গ্রামে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করতে পঞ্চায়েতের উপসমিতির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল মানবাজার পঞ্চায়েতের সেই উপসমিতি গঠনের সভা ত্যাগ করায় এলাকার উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
১৫ সদস্যের এই পঞ্চায়েতে সিপিএম একক ভাবে ৮টি আসন ও তৃণমূল ৭টি আসন পেয়েছে। কিন্তু প্রধান পদটি জনজাতি সংরক্ষিত। সিপিএমের জনজাতি সংরক্ষিত সদস্য না থাকায় প্রধান পদটি তাদের হাতছাড়া হয়। তৃণমূলের জয়ী সদস্যদের মধ্যে বাসন্তী মুর্মু জনজাতি সম্প্রদায়ের হওয়ায় প্রধান পদে শপথ নেন। তবে উপপ্রধান পদটি পান সিপিএমের নিতাই দত্ত।
সোমবার ছিল এই পঞ্চায়েতের উপসমিতি গঠনের সভা। অর্থ পরিকল্পনা, কৃষি ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ, শিশু ও নারী কল্যাণ, শিল্প পরিকাঠামো এবং শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য-- এই পাঁচটি উপসমিতি রয়েছে। ক্ষমতাবলে প্রধান অর্থ পরিকল্পনা সমিতির সঞ্চালক। বাকি চারটি উপসমিতির সঞ্চালক কে হবেন, তা নিয়ে সভার শুরুতেই তৃণমূল ও সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ শুরু হয়। গ্রাম সংসদ থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রথমে সংশ্লিষ্ট উপসমিতির কাছে যায়। সেখান থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরে শেষে প্রধানের কাছে আর্থিক বরাদ্দের জন্য জমা পড়ে।
পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, প্রধান পদটি পাওয়ার পরে ওই উপসমিতিগুলির সঞ্চালকের পদ পাওয়ার আশা করেছিলেন তৃণমূলের একাংশ। সভার শুরুতে সিপিএমের সদস্যেরা সঞ্চালক হিসেবে তাঁদের সদস্যদের নাম বলতেই বিরোধিতা শুরু করেন তৃণমূল সদস্যেরা। বিডিও-র প্রতিনিধি সমাধানের জন্য ভোটগ্রহণের প্রস্তাব দেন। তৃণমূলের তরফে গোপন ভোটগ্রহণের দাবি তোলা হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে ভোট নেওয়ার নিয়ম রয়েছে বলে সিপিএম দাবি করে। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “উপসমিতি গঠনের ক্ষেত্রে ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হলে তা প্রকাশ্যে হওয়ারই নিয়ম।” গোপনে ভোট নেওয়ার দাবি তুলে তৃণমূলের সদস্যেরা ওই সভা ত্যাগ করেন।
মানবাজার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের নিতাই দত্ত বলেন, “পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার সুবাদে চারটি উপসমিতিতে আমাদের দলের সদস্যদের সঞ্চালক হওয়ার কথা। তাঁদের নাম অনুমোদন করেন বিডিও। তৃণমূলের সদস্যেরা যা করলেন তা নিন্দনীয়।” মানবাজার পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দলনেত্রী মধুমিতা চক্রবর্তী বলেন, “উপসমিতি গঠনের সময় আমরা উপস্থিত সব সদস্যদের গোপন ভোট চেয়েছিলাম। তা না হওয়ায় আমরা ওই সভা বয়কট করেছি।” কিন্তু তাতেও তাঁরা কতটা সফল হতেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সিপিএমের ৮ পঞ্চায়েত সদস্য ও ২ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সভায় ছিলেন। তৃণমূলের পক্ষে ছিলেন ৭ পঞ্চায়েত সদস্য ও ১ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য।
উপসমিতির সঞ্চালকের পদ না পেয়ে এখন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ মন্তব্য করছেন, “সিপিএমের সঞ্চালকেরা যাই করুন, আমাদের দলের প্রধান সই না করলে অর্থ বরাদ্দ হবে কি করে?” প্রধান বাসন্তী মুর্মুও বলছেন, “তাড়াহুড়োর কিছু নেই। দেখে বুঝে এগতে হবে।” তবে বিডিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সব সদস্যের স্মরণে রাখা দরকার, কেউ নিয়মের ঊর্ধ্বে নয়। একই সঙ্গে তাঁর সংশয়, “দু’পক্ষ নমনীয় না হলে আগামী পাঁচ বছরে এই পঞ্চায়েতে কাজ হওয়া মুশকিল।” যদিও তৃণমূলের মানবাজার ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো ও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ চৌধুরী কার্যত একই সুরে দাবি করছেন, পরস্পর আলাপ আলোচনা করেই এলাকায় উন্নয়নের কাজ করবেন। অপেক্ষায় মানবাজার। |