জীবননদে দৃপ্ত হুঙ্কার
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শুনে একটু থমকেই গেলেন। তার পর বললেন, “নাহ্, এতটা নোংরামি ইন্ডিয়ান ক্রিকেটেও হয় না।”
কয়েক মাস আগে আসলে রোমের এক স্থাপত্যের সামনে লিয়েন্ডার পেজ আর তাঁর বিদেশিনী বান্ধবীর একান্তে ছবি তুলেছিলেন তাঁরই দু’-একজন সহ খেলোয়াড়। তুলে ওটা মেল করে দেন ভারতের কিছু মেল আই ডি-তে। প্রাপকদের মধ্যে এক-আধ জন সাংবাদিকও ছিলেন। পাপারাৎজির কাজ করা সহ খেলোয়াড়রা ভেবে পাচ্ছিলেন না ছবিটা নিয়ে কী ভাবে কত ক্ষতি করা যায়? কার কার কাছে পাঠানো যায়?
এক সন্তানের জনক পেজ এবং বান্ধবীর সেই ছবি যে কোথাও দিনের আলো দেখেনি সেটা ফ্লাশিং মিডোতে চল্লিশ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও বেশি বিস্ময়কর।
অবশ্য লিয়েন্ডার পেজের কাহিনি গোটাটা সমান বিহ্বলকর। ১৯৯০-তে দেখা প্রথম পাতা যেমন। আজ ২০১৩-র টাটকা পাতাও তাই। অবিমিশ্র নাটক, মোচড়, অ্যাডভেঞ্চার, হর্ষ, বিষাদ, বিদ্বেষ, সাফল্য, শত্রুতা, উৎসাহ, শক্তি, প্যাশন, পরিশ্রম, সমর্পণ। আজকালকার মতো রিমোট বা ইউ টিউব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার মতো ঠুনকো নয়। এ হল কলকাত্তাইয়া ছেলের সত্তর মিলিমিটার স্ক্রিনে রক্তমাংসের রাক্ষুসে লড়াই।
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আই ফোন) অথবা গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে
ABP AR Appটি ডাউনলোড করে এই ছবিটি স্ক্যান করুন। আর
খেলুন আনন্দplus কনটেস্ট। ভাগ্যবান বিজেতাদের জন্য থাকবে পুরস্কার
এ বার জিতে তখনও ফ্লাশিং মিডোর লকার রুমে ফেরত যাননি। আনন্দ মহিন্দ্রার টুইট তার আগেই ভেসে এল; লিয়েন্ডার, যে সব প্ল্যানিং আর লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে নিজেকে খুব বেশি বুড়ো ভাবছিলাম, মানসিক চিন্তার সেই সব ঝুল আর ধুলো আজ থেকে ঝেড়ে ফেললাম। খেতাব জেতার চেয়েও বড় হল, তোমার আমাদের সামনে এই দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠাটা।
মহিন্দ্রা গোষ্ঠির প্রধানের টুইটটা পড়ে কুড়ি বছরেরও পুরনো একটা লিফলেটকে চোখের সামনে জলজ্যান্ত ভেসে উঠতে দেখছি। যার ওপর লেখা ছিল, ‘লিয়েন্ডার পেজ ইজ লুকিং ফর সামওয়ান টু শেয়ার অ্যান অ্যাডভেঞ্চার উইথ হিম। দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব উইনিং গ্র্যান্ড স্লামস্, টু হ্যাভ সামওয়ান বাই হিজ সাইডস্ অ্যাজ হি স্ট্র্যাইভস্ টু বিকাম অ্যা টেনিস ম্যায়েস্ত্রো।’ ওই লিফলেটের ভেতরের পাতায় লেখা ছিল, কোথায় কোন খাতে তাঁর কী কী টাকা প্রয়োজন? কেন প্রয়োজন? সব ডিটেলড্ ব্যাখ্যা।
বিশ্ব সার্কিটে লিয়েন্ডারের নেটের কাছের ভলি বিপক্ষের যতটা ত্রাসের। খরচা করতে না-চাওয়া ব্যবসায়ীদের কাছে তার চেয়েও বেশি আতঙ্কের ছিল ওই লিফলেটটা। ওটা হাতে নিয়ে ডক্টর ভেস পেজকে অফিসে ঢুকতে দেখলেই তাঁর তথাকথিত বন্ধুবান্ধবেরাও বলাবলি করা শুরু করত, ওই এসেছে, আবার এসেছে। সেই টাকা চাইবে। কেউ কেউ নাম দিয়েছিল ভিখিরি। বিখ্যাত কোচ টোনি রোচের কাছে কোচিং নেবেন ঠিক করেছিলেন লিয়েন্ডার। রোচের ফিজ সাড়ে চার লাখ ডলার শুনে মুম্বইয়ের বিখ্যাত শিল্পপতি বলেছিলেন, “ওই টাকায় তো আমাদের কোম্পানি স্কুল খুলে চালাতে পারে। এত টাকা টেনিসে দিতে যাব কেন? স্কুল থেকে তো এর চেয়ে বেশি মাইলেজ পাব।”
ষোলো বছর বয়স থেকে সার্কিটে যে ভাবে লিয়েন্ডার খেলে বেড়িয়েছেন। তার সঙ্গে গব্বরের ডেরায় বন্দি হেমা মালিনীর অদ্ভুত সাদৃশ্য। কাচের ওপর সারাক্ষণ নেচে রক্তাক্ত হতে হবে। নাচ থামালেই প্রেমিক গুলি খাবে।
লিয়েন্ডারের প্রেমিক তাঁর টেনিস জীবন। গব্বরের নির্দেশ তিনিও পরিষ্কার শুনেছিলেন, অবিরাম তোমায় জিতে যেতে হবে, পয়েন্ট কুড়িয়ে যেতে হবে। থেমেছ কী কেউ তোমার পেছনে টাকা ঢালবে না। গুলি খাবে তোমার টেনিস জীবন।
গত তিন দশকে বেশ কয়েক বার হয়েছে টাকা জোগাড়ের দুর্দশায় টেনিস জীবন গুলি খাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে। জার্মানিতে একটা রাত্তিরে তাঁর হাতে ছিল মাত্র ৭৩ ডলার। ওই টাকা দিয়ে রাত্তিরটা হোটেলে কাটানো সম্ভব ছিল না। ফলে টেনিস কোর্টেই রাত কাটাতে হয় তাঁকে। লিয়েন্ডারের নিজের জবানিতে ‘‘সবচেয়ে দুঃসহ, দুঃস্বপ্নের রাত।”
ভারতীয় খেলার জগতে তিনিই সর্বকালের সেরা কি না, এক কথায় মেনে নেওয়ার উপায় নেই। কিন্তু তাঁর সাফল্যের কাহিনি যে সর্বকালের সবচেয়ে জলজ্যান্ত সেটা নিয়ে কোনও বিতর্কসভাও বসা উচিত নয়। সচিনের কাহিনি যদি রাংতায় মোড়া রূপকথা হয়। জীবনের চেয়েও যদি রঙিন হয়। লিয়েন্ডার হলেন জীবনের চেয়ে অনেক ফ্যাসফেঁসে, ক্ষয় হতে থাকা, নিম্নমধ্যবিত্ত এক শ্রেণির এয়ারবাস ৩৮০-তে অবিশ্বাস্য উড়ান। গত তেইশ বছর ধরে তাঁকে কভার করতে গিয়ে কখনও হেসেছি, কখনও কেঁদেছি, কখনও নেচেছি, কখনও ভেঙে পড়েছি, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই অনুপ্রাণিত হয়েছি সীমাহীন ভাবে। সৌরভ? না, সৌরভের সঙ্গে সফরও এত বৈচিত্রের ভাঙাগড়া দেয়নি। এত ভয়ঙ্কর রোলারকোস্টারে তোলেনি। লিয়েন্ডারের কাহিনি কোথাও গিয়ে বনগাঁর গ্রামে থাকা নিরক্ষর ছেলের এমআইটি বা হার্ভার্ডে পড়তে যাওয়ার শখের মতন। আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর রাখবে না, এটাই চিরকালীন নিয়ম। কিন্তু আদার ব্যাপারির যদি বড় জাহাজ কেনার শখ হয়, আর সেটা কিনেও ফেলে, তা তো আপ্ত বাক্যকেও হারিয়ে টেক্সট বুকের বাইরে জীবনের চিরকালীন অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।
লিয়েন্ডার তেমনই। স্কুল ড্রপ আউট এক ছেলে। অথচ কোথাও গিয়ে যেন ব্যাকরণের ঊধ্বের্র্। প্রচলিত ধ্যানধারণার ঊর্দ্ধে।
প্রথম যখন ওঁকে ইন্টারভিউ করতে যাই, জবাবের আগে শুনেছিলাম পরিত্রাহি চিৎকার। সেটা মে ১৯৯১। আঠারো বছরের উঠতি তারকা হ্যারিংটন নার্সিং হোমের একটা কোনার ঘরে আর্তনাদ করছিলেন, “ছেড়ে দিন আমাকে। প্লিজ ছেড়ে দিন। ভীষণ লাগছে।” তাঁর পাশে এক চিনা। লিয়েন্ডারের পেটের সঙ্গে ঝুলছে কয়েকটা তার। ভাইব্রেটরের তার। চিনা পরে বুঝলাম ডাক্তার। কতকগুলো সরু কাঠি দিয়ে তিনি রুগির পেট আর গোড়ালিতে চাপ দিচ্ছিলেন। চাপ দেওয়া মাত্র সহকারী ভাইব্রেটর অন করছে। আর যন্ত্রণায় লাফিয়ে উঠে পড়ছেন লিয়েন্ডার। যতবার সুঁচ ফোঁটানো হচ্ছে শরীর কাঁপছে। শুনলাম পেটের মাসলে চোট হয়েছে। এমন চিকিৎসা করলে যা সময় নেবে, আকুপাংচার নেবে তার চেয়ে অনেক কম। একটাই সমস্যা, রুগিকে যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। আধ ঘণ্টা অবিরাম লিয়েন্ডারকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে বার হওয়ার সময় বলেছিলাম, কী দরকার ছিল অত তাড়াহুড়ো করার? আকুপাংচার না করালেই তো পারতে।
লিয়েন্ডার এক ঝলক তাকিয়ে বলেছিলেন। অ্যাকচুয়ালি বলেছিল বলা উচিত, কারণ বয়স তখন মাত্র আঠারো। অথচ শ্রদ্ধায় মাথা ঝুঁকিয়ে দেওয়া ওই রকম সংলাপ জীবনে কমই শুনেছি: “বন্ধু, তারাদের ধাওয়া করতে হবে, তবে না আপনি মেঘে নামবেন। মেঘকে ধাওয়া করলে হয়তো আপনি ডাঙাতেই থেকে যাবেন।”
সে দিনই রাতে সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয়াংশের জন্য পেজ পরিবারের বেগবাগান রো-য়ের তখনকার মধ্যবিত্ত বাড়িতে। সেখানেও নাটক। ডাইনিং টেবিলে কথা বলতে বলতে ফ্রুট বাস্কেট থেকে একটা ফল টেনেছিলেন লিয়েন্ডার। হা-হা করে উঠলেন ডক্টর ভেস পেজ। যত না বাবা, তার চেয়েও বেশি শিক্ষক। যাঁকে ভারতের সবক’টা দ্রোণাচার্য পুরস্কার দিয়ে দেওয়া উচিত। ভেস বললেন, “সাতটা বেজে গেছে এখন তুমি ফল খাবে না।” ইন্টারভিউ ভুলে এ বার মেজাজ হারিয়ে ফেললেন লি। “আমার প্রতি এ রকম নির্দয় ব্যবহার করছ কেন? আমার কোনও লাইফ নেই। আমি পার্টিতে যেতে পারি না। আমি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যখন-তখন বেরোতে পারি না। আমার জীবনে শুধুই টেনিস আর প্র্যাকটিস। এমনকী ফলও খেতে হয় আমায় পারমিশন নিয়ে।” ভেস শান্ত ভাবে বললেন, “লিয়েন্ডার, তুমি উত্তরটা জানো। যাও পাশের ঘর থেকে জার্নালটা নিয়ে এসে আঙ্কলকে দেখাও।”
গম্ভীরভাবে উঠে গেলেন লি। পাশের ঘর থেকে একটা মোটা বাঁধানো জার্নাল নিয়ে এলেন। যেটা অনেক বেশি ব্যাঙ্কের লেজারসদৃশ। লিয়েন্ডারই খুলে দিলেন প্রথম পাতা। তাতে লেখা পয়লা জানুয়ারি মায়ামি। অনুপুঙ্খ তালিকা; সে দিনকার বডি ওয়েট, পালস্ রেট, শরীরের ছন্দ, দিনের প্র্যাকটিস রুটিন, কী কী স্ট্রোক ভুল হয়েছে। পরের দিন দোসরা জানুয়ারি হিউস্টন। আবার সেই একই তালিকা। এ ভাবে এক-একটা দিন, এক-একটা শহর, কোনও দিন প্র্যাকটিস, কোনও দিন ম্যাচ। সর্বাত্মক বর্ণনা। ভেস নতুন নির্দেশ দিলেন, “শেষ পাতাটা নিজে আবার পড়ো। আঙ্কলকে পড়াও।”
ফণাধর সাপও যেমন সাঁপুড়ের বাঁশিতে মুহূর্তে শান্ত হয়ে যায়, তেমনই শেষ পাতাটা খুলে চুপচাপ হয়ে গেলেন লিয়েন্ডার। কী আছে কৌতূহলে টানলাম। দেখলাম বাইবেলের একটা লাইন আছে, “অনেকে ডাক পায়, ঈশ্বর বেছে নেন হাতে গোনা কয়েক জনকে।” উঠে আসার আগে শুনলাম ভেস বলছেন, “তুমি তো ওই কয়েক জনের মধ্যে যেতে চাও। তা হলে কষ্ট করতে হবে।”
দু’বছর আগে মুম্বইতে ফের লিয়েন্ডারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, লেজারটা কি এখনও আছে? জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, নতুন লেজারটা কোথায়? কারণ লিয়েন্ডার তো টেনিসের বাইরে বলিউডেও নেমে পড়েছেন। এটা অবশ্য রীতিমতো ভয়ের কারণ টেনিসে যখন তীব্র ট্রেনিং নিয়েছেন, পিছনে দিগনির্দেশকারী হিসেবে বাবা ছিলেন। ফিল্মজগতে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই নেমে পড়লেন কেন? বললেন, “প্রস্তুতি নেই কে বলেছে? টেপটা বন্ধ করুন।” বন্ধ করে কী বলেছিলেন আজ লিখেই দিচ্ছি।
বলেছিলেন, “গত আট মাস অনুপম খেরের কাছে অ্যাক্টিং শিখছি। দিনে টেনিস। রাতে অভিনয়। দু’টোই সমান মন দিয়ে।” অবাক হয়ে বললাম, টেনিসে তো একটা লক্ষ্য সামনে রেখে এগোতেন, উইম্বলডন। এখানে লক্ষ্যটা কী?
বললেন, “লক্ষ্য অস্কার জেতা।” বললাম, অস্কার কী বলছেন! আগে তো আনন্দলোক জিতুন। ফিল্মফেয়ার জিতুন। তার পর তো অস্কার। লিয়েন্ডার কড়া চোখে বললেন, “আমার স্বপ্ন আমার অভিনয় ক্ষমতা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, আপনার সমস্যা। আমি চোখের সামনে দেখছি ব্যাপারটা সম্ভব হচ্ছে।”
লিয়েন্ডার আটলান্টা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতার পরের মাসে এক ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপককে নিয়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের সমাধিস্থলে গিয়েছিলাম, যেখানে মাইকেল মধুসূধন দত্তের সমাধি। সমাধির ওপর আট ফুট লম্বা শ্বেতপাথরের মূর্তির পাশে দেখা গিয়েছিল একটা রজনীগন্ধার তোড়া। অধ্যাপক খুব উৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন যে, সেটা লিয়েন্ডার রেখে গিয়েছেন। পরে দেখা গিয়েছিল তা নয়। আসলে তখন মধুকবির বংশধর ব্যাপারটাই বুঝতেন না লি। এখন বোঝেন। মিল খুঁজে পান, মাইকেলের কবিতার সঙ্গে তাঁর লড়াকু মানসিকতার। সাঁয়ত্রিশ বছর বয়সে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লেখেন তাঁর বিখ্যাত বোহেমিয়ান পূর্বপুরুষ। চল্লিশে পৌছে লিয়েন্ডার নিউ ইয়র্কে যে মাইল ফলক স্থাপন করলেন, সেটাও তো মনঃকোকোনদে এক অবিস্মরণীয় কীর্তি!
কত সমালোচক, কত শত্রু তাঁর, কত হাঙ্গামাকারী আশেপাশে। শেষ দৃশ্যে তারা কী দেখল? দেখল, আনন্দ মহিন্দ্রার টুইট শেষ হতে না হতেই নতুন টুইট করেছেন, কার্তি চিদম্বরম। হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রভাবশালী পুত্র। মহেশ ভূপতি গোষ্ঠীর অবিসংবাদী প্রধান। তিনি টুইটে লিঙ্ক দিয়েছেন, লিয়েন্ডারের এক-একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের।
কোথাও অদৃশ্য ছায়ালিপি যেন চোখের সামনে ফুটে উঠছে, দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল।
শোনো জীবননদে দৃপ্ত হুঙ্কার।
নেট-প্রমাণ সমস্যা
• টেনিস-যুদ্ধ জেতার হাইট নেই। টেনেটুনে পাঁচ-আট। ওটা দিয়ে সার্ভ অ্যান্ড ভলির যুগে কেউ ভিডিয়ো গেমসেও চ্যাম্পিয়ন হয় না।

• সার্ভ নেই। সেকেন্ড সার্ভ ঘণ্টায় আশি কিলোমিটারের কম গতির। বিপক্ষের কাছে ২৪ ডিসেম্বর রাতের সান্টাক্লজ!

• বেস লাইন থেকে গ্রাউন্ড স্ট্রোকও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো নয়। বাঁ-দিকের কোর্ট থেকে মধ্যবিত্ত ব্যাক হ্যান্ড রিটার্ন যে কোনও টেনিস বোঝা স্পনসরের ভুরু কুঁচকে দিতে বাধ্য।

• টাকা নেই আধুনিক টেনিসযুদ্ধে অনবরত নামার মতো। যা টাকা আছে তা তো ভাল কোচ পুষতে দু’-তিন সপ্তাহেই ফুরিয়ে যাবে। তার মানে টুর্নামেন্টে ভাল খেলে খেলে অনবরত পয়েন্ট কামাতে হবে। পয়েন্ট কামাতে পারলে, ট্রফি জিততে পারলে একমাত্র যদি স্পনসর আসে। নইলে টাকার অভাবে জার্মান টেনিস কোর্টে সেই একদিন বাধ্য হয়ে থেকে যাওয়ার মতো নির্মম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাত জীবনে আরও আসবে।

• সমালোচক ভনভন করছে পাশে। তারা যা-তা বলছে কানের পাশে। বলছে, এ যত না টেনিস প্লেয়ার, তার চেয়ে বেশি অ্যাথলিট। কেউ বলছে, স্টেট অ্যাথলেটিক্স মিটে নাম দিলে অনায়াসে জিতবে, টেনিসে নয়। সাউথ ক্লাবে বসে বলছে, বাবা ডোপ করে মাসল করে দিয়েছে। কেউ বলছে স্পনসর টানার ফন্দিফিকির দেখে হেসে মরে যাই। এত নেগেটিভিটি কোনও ক্রীড়াবিদ ঘিরে তৈরি হয়নি।

• টেনিস প্রস্তুতির ধরনটা ক্রিকেটের তুলনায় অনেক বিশ্বজনীন। সেটায় রপ্ত হওয়ার জন্য বিদেশে গিয়ে না-থাকলেই নয়। কলকাতায় বসে টেনিস তারকা হওয়া আর বনগাঁয় বসে হার্ভার্ডে পড়া একই রকম কল্পবিজ্ঞান! কিন্তু বিদেশে পাঠাবেটা কে? স্পনসররা তো মুখ দেখলেই আঁতকে ওঠে, এই বুঝি টাকা চাইতে এল।

• ইন্ট্রা-পার্সোনাল সম্পর্ক ভাল নয়। সহ খেলোয়াড়রা হয় ঈর্ষা কাতর। নইলে জেনুইন কারণে ক্ষুব্ধ। তারা সব সময় পাশ থেকে সর্বনাশ কামনা করে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার কাগজে বিবৃতি দিয়ে সীমাহীন চাপ তৈরি করে রেখেছে।
 
নেটের ওপর দিয়ে ভলি
• ভয়ঙ্করতম সমালোচনাকেও পাত্তা দিও না। সহখেলোয়াড় ছুরি মারতে পারে। সাউথ ক্লাবের ঈর্ষাকাতর কোনও কোচ বলতে পারে তোমার মাসল ডোপ করে তৈরি। জাস্ট ইগনোর করো। ওই সময়টা দাও প্র্যাকটিসে।

• বড় বড় স্বপ্ন নিজের জন্য রাখো। রিয়েল বড় কিছু। পরিশ্রমই যদি করবে, তা দিয়ে মার্সেডিজ কেনো। চিন্তায় কখনও মুদির দোকান দিও না।

• অনন্ত পরিশ্রম নিশ্চয়ই করবে কিন্তু সেটা যেন কৌশলী, বুদ্ধিদীপ্ত আর বিজ্ঞানসম্মত হয়। তুমি কোনও ডাকাতের দলে কাজ করো না যে শিকার দেখেই হারেরেরেরে করে ঝাঁপিয়ে পড়লে।

• নিজের সীমাবদ্ধতা কোথায় অত ভেবো না। লোকের বাঁকা কথাতেও কান দিও না। সীমাবদ্ধতা সবার আছে। যারা বলছে তাদেরও আছে। বরঞ্চ শক্তিতে মাঞ্জা দিয়ে যাও।

• চাপকে পাগলের মতো ভালবাসতে শেখো। তা হলে চাপও একদিন তোমায় উজাড় করে প্রেম দেবে। আর পেশাদার জীবন সার্থক করে দেবে।

• প্রচণ্ডতম পরিশ্রম করার জন্য তৈরি থাকো ২৪*৭। জ্যোতিষী-আংটি-গ্রহ-কুষ্ঠি সব ফালতু। আসল হল পুরুষকার। প্রতিদিন পাঁচ হাজার স্কিপিং করতে হবে। জীবনে সত্তর-আশি লাখ ফোরহ্যান্ড অলরেডি মেরেছ জেনেও আবার সকালে ফোর হ্যান্ড ক্রসকোর্ট নিখুঁত করতে হবে। বুঝতে হবে জীবনে শর্টকাট বলে কিছু নেই, পরিশ্রমটাই তোমার হাইওয়ে। হাইওয়ের জ্যামটা একবার খুলে গেলে দেখবে গাড়ি দৌড়চ্ছে!

• জীবনে নতুন নতুন লক্ষ্য রেখো। শুধু একটা ভেরি বোরিং। তবে যেটা ধরবে সেটাতেই সোনা জেতার চেষ্টা করতে হবে। নইলে আর অ্যাডভেঞ্চারের মজা কীসের?

• মন ধারাবাহিক বিদ্রোহ করতে পারে। বলতে পারে কেন আমাকে কয়েদি করা হল, আর সবাইকে ছেড়ে? কই আমার সমবয়সিদের তো দাসত্বের এই শৃঙ্খল নেই? তারা তো দিব্যি নেচে-গেয়ে বেড়াচ্ছে। তখন নিজেই নিজেকে মনে করবে বাইবেলের সেই অমোঘ লাইনটা: অনেকে ডাক পায়। ঈশ্বর নির্বাচন করেন গুটিকয়েককে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.