|
|
|
|
জলবিভাজিকা প্রকল্পের প্রাথমিক কাজটুকুই হয়নি পশ্চিমে |
প্রশাসনের গড়িমসিতে বরাদ্দ পড়ে |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার শেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (আইডব্ল্যুএমপি) কাজ চলছে অতি মন্থর গতিতে। প্রকল্পের ন্যূনতম প্রাথমিক কাজটুকুও প্রশাসন শেষ করতে না-পারায় প্রথম ধাপে বরাদ্দ প্রায় ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ কোটিরও বেশি পড়ে। অথচ, এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি রূপায়িত হলে, বৃহত্ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হত।
তা সত্ত্বেও কেন এত শ্লথ গতি?
জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর কৌশিক পাল বলেন, “এখনও প্রকল্পের সম্পূর্ণ টাকা আসেনি। প্রাথমিক কাজের জন্য যে টাকা এসেছে, তা দিয়ে কাজ চলছে।” কৃষি ও ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রশাসন) সুকুমার কিস্কু বলেন, “দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
প্রশাসনিক কর্তারা মুখে যা-ই বলুন না কেন, বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে এই প্রকল্প মঞ্জুর হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৬টি প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছিল। যার জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি ৯ কোটির কিছু বেশি টাকা দেবে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে পরপর দু’টি বৈঠকও হয়। ওই বছরেরই জুন মাসে রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কোন জেলার জন্য কতগুলি প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৬টি প্রকল্প মঞ্জুর হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে প্রথম ধাপে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ৫ কোটি ৭১ লক্ষ পেয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ব্যাঙ্কের সুদ-সহ টাকা দাঁড়ায় ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ। যার মধ্যে খরচ করতে পেরেছে মাত্র ১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা! ৪ কোটি টাকারও বেশি পড়ে রয়েছে। ৫ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ করার কথা। তিন বছর হতে চললেও মূল প্রকল্পের কাজ শুরুই করতে পারেনি প্রশাসন। এমনকী প্রাথমিক কাজটুকুও সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ করা যায়নি! |
|
এই দশা কবে ঘুচবে? মেদিনীপুর সদর ব্লকের জামতলায় ফাইল চিত্র। |
এই প্রকল্পে কী রয়েছে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বৃহত্ জলবিভাজিকা তৈরি করা হবে। যার মধ্যে থাকবে একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল বিভাজিকা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক একটি প্রকল্পে কমপক্ষে ১৮টি গ্রাম রয়েছে। একটি প্রকল্পে সর্বাধিক গ্রাম রয়েছে ৪২টি। প্রতিটি গ্রামে গিয়ে খতিয়ে দেখা হবে, সেই গ্রামে উন্নয়ন করতে হলে কী করা উচিত। গ্রামের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁদের মতামত নিয়েই তৈরি করতে হবে সমীক্ষা রিপোর্ট। কৃষির জন্য সেচের প্রয়োজন হলে সেচের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, গ্রামবাসীরা ঝুড়ি তৈরি করলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে হবে। সবই অবশ্য করা হবে স্ব-সহায়ক দলের মাধ্যমে। সমীক্ষা ও অন্যান্য কাজের জন্য ৪ জন বেকার ও শিক্ষিত স্থানীয় যুবক-যুবতীকে নিয়োগ করতে হবে। তাঁরা সমীক্ষা করবেন এবং গ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় সাধন করবেন। গ্রামের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে ‘এন্ট্রি পয়েন্ট অ্যাকটিভিটি’ নামে কিছু প্রাথমিক কাজ করার জন্যও অর্থ রয়েছে। যে টাকায় গ্রামের খারাপ রাস্তা সংস্কার করা যায়, ভেঙে পড়া কালভার্ট নতুন ভাবে করে দেওয়া বা পানীয় জলের সমস্যা থাকলে নলকূপ বসানো যায়। এই কাজটুকুই এখনও করতে পারেনি প্রশাসন।
একেই এই প্রকল্পের গতি শ্লথ, তার উপরে আরও ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে জেলায়। এই পরিস্থিতিতে কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে একটি বৈঠকেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে রাজ্যের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। দ্রুত গতিতে কাজ সম্পূর্ণ করার রূপরেখা তৈরি করবেন তাঁরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টিই হবে বিনপুর-২ ব্লক অর্থাত্ বেলপাহাড়িতে। এছাড়াও ঝাড়গ্রামে ২টি, নয়াগ্রামে ২টি, সাঁকরাইল, জামবনি, শালবনি, গড়বেতা-১ ও ২, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর-১ ব্লকে ১টি করে। ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ছোট ছোট ৫৯টি জলবিভাজিকা থাকবে। যার আয়তন ৮৯ হাজার ৩৩৪ হেক্টর। এক একটি প্রকল্পে ন্যূনতম চার থেকে সাড়ে সাত কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয়েছে। আর নতুন ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি হবে বিনপুর-২, ২টি শালবনি ও গড়বেতা-১ ও ৩ ব্লকে ১টি করে। যার জন্য ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পিছিয়ে পড়া এলাকা হওয়ায় ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান, ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ডের মতো নানা তহবিল থেকে অতিরিক্ত অর্থ পায়। এ ছাড়াও রাজ্যের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনাতেও বরাদ্দ পায় জেলা। তারই সঙ্গে জলবিভাজিকা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকার প্রতিটি গ্রামের যে আমূল পরিবর্তন ঘটবে তা আর বলার অবকাশ থাকে না। তবে কাজের মন্থর গতি দেখে প্রশ্ন থেকেই যায়, আদৌ সময়ে প্রকল্প রূপায়ণ সম্ভব তো? |
পুরনো খবর: জলবিভাজিকা প্রকল্পের পরিদর্শনে এসে ক্ষুব্ধ সচিব |
|
|
|
|
|