|
|
|
|
লতাচর্চা |
তাঁর জন্মদিনে কলকাতার প্রদর্শনীতে থাকবেন না তিনি। তবু লতা মঙ্গেশকর
আছেন।রেকর্ড-বই আর স্মৃতির মাঝে। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
প্রত্যেক বছর জন্মদিনে ‘তাঁর আরেক মা’কে একটু অন্য ভাবে শুভেচ্ছা জানান স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়। অন্য মা বলতে লতা মঙ্গেশকর। জন্মদিনের সকালে শ্রীরামপুর থেকে ক্যুরিয়র করে তাঁকে পাঠান কিছু গানের সিডি। এ বার লতাজির ৮৪-তম জন্মদিনে অবশ্য প্ল্যানটা একটু আলাদা। লতাজি ১৯৪২ থেকে ৭১ বছর ধরে প্লে-ব্যাক করছেন। তাই স্নেহাশিসের ইচ্ছে লতাজির ৭১টি গানের একটা সিডি করে তাঁর গুরুমাকে পাঠানোর।
কলকাতায় অবশ্য তাঁর গুরুমাকে ঘিরে আরও এক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে ফেলেছেন তিনি। আইসিসিআর-এ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর লতা মঙ্গেশকরকে ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে এক প্রদর্শনীর। চলবে তিন দিন ধরে। উদ্বোধন করতে আসছেন প্রসার ভারতীর কর্ণধার জহর সরকার।
খুব কম সংখ্যক মানুষ জানেন যে, লতা মঙ্গেশকর ইংরেজি ভাষাতেও গান গেয়েছিলেন। তা-ও আবার কানাডায় একটা শো করতে গিয়ে। গানটা ছিল কান্ট্রি সিঙ্গার অ্যান মারের ‘ইউ নিডেড মি’। আরও কম মানুষ জানেন যে, লতা মঙ্গেশকর রুশ ভাষাতেও গান গেয়েছিলেন। মস্কোতে অনুষ্ঠানটা হয়েছিল। ইংরেজি আর রুশ ছাড়াও আরও তিরিশটি ভাষায় গান গেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। আর এ সব ক’টি গানের অডিয়ো সংস্করণ সংগ্রহ করেছেন শ্রীরামপুরের স্নেহাশিস। পেশায় ‘সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুলস’-এর দফতরের চাকুরে। নেশা সঙ্গীতচর্চা। লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে যতগুলি বই বেরিয়েছে সবগুলিই সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তা সে তেলুগু জার্নাল হোক কী ‘ফুলে বেচিতা’ বইয়ে শিল্পীর মরাঠি লেখা। অথবা ‘ওম নাদব্রহ্ম’ নামক পত্রিকায় শিল্পী ও তাঁর মায়ের লেখাগুলো। বিভিন্ন দুর্লভ ছবিও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। তার সঙ্গে দু’টি ‘লতাগীতকোষ’ নামক শিল্পীর গান- সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আর গানের কথার বই। |
 |
বলা চলে একেবারে ‘আজিব দাস্তা হ্যায় ইয়ে’। তেইশ বছর ধরে স্নেহাশিস এই বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। তিল তিল করে সংগ্রহ করেছেন সব গান। তা সে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’, ‘তেরে বিনা...’ হোক কিংবা ‘তেরে লিয়ে’ বা ‘আয়েগা আয়েগা...’
স্নেহাশিস যখন শান্তিনিকেতনে সঙ্গীতচর্চা করতেন, তখন শ্রীলঙ্কার নৃত্যশিল্পী মানেল চাদনিকে অনুরোধ করে লতাজির সিংহলি ভাষার গান সংগ্রহ করেছিলেন। “আমি ওকে বলি দেশ থেকে লতাজির ‘সাদা সুলঙ্গ’ ফিল্মের দু’টো গানের অডিয়ো নিয়ে আসতে। আর একবার মণিপুরের এক নৃত্যশিল্পীকে অনুরোধ করেছিলাম ‘মেইচাক’ ফিল্মের রেকর্ডটা নিয়ে আসতে। তাঁর নাম প্রফেসর হেমন্ত কুমার। ফিল্মের প্রযোজকের কাছে দু’টো রেকর্ড ছিল। একটির অবস্থা শোচনীয়। অন্যটি এখন আমার সংগ্রহশালায়,” জানান স্নেহাশিস।
যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুরোধ করাতে ক্যাসেট বা রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে, কিছু ব্যতিক্রম যে ঘটেনি তা নয়। এস ডি বর্মনের সুরে লতাজি গান গেয়েছিলেন ‘উসপার’ বলে একটি ফিল্মে। ১৯৯২-৯৩ সালে সেই গানটির রেকর্ড স্নেহাশিস কিনেছিলেন ১২০০ টাকা দিয়ে। নব্বইয়ের দশকে কিন্তু এক-একটি ৭৮ আরপিএম রেকর্ডের দাম ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। “আমি জানতাম ‘শেষ পরিচয়’ ছবিতে লতাজির দু’টো হিন্দি গান আছে। সেই রেকর্ডটা আমি কিনেছিলাম ২০০ টাকা দিয়ে,” স্নেহাশিস বলেন।
এ রকম আরও বহু ঘটনা রয়েছে। স্নেহাশিস জানান, “বেশ কিছু গান ভিডিয়োতে বেরিয়েছে। কিন্তু তা অডিয়োতে নেই। ‘কে জেগে আছ’ গানটির শেষ পঙ্ক্তি শুরু হয় ‘পায়ের আওয়াজ কি শুনছ’ লাইনটি দিয়ে। ওই স্তবক কোনও অডিয়োতে বেরোয়নি। ‘কুহেলি’ না দেখলে কেউ ওই স্তবকটা শুনতে পাবেন না। সেটাও আমি জোগাড় করেছি।” |
 |
নিজের সংগ্রহ হাতে স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়। ছবি: কৌশিক সরকার |
আর এ সব ঠিক ভাবে রাখার জন্য নিজের ফ্ল্যাটে আলাদা একটা জায়গা করে ফেলেছেন তিনি। “এটা একটা নেশা। লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এও আমার এই সংগ্রহের উল্লেখ করা হয়েছিল ২০১১-তে। লতাজিকে নিয়ে ফিল্মফেয়ার একটা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল ১৯৭৪ সালে। তখন দাম ছিল ৮৫ পয়সা। আমি কিনেছিলাম ৫০০ টাকা দিয়ে। এই বইগুলো ঠিক ভাবে রাখাটাই সমস্যার। এর আগে অনেক বার চেষ্টা করেছি প্রদর্শনী করার। লাভ হয়নি। সন্দীপ ভুতোরিয়ার উদ্যোগেই এটা সম্ভব হয়েছে। একটা ল্যাপটপ রাখব, যেখান থেকে আমি শোনাতে পারব গানগুলো।”
এ দিকে সন্দীপ এমন একটি প্রদর্শনের উপস্থাপনা করতে পেরে খুব খুশি। বলছেন, “মনে হয় না কলকাতাতে লতাজিকে নিয়ে এই ধরনের কোনও এগ্জিবিশন গত চার-পাঁচ বছরে হয়েছে। আমি নিজে স্নেহাশিসের সংগ্রহ দেখার পরেই আইসিসিআর-এ প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে এই প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিই।” যাঁকে নিয়ে এত বড় কর্মকাণ্ড, সেই শিল্পী কি এই সংগ্রহের কথা জানেন? “হ্যাঁ, লতাজির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৯৩-এ। ২০০৬-এ ওঁর বাড়ি, প্রভু কুঞ্জ-এও গিয়েছিলাম। উনি আমার সংগ্রহের কথা জানেন। ‘লতাগীতকোষ’য়ের ছ’নম্বর ভল্যুমের উপর কাজ চলছে এখন। তার ভূমিকা লিখেছেন প্রয়াত যশ চোপড়া। সেটা এই প্রদর্শনীতে থাকছে না,” বলছেন স্নেহাশিস।
প্রদর্শনীর ল্যাপটপে হয়তো বা বেজে উঠবে লতাজির গলায় অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা মিশ্রিত সেই ‘রহে না রহে হম’। সময় থমকে দাঁড়াবে। মন গুনগুন করবে ‘কুছ না কহো, কুছ ভি না কহো... সময় কা ইয়ে পল থমসা গয়া হ্যায়....’ |
|
|
 |
|
|