পরিকল্পনা নেই, নিষ্প্রভ বেরা উৎসব
সুপ্রাচীন প্রথা মেনে প্রতি বছর বেরা উৎসব হয় লালবাগে। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষ ছাড়া এই আলোর উৎসবের কেউ খোঁজ রাখেন না। কিন্তু গঙ্গার উপরে ভাদ্রের রাতে এই উৎসবের ঠিক মতো প্রচার হলে তা লালবাগের নয়, রাজ্যের ক্ষেত্রেই পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারত।
দুর্গা পুজো ও ঈদের মুখে ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রকমারি বাজির আলোয় রঙিন হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। ভাগীরথীর জলে ভেসে যায় কলার ভেলানবাবি আমলের এই উৎসব উপলক্ষে একদা সুবে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদকেই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে রমণীয় ভাবে পরিবেশন করা যেত বলে মনে করেন জেলার ব্যবসায়ীরা থেকে সাধারণ মানুষ।
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য জানান, সরকারের পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা রয়েছে বলে দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে গোয়া। গোয়ার সৈকত উৎসবে অংশ নেয় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। পুরীর সৈকত উৎসবকে ঘিরেও পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা রয়েছে। তাঁর কথায়, “কিন্তু আলোর উৎসব বেরা ভাসানকে ঘিরে কারও কোনও ভাবনা নেই। অথচ এই উৎসবকে ঠিক মতো তুলে ধরতে পারলে জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হতে পারত।” বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায়ও এমনই উদাহরণ দেন। তিনি জানান, সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ বেড়াতে গিয়ে গ্বালিয়রে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এ ইতিহাসের ঝাঁসির রানির সঙ্গে পুরাণের রানি মৃগনয়নীর গল্পের সংমিশ্রন ঘটিয়ে দর্শকদের আকর্ষণ করা হচ্ছে। খুবই পেশাদারি ঢংয়ে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের গলা। সোমেশবাবু বলেন, “বেরা উৎসবেও একই সঙ্গে ইতিহাসের উপাদানের সঙ্গে মিশে রয়েছে পৌরাণিক গল্পকথা। হাজারদুয়ারি বা বেরা উৎসবকে ঘিরেও তাই অনায়াসে আকর্ষক আলো-কথার কাহিনি তৈরি করে ফেলা যায়। তাতে উৎসবের মেজাজ অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারত। কিন্তু পরিকল্পনায় বেরা উৎসবের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে।”
নবাবি আমলের স্মৃতি
মুর্শিদকুলি খাঁর (১৭০৪-১৭২৭ রাজত্বকাল) আমলে উৎসবের শুরু। সে আমলে সারা বছরের সংগৃহীত করের টাকা নদী পথে যেত দিল্লির সুলতানের কাছে। সেই যাত্রার সূচনার সময়ে এই উৎসব হত। উর্দুবাজার ঘাটে দাঁড়ানো নৌকায় (পাটোয়ালা) বিভিন্ন মালপত্র-সামগ্রী রাখা থাকত আর রাজস্বের সঙ্গে নবাবের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা থাকতেন বজরায়। মুর্শিদকুলি খাঁ ‘মহলসরায়’ ভবন থেকে শোভাযাত্রা করে সেই ঘাটে পৌঁছাতেন। ১৫টি মোহর ও ১৫টি সোনার ‘চিরাগ’ সোনার থালায় সাজিয়ে বজরার প্রধানের হাতে তুলে দিয়ে যাত্রার সূচনা করতেন তিনি। ওই বজরার যাত্রা শুরুর মুহূর্তে তোপ দাগা হত।
জুডিসিয়ালের দফতরের অধীনে মুর্শিদাবাদ এস্টেটই প্রতি বছর বেরা উৎসব উদ্যাপন করে। হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “জুডিসিয়াল দফতরের সঙ্গে পর্যটন দফতরের বোঝাপড়া থাকলে যৌথ ভাবে বেরা উৎসব উদ্যাপন হতে পারত। সরকারের কোথাও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।” তাঁর পরামর্শ, পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হলে সরকারকে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলিও এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু তা-ও হচ্ছে না।
সরকারের পরিকল্পনা অভাব রয়েছে, তার বড় উদাহরণ বেরা উৎসবের দু’দিন আগে সোমবার লালবাগ মহকুমাশাসক কার্যালয়ে ওই সংক্রান্ত বৈঠক। ওই বৈঠকে মহকুমা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তা থেকে পুরসভা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ এস্টেট ম্যানেজার হাজির ছিলেন। সে কারণে ইমামবাড়া থেকে ওয়াসিফ মঞ্জিল পর্যন্ত রাস্তার কোথায় সিসিটিভি বসানো হবে, তা স্থির করা যায়নি।
লালবাগবাসী ইতিহাস গবেষক প্রবীণ রামপ্রসাদ পালও জানান, বেরা উৎসবকে সামনে রেখে তিন দিনের পর্যটন উৎসব করা যেত। সরকারি বিভিন্ন দফতর হস্তশিল্প থেকে রেশম শিল্পের স্টল খুলতে পারত। মুর্শিদাবাদের লোকশিল্প পরিবেশন করা যেত। তাঁর কথায়, “সরকারের পর্যটন দফতরের দায়িত্ব নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা দরকার। কারণ এই ধরনের উৎসব ভারতবর্ষের আর কোথাও রয়েছে কিনা আমার জানা নেই।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেরা উৎসবের এ বারের বাজেট ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকা। গত বার অবশ্য ছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর হাজির থাকার কথা। এ ছাড়াও উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা ও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসার কথা রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.