সম্পাদকীয় ১...
সুফল
ক্তের ভক্ত, নরমের যম— প্রবচনটির যাথার্থ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে পার্বত্য দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আরও একবার প্রমাণিত। মোর্চা-সহ অন্যান্য আন্দোলনকারী সংগঠনকে লইয়া গঠিত ‘যুক্ত সংগ্রাম কমিটি’ এক বৈঠকে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ-ধর্মঘট বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে, তাহার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর অবস্থানের ভূমিকা স্পষ্ট। চাপের কাছে মাথা নত না-করার জেদ ধরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মোর্চা নেতৃত্বকে নত হইতে বাধ্য করিয়াছেন। এক দিকে তিনি কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ করিয়াছেন, অন্য দিকে লেপচা উন্নয়ন পরিষদ গড়িয়া পার্বত্য দার্জিলিঙের ভূমিপুত্রদের বিকল্প আন্দোলন ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মান্যতা দিবার কুশলী রাজনীতি অনুশীলন করিয়াছেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া মোর্চা নেতৃত্বের সহিত স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সমীকরণে যাওয়ার পথও বন্ধ করিয়াছেন। মোর্চা নেতৃত্ব অগত্যা উপলব্ধি করিয়াছেন, ক্রমাগত বন্ধ-অবরোধ-ধর্মঘট পাহাড়ে যে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর অনটন সৃষ্টি করিতেছে, তাহাতে তাঁহাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকিতে বাধ্য।
মোর্চা নেতৃত্ব তথা যুক্ত সংগ্রাম কমিটির এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। ইহার ফলে দার্জিলিঙে জনজীবন দ্রুত স্বাভাবিকতায় ফিরিতেছে, দোকান-পাট খুলিতেছে, বাজার-হাট বসিতেছে, স্কুল-কলেজও খুলিতে চলিয়াছে। খাদ্যসামগ্রী-সহ অত্যাবশ্যক পণ্যের সরবরাহে যে ঘাটতি দেখা দিয়াছিল, তাহাও কাটিতে চলিয়াছে। অশান্তিতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ী, যান-মালিক তথা পরিবহণ কর্মীরা— এক কথায় পর্যটনের উপর নির্ভরশীল দার্জিলিঙের সমগ্র অর্থনীতি। শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়েও যদি আন্দোলন অব্যাহত থাকিত এবং দার্জিলিঙ পর্যটক-বিমুখ হইয়া থাকিত, তবে বিমল গুরুঙ্গদের পক্ষে দলের গণভিত্তি ধরিয়া রাখাই দুরূহ হইয়া পড়িত। পাহাড়ের শ্রমজীবী মানুষ, স্কুলপড়ুয়া, চাকুরিজীবী ও ছোট ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশায় স্বনিযুক্ত ব্যক্তিরা, সকলেই এই সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়াছেন। স্বস্তি বোধ করিতেছেন এই রাজ্যের জনসাধারণ এবং সরকারও।
বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁহার পারিষদরা তাঁহাদের পূর্বসূরি সুবাস ঘিসিংয়ের মতোই পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করিতেছেন। তেলঙ্গানাকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দিবার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত তাঁহাদের আন্দোলনে ইন্ধন জোগায়। তিনটি মহকুমা লইয়া যে একটি আলাদা প্রদেশ গড়া যায় না, এই বাস্তবতাটি তাঁহাদের মাথায় ঢুকে নাই। এই তিন মহকুমায় গোর্খারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হইলেও লেপচা ও ভুটিয়াদের মতো অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের দাবিদাওয়ার প্রতি যে তাঁহারা উদাসীন থাকিতে পারেন না, ইহাও তাঁহাদের খেয়াল হয় নাই। আর চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ সংলগ্ন ভৌগোলিক ভাবে এমন স্পর্শকাতর একটি ভূখণ্ডে স্থিত যে, কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নয়াদিল্লিও অনুমোদন করিতে পারে না, ইহাও তাঁহারা বিস্মৃত হইয়াছেন। তাই রাজ্য সরকারকে পাশ কাটাইয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাঁহারা দরবার করিতেছিলেন। কেন্দ্রের পক্ষে যে রাজ্যকে এড়াইয়া বা উপেক্ষা করিয়া তাঁহাদের কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়, ইহা কিঞ্চিৎ বিলম্বে বুঝিয়াছেন। ইতিমধ্যে পার্বত্য দার্জিলিঙের অর্থনীতির সর্বনাশ হইয়া গিয়াছে। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী এই আন্দোলন মোর্চা নেতৃত্বকেই কালক্রমে জনবিচ্ছিন্ন করিয়া দিবে, এমন আশঙ্কাই যুক্ত সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তের পিছনে সক্রিয় থাকিয়াছে। কারণ যাহাই হউক, ইহাতে পাহাড়ে আবার শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতি ফিরিবে, পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য যাহা একান্ত জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.