শান্তির খোঁজে
ষ্ট করলে কেষ্ট মেলে।
সেই ছেলেবেলা থেকে এ কথা যে কত বার শুনেছি আমরা! কখনও ক্লাসের মাস্টারমশাইয়ের কাছে। তো কখনও বাবার বকুনিতে। কিন্তু সত্যিই শুনেছি কি? বোধহয় না!
আর সেই কারণেই হাজার প্রতিজ্ঞার পরেও সেই পরীক্ষার আগের রাতের জন্যই পড়া ফেলে রাখি আমরা। বিস্তর গড়িমসির পর শেষ মুহূর্তে দৌড়ই ট্রেন ধরার জন্য। আজ করব-কাল করব করে কাজের পাহাড় জমতে থাকে অফিসের টেবিলে। আর আগে থেকে করা জরুরি জেনেও শেষ বেলার জন্য পড়ে থাকে পেনশন পরিকল্পনা।
ষাটের পর চাকরি থাকবে না জানি। শেষ বয়সে চিকিৎসা-পত্তরের খরচ যে আকাশ ছোঁবে, তা-ও জানা। তবুও অবসরের আয় (পেনশন) নিশ্চিত করার কাজ পিছিয়েই চলি আমরা। ভাবি, এখনও বিস্তর সময় আছে হাতে। আগে এই কাজটা সামলে নিই, তারপর মন দেওয়া যাবে বুড়ো বয়সের জন্য সঞ্চয়ে।
ভুল। মস্ত ভুল এ ভাবে চিন্তা করা। কেন? তা নিয়েই আজ এখানে আলোচনা করব। জানতে চেষ্টা করব, কেন, কী ভাবে করা উচিত সেই সঞ্চয়। সব মিলিয়ে, পেনশন দিয়ে টেনশন ভাগানোর রাস্তা খুঁজব আমরা।
তবে মূল আলোচনায় ঢোকার আগে একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভাল। তা হল, অবসরের আয় মানেই কিন্তু পেনশন প্রকল্পে লগ্নি নয়। এমনিতে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে ওই ধরনের প্রকল্প কিনতেই পারেন। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, পছন্দসই প্রকল্পে লম্বা সময়ের জন্য মোটা টাকা লগ্নি করা। যাতে পরে সেই টাকা কোথাও রাখলে, সেখান থেকে প্রতি মাসে সুদ মেলে। কিংবা তা দিয়ে কেনা যায় কোনও অ্যানুইটি প্রকল্প। তাই এখানে পেনশন বলতে অবসরের পর যে-কোনও সূত্র থেকে মাসে মাসে টাকা পাওয়ার বন্দোবস্তের কথাই বলছি আমরা।

গড়িমসি কেন?
আচ্ছা, আমরা বলছি যে, আগে থেকে পেনশনের জন্য টাকা জমাতে আমাদের বড্ড আপত্তি। তার মানে কি কখনওই ভবিষ্যতের জন্য টাকা রাখি না আমরা? হাতে এলেই সবটা উড়িয়ে দিই খোলামকুচির মতো? তা তো নয়। ভবিষ্যতের জন্য কম-বেশি সঞ্চয় তো আমরা সকলেই করি। তা হলে?
আসলে যে-সব সঞ্চয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে (যেমন, সন্তানের পড়াশোনা, বিয়ে, বাড়ি কেনা ইত্যাদি), তার জন্য টাকা তুলে রাখতে অনেক বেশি উদ্দীপ্ত হই আমরা। সেখানে অবসর ব্যপারটা ঠিক এতটা সোজাসাপ্টা ঠেকে না। আটান্ন বা ষাটে চাকরি থেকে অবসরের পর নিয়মিত রোজগারের রাস্তা যে বন্ধ হয়ে যাবে, তা আমরা জানি। কিন্তু তার পর কত দিন বাঁচলে কত টাকা জমিয়ে প্রয়োজন মাফিক পেনশন হাতে পাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আমরা কিছুটা অন্ধকারে। আর সেই কারণেই হয়তো এ নিয়ে নিত্য টালবাহানা।
কিন্তু অনেক আগে থেকে পেনশন খাতে নিয়মিত টাকা জমাতে শুরু না-করলে, পরে অথৈ জলে পড়বেন আপনি। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পেনশনই কেন? উত্তর হল, শুধু মোটা থোক টাকা থাকলেই কাজ চলবে না। চাকরি বা ব্যবসা, যা-ই করুন না কেন, মাসে মাসে একটা টাকা পেতে আপনি অভ্যস্ত। তাই তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা বিস্তর। সেই কারণেই পেনশনের এত গুরুত্ব। যাতে কাজের থেকে ছুটি নেওয়ার পরেও নিয়মিত আয়ে ছেদ না-পড়ে।

একটু ভাবুন
বর্তমানে ভারতে গড় আয়ু ৬৫ বছর। চিকিৎসা ব্যবস্থা আর বিজ্ঞান যে-ভাবে হাত ধরাধরি করে এগোচ্ছে, তাতে ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাড়বে আরও বেশ কয়েক বছর। দেখা যাবে, গড়ে ৭০ বছর বাঁচছেন পুরুষ। আর মহিলারা ৭২ বছর। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আগামী দিনে অবসর জীবন আরও দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা। আর আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি স্বচ্ছন্দে অনেক দিন বেঁচে থাকতে হয়, তা হলে অনেক আগে থেকে তার খোরাকের ব্যবস্থা তো করতেই হবে।

অনেকে মনে করেন, অবসরের পরে সংসার খরচ কমবে। বুড়ো মানুষের তো আর তেমন শখ-আহ্লাদ নেই। তার আবার খরচ কী?
কিন্তু আসলে ঠিক উল্টো। এমনিতেই যত দিন যাবে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে আপনাকে। এখন যে-চাল ৪০ টাকা কেজিতে কিনছেন, তখন সেই একই চাল হয়তো কিনবেন ১৪০ টাকা দরে।
তার উপর রয়েছে চিকিৎসার নিয়মিত খরচ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আজ চোখ তো, কাল হাঁটু বেঁকে বসবেই। ফলে তখন প্রায়ই ছুটতে হবে ডাক্তারের কাছে। রোজকার ওষুধের জন্য তুলে রাখতে হবে আলাদা টাকা। যার অঙ্ক নেহাত কম নয়। তা ছাড়া, বড়সড় রোগের জন্য হাসপাতালের খরচ জমানো বা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম গুনে মেডিক্লেমের কভারেজ বাড়ানোর ঝক্কি তো আছেই।

মনে রাখবেন, এক বার এক ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে, চট করে তা থেকে নেমে আসা শক্ত। বিশেষত শেষ বয়সে। মনে করুন, পঞ্চাশ পেরোনোর পর আর সে ভাবে বাসে চড়েননি আপনি। রাস্তায় পা রাখলেই হাঁক পেড়েছেন ট্যাক্সিকে। এখন অবসরের পর হঠাৎ করে ফের বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে কোথাও যাওয়া আপনার পোষাবে কি?
সুতরাং জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে গেলে বাড়তি কড়ির সংস্থান করে রাখতেই হবে আপনাকে। অবসর মানেই কৃচ্ছ্রসাধন করে সংসার খরচ কমিয়ে ফেলব, এমন ভাবনা বাদ দেওয়াই ভাল।

আর একটা কথা। বয়স হলে শখ-আহ্লাদ থাকবে না-ই বা কেন? কেনই বা উপভোগ করা যাবে না জীবনকে? তখনই তো বরং লম্বা একটা ছুটি কাটানোর জন্য আপনি ঝাড়া হাত-পা। ৫০তম বিবাহবার্ষিকীতে হিরের আংটির ‘আইডিয়া’ও মন্দ নয়। তা হলে? একটু আগে থেকে সঞ্চয় শুরু না-করে উপায় কি?

খেয়াল করে দেখুন, দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন আমানত প্রকল্পে সুদের হার কিন্তু ক্রমশ কমছে। আগামী দিনেও এই প্রবণতা বজায় থাকার সম্ভাবনা। তাই ভবিষ্যতে সুদ হিসেবে একই অর্থ পেতে আগের তুলনায় বেশি টাকা রাখতেই হবে আপনাকে।
চাকরির শেষ মাসের বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেনশনের ব্যবস্থা এখন কোথাও নেই। বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের কথা তো ছেড়েই দিন। এখন সরকারি চাকরিতেও পেনশন নির্ধারিত হয় কেউ ওই খাতে নিজে কত টাকা জমাচ্ছেন, তার উপর ভিত্তি করে। তাই পেনশন পরিকল্পনাকে অবহেলা করার উপায় নেই কারওরই।

একান্নবর্তী পরিবারের কথা তো বাদই দিলাম। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর ছেলে-মেয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন, এমন সংখ্যাও বেশ কম। বলা ভাল, চাকরির খাতিরে কিংবা নিজেদের পাতা নতুন সংসারের সূত্রে আলাদা থাকেন তাঁরা। তাই কারও উপর নির্ভর না-করে নিজেদের বুড়ো বয়সের সংস্থান নিজেরাই করে রাখা ভাল।

পথের কাঁটা
নিশ্চিন্ত অবসরের জন্য পরিকল্পনা ও সেই খাতে সঞ্চয় যে একান্ত জরুরি, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছি আমরা। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও তা করা হয়ে ওঠে না কেন? কারণগুলি মোটামুটি এ রকম

প্রথম কারণ অবশ্যই সঞ্চয় সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা। আসলে সিংহ ভাগ ভারতীয়ই অবসর জীবনের জন্য এখনও আলাদা করে সঞ্চয়ের কথা ভাবেন না। কারণ তাঁদের ধারণা, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর আমানত, প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ), পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিপিএফ) মতো প্রকল্পে টাকা রাখলেই অবসর জীবন নিশ্চিত, সুরক্ষিত। কিন্তু এ সব কিছু থাকা সত্ত্বেও আলাদা ভাবে অবসর পরিকল্পনা করে রাখা যে কত জরুরি, তা বোঝেন না তাঁরা।

আগেই বলেছি, দীর্ঘ মেয়াদে সঞ্চয়ের জন্য পিপিএফ, পিএফ ইত্যাদি সনাতন পদ্ধতিতেই বেশি আস্থা রাখেন মানুষ। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি মাথায় রাখলে ওই সমস্ত লগ্নির রিটার্ন যথেষ্ট না-ও হতে পারে। যদি আপনি মিউচুয়াল ফান্ড বা গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে টাকা ঢালেন, তা হলে আবার সংশ্লিষ্ট বাজার ওঠা-পড়ার ঝুঁকি বইতে হবে। কানাড়া এইচএসবিসি ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স লাইফ ইনশিওরেন্স কোম্পানির সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে ৩৫% সঞ্চয়য়েরই লক্ষ্য সন্তানের পড়াশোনা ও বিয়ে। সেখানে অবসর সময়ে চিকিৎসা বা অন্যান্য খরচের জন্য সঞ্চয় মাত্র ১২%। তাই অবসর জীবনের জন্য পরিকল্পনার সময়ে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন।

অনেকের আবার ধারণা থাকে, একটা কিছু ঠিক নিজের থেকেই হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, এ ভাবে ভাবলে কিন্তু কপালে কষ্ট আছে। আগাম পরিকল্পনা ও তা মেনে সঞ্চয় না-করলে শেষ বয়সে বেশ ভুগতে হবে আপনাকে।

হাতে অঢেল সময়। এখনই চিন্তা করে কী হবে? পেনশন বা যে কোনও ধরনের অবসরের সঞ্চয় নিয়ে এই মানসিকতা আমাদের অনেকেরই। মুশকিল হল, এ ভাবে চলতে থাকলে হঠাৎই দেখবেন চাকরি জীবনের অনেক দিন পেরিয়ে এসেছেন আপনি। অবসরের ঘণ্টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। তখন কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা জমানো শক্ত।

অনেকে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে লক্ষ্য স্থির করেন। তা এক দিক থেকে যেমন ভাল, তেমনই খারাপও। কারণ, এমন আকাশচুম্বী লক্ষ্যপূরণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তখন মাঝপথেই রণেভঙ্গ দিই আমরা।
তাই নিজের ক্ষমতা বুঝে লক্ষ্য স্থির করুন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর খতিয়ে দেখুন, ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। সেই অনুযায়ী পাল্টে নিন লগ্নির কৌশলও। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, এ ভাবে এগোনো আর আমাদের হয়ে ওঠে না। ফলে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে তা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।
তাই নিজের ক্ষমতা বুঝে লক্ষ্য স্থির করুন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর খতিয়ে দেখুন, ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। সেই অনুযায়ী পাল্টে নিন লগ্নির কৌশলও। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, এ ভাবে এগোনো আর আমাদের হয়ে ওঠে না। ফলে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে তা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

সুতরাং...
ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার গুরুত্ব বোঝা সত্ত্বেও কেন পেনশনের জন্য টাকা ঢালতে এত গড়িমসি, আশা করি, এতক্ষণে তা বুঝে ফেলেছি আমরা। জেনে রাখুন, সঞ্চয়ের যে-কোনও প্রকল্প চালু করার জন্য আগে নিজেদের এই খামতিগুলো জেনে ফেলা একান্ত জরুরি। না-হলে হয় অনির্দিষ্টকাল সেই পরিকল্পনা পিছোতেই থাকবে। আর নইলে চটজলদি চালু করেও কিছু দিন পরেই ভাটা পড়বে উৎসাহে।
সে কারণেই এখানে আগে নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়েছি আমরা। দেখেছি, কেন-কোথায়-কী ভাবে থমকে যায় পরিকল্পনা। কেন বয়স কম থাকতে অবসরের জন্য টাকা রাখতে আমাদের আপত্তি। দেখেছি, কেন অন্য অনেক সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখা সত্ত্বেও আলাদা করে পেনশনের জন্য সঞ্চয় করা জরুরি। আর এক বার বুঝে যখন ফেলেছি, তখন আর দেরি করার প্রশ্ন নেই। বুড়ো বয়সের লাঠি আগে থেকেই তৈরি রাখা ভাল।

পেনশন-পরামর্শ
পেনশন পেতে আগাম লগ্নি কেন জরুরি, শুধু তা জানলেই তো হবে না। একই সঙ্গে জানতে হবে, কী ভাবে তা করা যেতে পারে। আসুন, সেই আলোচনা সেরে ফেলি
৩০, ৪০ বা ৫০ বছর বয়স যা-ই হোক, প্রথমেই ভেবে নিন অবসরের পরে ঠিক কী মানের জীবনযাত্রা চাইছেন আপনি। বা আরও সহজ করে বললে, ঠিক কী ধরনের জীবনযাত্রায় আপনি অভ্যস্ত। একমাত্র তবেই আঁচ করতে পারবেন, তা বজায় রাখতে ভবিষ্যতের জন্য কত টাকা তুলে রাখতে হবে আপনাকে।

আপনি যে-ভাবে থাকেন, যেখানে চিকিৎসা করান, যে সব রেস্তোরাঁয় খান কিংবা যে-সব জায়গায় বেড়াতে যান, তাতে হয়তো মাসে হাজার চল্লিশেক টাকা আপনার লাগেই। সে ক্ষেত্রে হিসাব কষে দেখুন (প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন) মাসে অন্তত ওই চল্লিশ হাজার টাকা ‘সুদ’ হিসেবে পেতে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে আপনাকে। সেই অনুযায়ী সঞ্চয় করুন।

মাথায় রাখুন মূল্যবৃদ্ধির কথা। ধরুন, আপনার বয়স ৪০ বছর। অবসর ষাটে। সে ক্ষেত্রে এখন আপনার ৪০ হাজার টাকায় মাস চললেও ২০ বছর পরে কিন্তু তা চলবে না। কারণ, জিনিসপত্রের দাম তো বাড়বে। তাই দেখবেন, তখন এই একই জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজন হবে তার কয়েক গুণ বেশি টাকা। তাই ৪০ হাজারের জন্য সঞ্চয় মানে কিন্তু আসলে ৪০ হাজারের জন্যই নয়। বরং টাকা জমাতে হবে সেই নির্দিষ্ট অঙ্কের কথা মাথায় রেখে, যা আজ থেকে ২০ বছর পর ওই ৪০ হাজারের সমতুল্য হবে।

গোড়াতেই জেনে রাখুন রিটার্নও। অর্থাৎ, আপনি যে-সব জায়গায় টাকা রাখছেন, ভাল করে জেনে নিন তাদের রিটার্নের হার। সে ক্ষেত্রে মাথায় রাখুন করছাড়ের বিষয়টিও। দেখুন, সব কিছু মিলিয়ে কোথায় সব থেকে ভাল রিটার্ন পাচ্ছেন আপনি।

প্রত্যেকের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু আলাদা। তা যেমন কারও ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে, তেমনই নির্ভর করে বয়সের উপরেও। তাই ভেবে দেখুন, টাকা রাখার ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ঝুঁকি নিতে তৈরি আপনি। প্রয়োজনে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞের।
সব টাকা ডাকঘর বা ব্যাঙ্কে লগ্নি করলে, তা বেশি নিরাপদ থাকবে ঠিকই। কিন্তু তেমনই শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো রিটার্ন তাতে মিলবে না। আবার সব টাকা শেয়ার বাজারে ঢাললে, মোটা টাকা খুইয়ে বসতে পারেন। সেই কারণেই ঝুঁকি আর রিটানের্র সঠিক ভারসাম্য খুঁজে বার করা ভাল সঞ্চয়ের অন্যতম শর্ত।

একই ধরনের প্রকল্পে সব টাকা না-রেখে বরং তা রাখুন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ভাবুন, কোন সময়ে কোন প্রয়োজন দরজায় কড়া নাড়তে পারে। লগ্নির সিদ্ধান্ত নিন সেই অনুসারে। যাতে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ সব মেয়াদের জন্যই আপনার চাহিদা পূরণে কোনও সমস্যা না-হয়। তবে তা করতে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদের কথা কখনওই ভুলবেন না। আলাদা করে টাকা তুলে রাখতেই হবে অবসরোত্তর জীবনের জন্য।

দু’টি প্রকল্প আপনার লগ্নি-তালিকা থেকে যেন কোনও ভাবেই বাদ না-পড়ে।
টার্ম পলিসি,
স্বাস্থ্য বিমা। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীকে অন্তত মোটা অঙ্কের টার্ম পলিসি করে রাখতেই হবে। তাতে মেয়াদ শেষে ‘ম্যাচিওরিটি’ বাবদ কোনও টাকা হয়তো মিলবে না। কিন্তু তুলনায় অনেক কম প্রিমিয়ামে মোটা অঙ্কের কভারেজ পাওয়া যাবে। আর স্বাস্থ্য বিমা করা কেন জরুরি, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু এটুকু মনে রাখবেন, এই বিমার রক্ষাকবচ না-থাকলে, তা অনেক কষ্টের সঞ্চয়কেও নিমেষে সাফ করে দিতে পারে।

সঞ্চয়ের টোটকা
• অবসরের জন্য টাকা জমানো শুরু করুন কম বয়সে। পারলে চাকরি জীবনে প্রবেশের পরই। তাতে পঞ্চাশ পেরোনোর পর চাপ কমবে। সুযোগ পাবেন বার বার একই টাকা খাটিয়ে সম্পদ অনেক বেশি বাড়ানোরও।

• হাতে খুব বেশি নগদ টাকা না-রাখাই ভাল। কারণ, সে ক্ষেত্রে ওই টাকা ‘বাজে’ খরচের প্রবণতা বাড়ে।

• সামান্য প্যাঁচে পড়লেই জমানো টাকা ভাঙিয়ে ফেলার অভ্যাস ছাড়ুন। তার থেকে বরং কিছু দিনের জন্য খরচ কমান। দেখুন, সঞ্চয় না-ভেঙে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায় কি না।

• এমন কিছু প্রকল্প বাছুন, যাতে সেখানে লম্বা সময় ধরে লগ্নি করতে বাধ্য হন আপনি। দেখতে পারেন সেই সব প্রকল্পও, যেখানে আপনার বেতনের অ্যাকাউন্ট থেকে আপনা-আপনিই টাকা কেটে তা চলে যাবে লগ্নির খাতে। যেমন ধরুন, ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত রেকারিং ডিপোজিট।

• খেয়াল রাখুন, যেখানে টাকা রাখছেন, সেখানে করছাড়ের সুবিধা আছে কি না। কর ছাড়যুক্ত প্রকল্পগুলির দিকে নজর রাখুন।

লেখক প্রিন্সিপাল রিটায়ারমেন্ট অ্যাডভাইজর্সের বিজনেস হেড


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.