বিরোধী নেত্রী থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার বনগাঁয় এসে বনগাঁ মহকুমা হাসাপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এক দুর্ঘটনায় জখম তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের দেখতে সেখানে তিনি গিয়েওছিলেন। বিধানসভা ভোটের প্রচারে এখানে এসেও তাঁর বক্তব্যে বিষয় ছিল এই হাসপাতাল। ক্ষমতায় এসে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার যাতে উন্নতি হয় তা দেখবেন বলেও জানিয়েছিলেন। তারপর বিধানসভা ভোট গিয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতার বদল হয়েছে। আর তাই ক্ষমতায় এসে কথামতো বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতিতে পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন।
সেই উদ্যোগের পথ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনায় এসে বারাসত থেকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকের চিকিৎসা পরিষেবাকেন্দ্র (এসএনসিইউ)-র উদ্বোধন করলেন। পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেরও শিলান্যাস করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএনসিইউ- তে ৩০টি শয্যা থাকবে। আপাতত ২০টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। শিশু জন্মানোর পরে সাতদিন পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা করা হবে। মূলত শিশু জন্মানোর পরে তার ওজন কম হলে, শ্বাসকষ্ট হলে খোনে চিকিৎসা করা হবে। তবে উদ্বোধন হয়ে গেলেও এখনই অবশ্য এই এসএনসিইউ চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, “এখনই এসএনসিইউ চালু করতে না পারার কারণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সের অভাব। এসএনসিইউ-র জন্য পাঁচ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। তার মধ্যে পাওয়া গিয়েছে মাত্র দু’জন। তবে আশা করছি শীঘ্রই এই পরিষেবা চালু করা যাবে।” |
জায়েন্ট স্ক্রিনে বনগাঁয় উদ্বোধন দেখছে জনতা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। |
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন হাসপাতালে এসএনসিইউ পরিষেবা না থাকার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টি শিশুকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হত। এই পরিষেবা চালু হয়ে গেলে ওই সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। এসএনসিউ উদ্বোধন উপলক্ষে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিমা মণ্ডল। এ দিন হাসপাতালে আসা রোগীদের পরিবারের অনেকেই জানালেন, হাসপাতালের পরিষেবা আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। আগে পরিকাঠামো না থাকার কারণে বহু রোগীকেই অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হত। এখন সেই সমস্যা কিছুটা মিটেছে। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে। চালু হয়েছে মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় বহির্বিভাগ। ইএনটি বিভাগে মাইক্রো সার্জারি শুরু হয়েছে। শয্যাসংখ্যা ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিক গোপাল পোদ্দার বলেন, “এখন ২৪ ঘণ্টাই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।” তৈরি হয়েছে নতুন প্রসূতি বিভাগ। শুরু হয়েছে সুপার-সহ রক্ত পরীক্ষার নানা ব্যবস্থা। এ ছাড়া অপারেশন থিয়েটার সংস্কারের কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। এ জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েচেন বিশ্বজিৎবাবু।
অন্যান্য পরিষেবার ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও হাসপাতালে আয়াদের নিয়ে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুপার বলেন, “এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে দুর্গাপুজোর পরে এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |