৬০ হাজার চাকরির আশা
ছোট শিল্পে রাজ্যই দেবে দক্ষ লোক
লাগে লোক (শিল্প সংস্থার), দেবে রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, সেই কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণও দিয়ে দেবে তারা। এই নিয়ে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সঙ্গে শীঘ্রই রাজ্য সরকারের চুক্তি হচ্ছে। এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিতে প্রথম ধাপে ৬০ হাজারেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর।
আগামী সোমবার, ১৬ তারিখ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে মেলা শুরু হচ্ছে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে, যার পোশাকি নাম ‘সিনার্জি এমএসএমই-২০১৩’। সেখানেই শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে এই চুক্তিটি সই করবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর, যার মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, এর ফলে বড় সেতুবন্ধন হতে চলেছে। এত দিন পর্যন্ত রাজ্যের কোনও দফতর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিত, কোনও দফতর কর্মীদের কর্মসংস্থানের দিকটি দেখত। কিন্তু দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয় না থাকায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে সেই বেকাররা কোথায় যেতেন, খোঁজ রাখত না কেউ। আবার দক্ষ লোকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শিল্প সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ছিল না। ফলে বাজার থেকে আধাদক্ষ বা অদক্ষ লোক নিয়ে কাজ চালাতে হতো তাদের। এ বার সব দফতরকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। প্রশাসন সূত্রে দাবি, তা ঠিকমতো করতে পারলে সরকারের কাছে প্রশিক্ষণ পাওয়া লোকেরা সহজে চাকরি পেয়ে যাবেন, আবার শিল্প সংস্থাগুলিরও প্রয়োজনীয় দক্ষ কর্মী পেতে সমস্যা হবে না।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর বলছে, চামড়া থেকে প্লাস্টিক, নির্মাণ থেকে বস্ত্র একাধিক শিল্প ক্ষেত্র তাদের চাহিদার কথা জানিয়েছে। সব মিলিয়ে তারা ৬০-৭০ হাজার লোক চাইছে। রাজ্য আপাতত ৬০ হাজার প্রশিক্ষিত লোকের ব্যবস্থা করবে। সেই লক্ষ্যে মাস দুয়েকের মধ্যে প্রশিক্ষণ শুরুও হয়ে যাবে। তবে এই প্রক্রিয়া এক বারেই শেষ হয়ে যাবে, তা নয়। বরং এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলেই আশা সরকারি দফতরের।
মহাকরণ সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু দিন ধরেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপরে জোর দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, বড় শিল্পে বড় বিনিয়োগ আসে। কিন্তু কর্মসংস্থানের পরিমাণ হয় তুলনামূলক ভাবে কম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বরং অনেক বেশি লোকের চাকরির আশা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই সম্প্রতি ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের সঙ্গে বিভিন্ন শিল্প-সংগঠনের বৈঠক হয়। সেখানেই বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়। এ বারে ‘সিনার্জি ২০১৩’-ও সেই লক্ষ্য নিয়েই শুরু হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ মঙ্গলবার বলেন, “মেলার মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে সমঝোতাপত্র সই হবে। চুক্তি মোতাবেক, শিল্প সংস্থাগুলির চাহিদামতো বেকারদের কাজের ব্যবস্থা করা হবে। তাঁদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে নিজেদের খরচে প্রশিক্ষণ দেবে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতর। চুক্তির শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থা ওই প্রশিক্ষিতদের স্থায়ী চাকরি দিতে বাধ্য থাকবে।”
চাহিদা কত*
নির্মাণ ২৩,০০০
পাখা ১,০০০
ফাউন্ড্রি ১২,০০০
প্লাস্টিক ৫,০০০
চর্ম ৫,০০০
বস্ত্র ২১,০০০

*
কোন শিল্পের কত মানবসম্পদ চাই
সূত্র: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর
ইতিমধ্যে চুক্তিপত্রের এই খসড়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে শিল্প সংস্থাগুলির কাছে।
শিল্পসংস্থাগুলি কী বলছে?
রাজ্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে চর্মশিল্প মহল-সহ বিভিন্ন শিল্প সংস্থা। ইন্ডিয়ান লেদার প্রোডাক্টস অ্যাসোসিয়েশন (ইলপা)-এর সভাপতি শঙ্কর দাঁ বলেন, “প্রশিক্ষিত কর্মী নেওয়ার জন্য রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করছি। সরকার যদি আমাদের পরামর্শ মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী তৈরি করে দিতে পারে, তা হলে চাকরি দিতে সমস্যা হবে না।” তাঁর কথায়, “চর্মপণ্য উৎপাদন শিল্পে চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।” হাওড়া ফাউন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সন্দীপ দত্ত বলেন, “সরকারের সঙ্গে কর্মীনিয়োগ নিয়ে পাকা চুক্তি করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিল্পের সঙ্গে সরকারের এই যোগসূত্রের ফলে কর্মসংস্থান বাড়তে বাধ্য।” তাঁর যুক্তি, “অনেক সময়ই লোক পাওয়া যায় না। সরকার সেই চাহিদা মেটালে ফাউন্ড্রি শিল্পের ভালই হবে।” অলঙ্কার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পমহলও জানিয়েছে, সরকারের প্রস্তাবটি তারা বিবেচনা করে দেখবে।
মহাকরণের খবর, বেকার ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেবে কারিগরি শিক্ষা দফতর। কোন শিল্প সংস্থার কী ধরনের লোকের প্রয়োজন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা জেনে নেবে ওই দফতর। সেই মতো পাঠ্যক্রম তৈরি করে তারাই ঠিক করবে, কোথায় কাকে কত দিনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর যাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, তাঁদের জুগিয়ে যাবে শ্রম দফতর। সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা করবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। গোটা প্রক্রিয়াটির উপর নজরদারি চালাতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা দফতরের সচিব হৃদেশ মোহন জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ কোথায় হবে, সরকারি না বেসরকারি শিক্ষাকেন্দ্রে, তা ঠিক করবেন তাঁরাই।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতর বেকার ছেলেমেয়েদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়। এই ব্যবস্থা চালু হলে সে সব ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষা দফতরের অধীনে এক ছাতার তলায় সব দফতরের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আনা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের খরচ বহন করবে সংশ্লিষ্ট দফতর।
শ্রম দফতরের সচিব অমল রায়চৌধুরী বলেন, “আমাদের ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’-এ এই মুহূর্তে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে থেকেই বাছাই করে ওই ৬০ হাজার ছেলেমেয়ের নাম প্রথম দফার প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।”
তিনি আরও জানান, এর পর থেকে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করার সময় কার কোন পেশায় আগ্রহ, কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না সে তথ্যও জেনে নেওয়া হবে। অমলবাবুর কথায়, “এটা করলে ঠিক ঠিক শিল্পের জন্য ঠিক ঠিক লোক বাছাই সহজ হবে।”
রাজ্যে প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের আকাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বণিকসভা। শিল্পসংস্থাগুলির মূল অভিযোগ, প্রশিক্ষণের সময় খাতায়-কলমে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তা শিল্পের কাজে লাগে না। যদিও কিছু শ্রমিক পাওয়া যায়, তাঁদের ফের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়। তার জন্য শিল্প সংস্থাগুলিকে ফের অর্থ খরচ করতে হয়। তাদের বক্তব্য, শিক্ষার সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন করার জন্য বাম আমলে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। মমতার নির্দেশে নতুন এই ব্যবস্থা ঠিকঠাক কার্যকর হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আগামী দিনে কয়েক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রাজীব সিংহের প্রতিশ্রুতি, “এই অভিযোগ আগামী দিনে আর থাকবে না। শিল্পের চাহিদা বুঝে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বেকার ছেলেমেয়েদের সেই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়াই হবে আমাদের লক্ষ্য। সেই মতোই যাবতীয় পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “আগামী দশ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র বস্ত্র এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পেই ২ কোটি কর্মসংস্থান সম্ভব হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.