোটা সরিয়ে দিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে টোটা বলে ঋতু-রাজদীপ অনেক হট সিন করেছে রেশমির ‘মুক্তি’তে। সেই শুনে সঞ্জয়ের ‘বেল’টা হঠাৎই বেজে ওঠে। জিজ্ঞেস করে বসে: ‘টু হোয়াট এক্সটেন্ট?’ টোটা তখন এমব্যারাসড। সঞ্জয়কে শুধু বলে: ‘দ্যাট ইউ হ্যাভ টু আস্ক রেশমি।’ আমার মনে হচ্ছে এর পরের ভিকটিম হবে রেশমি মিত্র।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
জয়া আর আমি দু’জনেই পজেসিভ। তবে দু’জনেই শিল্পকে ভালবাসি। এই ক্ষেত্রে কখনও দেখেছি যে দৃশ্যের এসথেটিক্সটা রোম্যান্টিক মুহূর্তকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তখন সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি। আবার কখনও কখনও বসে দেখেছি এই ভেবে যে উঠে চলে গেলে হয়তো জয়াকে অপমান করা হবে। আর কিছু ক্ষেত্রে আমি স্বামী হিসেবে একেবারেই হিংসুটে। স্বামী সত্তাটা সেখানে খুব স্ট্রং। জয়ার একটা পুরনো হিন্দি ফিল্মে ওই রকম কিছু দৃশ্য ছিল। হঠাৎ চ্যানেল সার্ফ করতে গিয়ে আটকে গিয়েছি ওই দৃশ্যে। কিন্তু বসে দেখতে পারিনি। বলতে দ্বিধা নেই আমি একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। স্বামী হিসেবে আমার ঈর্ষা কাজ করে। একটা ‘ওনারশিপ’ থাকে যেটা সব সময় ভাল নাও হতে পারে। শিক্ষা বা এক্সপোজার-এর ব্যাপার নয় এটা। একদম ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের বিষয়। যদিও এটাও বলব যে জয়া এমন কিছু করেনি যা আমাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলেছে।
বিক্রম ঘোষ |
এক বার বিক্রমের এই রকম কিছু দৃশ্য করার ছিল। আমি ছিলাম মুম্বইতে। ও কলকাতায়। আমি নিজে ওকে বুঝিয়েছিলাম যে ওর একদম পেশাদার হয়ে শু্যটিং করা উচিত। কিন্তু যেই শুনলাম যে ও ওই দৃশ্যগুলো শু্যট করেছে, অমনি হাউ-হাউ করে বসে আমার কী কান্না! তবে এখন আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা বেড়েছে। আজ ওই দৃশ্য দেখলে আমি আর কাঁদব না। বিক্রম আমার সঙ্গে এত দিন ঘর করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকেও বুঝতে পেরেছে। তাই আস্থাটাও বেড়েছে।
জয়া শীল ঘোষ |
|
|
|
|
|
|