কুবের উবাচ
সুমন্ত ঘোষ (৩৮) • স্ত্রী আশা (৩৬) • ছেলে আকাশ (৮) • মেয়ে সুবর্ণা (৪ মাস)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী • অফিসে পিএফ, স্বাস্থ্য বিমা আছে • স্ত্রী গৃহবধূ • নিজেদের বাড়ি
• থাকেন বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে • রয়েছে পারিবারিক ফ্ল্যাট ও নিজের ফ্ল্যাট (বাজার দর যথাক্রমে ৪৫ ও ২৫ লক্ষ)
• ছেলে সেরিব্রাল পল্সিতে আক্রান্ত • বিদেশে তার চিকিৎসা করাতে চান •অবসরের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত

মাসে নিট আয়
বেতন ৫৬,০০০

ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া ৬,০০০
খরচ (মাসে)
• সংসার চালাতে: ১০,০০০
• ছেলের চিকিৎসা ও পড়াশোনা: ১২,০০০
• নিজের ফ্ল্যাটের মাসিক কিস্তি: ১০,০০০ (১৫ বছরের)
• গাড়ির মাসিক কিস্তি: ৪,০০০ (৫ বছরের)
টাকা রাখেন (মাসে)
পিএফ: ১১,০০০
জীবন বিমা: ১,১৬৪ (বিমা মূল্য ২.১০ লক্ষ)
রেকারিং ডিপোজিট: ৫,০০০
পিপিএফ: ২,০০০
সম্পদ
পারিবারিক ফ্ল্যাট: ৪৫ লক্ষ (বর্তমান বাজার দর)
নিজের ফ্ল্যাট: ২৫ লক্ষ (বর্তমান বাজার দর)
স্থায়ী আমানত: ৫.৫ লক্ষ
সোনা: ১.৫ লক্ষ

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
আমার নিজের সন্তান আছে। তাই সন্তানের জন্য বাবা-মার চিন্তার বিষয়গুলি কিছুটা হলেও আমাকে ছুঁয়ে যায়। আজকে সুমন্তর প্রোফাইলটি সে রকমই একটি।
সত্যিই আকাশকে নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তার বিশেষ পড়াশোনা, চিকিৎসার জন্য সংসার খরচের বাইরে অনেকটাই অর্থ ব্যয় করতে হয় সুমন্তকে। বাবা হিসেবে সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছেন, সে জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তেমনই আকাশের বিশেষ চাহিদাগুলি এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথাও উঠে এসেছে তাঁর চিঠিতে। আজ সেই বিষয়ে তাঁকে কিছুটা পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি, অন্য যে-সব প্রশ্ন তিনি আমাদের কাছে রেখেছেন, তারও উত্তর দিতে চাই।
অন্যান্য পরিবারের মতো বিভিন্ন দিক সামলে সুমন্তকে চলতে হয়। পাশাপাশি, আকাশের জন্য বাড়তি খরচও আছে। তাই প্রথমেই দেখে নিই কী কী খাতে খরচ কমানো সম্ভব তাঁর পক্ষে। ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ির মতো কোনও কিছু কেনার জন্য ঋণ নেওয়ার পক্ষপাতী নই আমি। অথবা তা নিলেও, বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া উচিত নয় বলেই আমার মত। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সব জিনিসের বাজার দর কমতে থাকে। পাশাপাশি, মাসিক কিস্তির জন্য যে-টাকা সুদ হিসেবে দিতে হয়, তা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক আমানতের সুদের তুলনায় বেশি। তা ছাড়া, গৃহঋণে কর- ছাড় মেলে। গাড়ি ঋণে সেই সুবিধা নেই। সে জন্য আখেরে লাভ হয় না।
তাই আমার মতে, সুমন্তর প্রথমেই উচিত জমানো ব্যাঙ্ক আমানত থেকে কিছু টাকা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ি ঋণ শোধ করা। এখন তাঁর হাতে মাসের শেষে ১৮,০০০ টাকা থাকে। ঋণ শেষ হলে তাঁর হাতে প্রায় ২২,০০০ টাকা থাকবে লগ্নির জন্য। এ বার আমরা সেই টাকা লক্ষ্য অনুসারে কী ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা-ই দেখব। শুরু করব আকাশের চিকিৎসা দিয়ে।

আকাশের চিকিৎসা
বিদেশে গিয়ে আকাশের সেরিব্রাল পল্সি-র চিকিৎসা করাতে চান সুমন্ত। কিন্তু এ জন্য অনেকটাই অর্থ প্রয়োজন। আমি যত দূর জানি, এই রোগের জন্য স্টেম সেল থেরাপি করাতে হয়। আমেরিকায় এর খরচ কী রকম, তা আমার খুব একটা জানা নেই। তবে আনুুমানিক ১০-৫০ হাজার ডলার ধরে নিতে পারি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে খরচের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে সুমন্তর কাছে। সেই খরচ আপাতত ২০ হাজার ডলার বা ১৩ লক্ষ টাকা (ডলার গড়ে ৬৫ টাকা) ধরে নিয়েই পুরো হিসাবটি করব।
আপাতত দু’ভাবে তিনি এই অর্থ জোগাড়ের কথা ভাবতে পারেন। একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। আর অন্যটিতে এখনই চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

উপায় ১

১) সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এর মাধ্যমে ডাইভার্সি-ফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি শুরু করুন। প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে রাখলে ৮ বছরে এই খাতে জমবে প্রায় ৮.০৭ লক্ষ টাকা (১২% রিটার্ন ধরে)।
২) রেকারিং ডিপোজিটে মাসে ৩ হাজার টাকা রাখুন। ৮ বছরে ৯% সুদ ধরলে প্রায় ৪.২২ লক্ষ টাকা জমবে। অর্থাৎ এই দুই প্রকল্পে টাকা রেখে আপনার হাতে ১২.২৯ লক্ষ টাকা আসছে। চাইলে সেই অর্থ আকাশের চিকিৎসায় কাজে লাগাতে পারেন।

উপায় ২
আপনার পারিবারিক ফ্ল্যাটের বদলে ঋণ নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। সেই টাকা চিকিৎসার কাজে লাগাতে পারেন। তবে এ জন্য পার্সোনাল লোন না- নিলেই ভাল। কারণ পার্সোনাল লোনের সুদ অনেকটাই বেশি। ফ্ল্যাটের বদলে ১৫ বছরের ঋণ নিলে মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। এই ঋণ নিতে চাইলে আগে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলে নিন।
কোন সময়ে আপনি ছেলের চিকিৎসা করাতে চান বুঝে নিয়ে, সুবিধা মতো উপরের যে কোনও একটি পথ বেছে নিতে পারেন।

ছেলের ভবিষ্যৎ
আকাশের চিকিৎসার খরচের জন্য তো সঞ্চয় করছেনই। তার বাইরেও টাকা সরিয়ে রাখা জরুরি। যা তার ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এ জন্য ১ বছরের মেয়াদে ব্যাঙ্কে রেকারিং ডিপোজিট করুন। সেখানে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে রাখুন। এক বছরে যে টাকা জমবে, তা তুলে নিয়ে ডাকঘর এমআইএস প্রকল্পে রাখুন। এ ভাবে চালালে প্রতি মাসে যে-সুদ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে আকাশের ভবিষ্যতের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো যাবে। তবে ঋণ নিলে এই লগ্নি এখনই শুরু করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে বেতন বাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মেয়ের পড়াশোনা
সুবর্ণার বয়স মাত্র চার মাস। কিন্তু চিঠি থেকে স্পষ্ট, আপনি তার পড়াশোনার চিন্তা করছেন। যা যথেষ্ট বুদ্ধিমানের কাজ। কলেজে পড়ার আগে হাতে এখনও ১৮ বছর সময় রয়েছে। এ জন্য এখন থেকেই মাসে ২,৫০০ টাকা করে কোনও ইনডেক্স ফান্ডে এসআইপি করুন। এর সাহায্যে আপনি প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা জমাতে পারবেন (১২% রিটার্ন ধরে)। যা দিয়ে আপনার প্রয়োজন মিটবে।

অবসর পরিকল্পনা
অবসরের জন্য আলাদা করে কোনও ‘পেনশন প্ল্যান’-এ লগ্নি না-করে বরং অন্যান্য খাতে টাকা জমান। সেখানে যে-সম্পদ জমা হবে, তা অবসরের সময়ে অ্যানুইটি মেলে এমন প্রকল্পে রাখুন। সে জন্য কয়েকটি উপায়ের কথা বলতে পারি। ধরে নিচ্ছি আপনি টাকা জমিয়ে ৮ বছর পরেই আকাশের চিকিৎসা করবেন। সে ক্ষেত্রে উপরে বলা লগ্নির পরেও আপনার হাতে থাকছে প্রায় ৭,৫০০ টাকা।
পিপিএফে আপাতত যে-টাকা লগ্নি করেন, তার বাইরেও মাসে কমপক্ষে ২,০০০ টাকা করে রাখুন।
বছরে ২৪ হাজার টাকার এনএসসি কিনতে পারেন।
আর চিকিৎসা ঋণ নিলে তার মাসিক কিস্তি (১৪ হাজার টাকা) ও গৃহঋণের কিস্তি (১০ হাজার টাকা) বন্ধ হলে ওই ২৪ হাজার টাকা আপনি অন্যান্য প্রকল্পে লগ্নি করা শুরু করুন।
১) মাসে ৮,০০০ টাকা লগ্নি করুন ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে।
২) কোনও ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে অথবা রেকারিং ডিপোজিটে মাসে ৮ হাজার করে রাখুন।
৩) বাকি ৮,০০০ টাকা প্রতি মাসে এনএসসি-তে বিনিয়োগ করুন।
• পিএফ অবসরের জন্য রাখুন।
• পারিবারিক সম্পত্তির অংশ পেলে, তা-ও অবসরের জন্য তুলে রাখুন।

আর একটি ফ্ল্যাট কেনা
সুমন্ত চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, আর একটি ফ্ল্যাট কেনা তাঁর পক্ষে খুব বেশি ঝুঁকির হবে কি না। আমার মতে, তা এই মুহূর্তে ঝুঁকির নয়। তবে সুমন্তর ইতিমধ্যেই পারিবারিক বাড়ি, একটি ফ্ল্যাট ও নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। তাই আবার ফ্ল্যাটে লগ্নির আগে কয়েকটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখে নিন
• এ জন্য ফের ঋণ নিতে হবে। এমনিতেই তাঁর গাড়ি ও ফ্ল্যাটের কিস্তি চলছে। ফলে বেশি চাপ পড়তে পারে।
• ফ্ল্যাট কিনে তা ভাড়া দিলেও, সেই অঙ্ক সাধারণত মাসিক কিস্তির তুলনায় কম হয়। এর ফলে হাতে নগদের জোগানে টান পড়তে পারে।
• ফ্ল্যাট কেনার পর তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেকটাই খরচ হয়।

অন্যান্য
• এর পর বেতন বাড়লে প্রথমেই নিজের জন্য একটি টার্ম পলিসি কিনে রাখুন। আপনার কিছু হলে তা পরিবারকে সুরক্ষা দেবে।
• অফিস স্বাস্থ্য বিমার টাকা দিলেও, নিজেদের আলাদা ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করে রাখুন। হাতে থাকা ৩,৫০০ টাকা দিয়ে প্রিমিয়াম দিতে পারবেন।
• সোনায় যে-লগ্নি রয়েছে, তা সুবর্ণার বিয়ের জন্য রাখুন।
আশা করব, আমার এই পরামর্শ কিছুটা হলেও আপনাকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.