|
|
|
|
সূর্যকান্তর সভায় গরহাজির দীপক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিধানসভা নির্বাচনের পর পঞ্চায়েত ভোট। বামফ্রন্টের সাংগঠনিক ভিতটা আলগা হচ্ছে ক্রমশ। কঠিন এই পরিস্থিতিতেও একে অপরকে এড়িয়ে চলছেন সূর্যকান্ত মিশ্র ও দীপক সরকার। মঙ্গলবার কৃষকসভার এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন সূর্যকান্তবাবু। ওই কর্মসূচি হয় শহরের কৃষক ভবনে। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস। এদিন অফিসে ছিলেন দীপকবাবু। তা-ও ওই কর্মসূচিতে যাননি। অন্য দিকে, সূর্যকান্তবাবুও পার্টি অফিসে আসেননি। ফলে, সংগঠন পুনর্গঠনের ভবিষ্যত্ কী, তা নিয়ে সিপিএমের নিচুতলায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। দুই নেতাকে পাশাপাশি দলের কর্মসূচিতে শেষ দেখা গিয়েছে কৃষকসভার ৩৬তম জেলা সম্মেলনে, ২০১২ সালের ২৬ অগস্ট। ত-ও বেশিক্ষণ না। সভামঞ্চে সূর্যবাবু এসে পৌঁছনোর কিছু পরেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান দীপকবাবু। এ দিন বোঝা গেল ‘বিরোধ’ এখনও চলছে।
মঙ্গলবার মেদিনীপুরে কৃষকসভার জেলা কাউন্সিলের বর্ধিত সভা ছিল। সংগঠন সূত্রে খবর, জেলা সম্পাদক হিসেবে সভার আমন্ত্রণ গিয়েছিল দীপকবাবুর কাছে। তবে তিনি তা এড়িয়ে যান। কেন? দীপকবাবুর বক্তব্য, “আমাদের দলটা তো আর তৃণমূল নয়, যে কেউ যেখানে যেতে পারে। আমি পার্টির জেলা সম্পাদক। ট্রেড ইউনিয়ন করি। এদিন কৃষকসভার কর্মসূচি ছিল।” |
|
বৈঠকের পরে সূর্যকান্ত মিশ্র।—নিজস্ব চিত্র। |
নেতারা মুখ না খুললেও দলের খবর, এ ‘বিরোধ’ আজকের নয়। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে সূর্যকান্ত মিশ্র, তরুণ রায়, লক্ষ্মণ শেঠদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল দীপকবাবুর। পরে পরিস্থিতি বদলায়। জেলা সিপিএম দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে চলে আসেন দীপক-অনুগামী বলে পরিচিতরা। অন্যদিকে, সূর্য-অনুগামী বলে পরিচিতরা। ’৯৫ সালের মেদিনীপুর সম্মেলনে দীপকবাবুকেই সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সেই শুরু। তারপর থেকে দীপকবাবুই সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, জেলায় নিজের ‘নিয়ন্ত্রণ’ কায়েম রাখতে এক সময় সূর্যকান্তবাবুকে মন্ত্রী করে রাজ্যে পাঠাতে দীপকবাবু ‘তদারকি’ করেন। দীপকবাবু মনে করেছিলেন, নারায়ণগড়ের বিধায়ককে মন্ত্রী করে রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া গেলে জেলায় ‘শেষ’ কথা তিনিই বলবেন। মন্ত্রী হয়ে সূর্যবাবু রাজ্য-রাজনীতিকে পা
রাখার পর জেলা রাজনীতিতে হয়েছেও ঠিক তাই। যত দিন গেছে, ততই ‘একঘরে’ হয়েছেন সূর্য-শিবিরের অনুগামী বলে পরিচিতরা।
তবে, রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সিপিএমের অন্দরের ছবিটাও বদলাচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, আগামী সম্মেলনের আগেই জেলা সম্পাদকের পদ ছেড়ে দিতে হতে পারে দীপকবাবুকে। সম্পাদকের পদে আসতে পারে নতুন মুখ। দৌড়ে রয়েছেন হরেকৃষ্ণ সামন্ত, তরুণ রায়। দীপক-অনুগামীদের অবশ্য দাবি, গত সম্মেলনের আগেই সরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন দীপকবাবু। অধিকাংশ নেতা তা চাননি।
সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যেই মঙ্গলবার মেদিনীপুরে কৃষকসভার জেলা কাউন্সিলের বর্ধিত সভা হয়। সকাল ১০টা নাগাদ সভা শুরু হয়। চলে ২টো পর্যন্ত। ব্লক-ভিত্তিক রিপোর্ট পেশের পর টানা প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যকান্তবাবুর মতে, “মানুষ তৃণমূলের উপর বিরক্ত হচ্ছে। তবে যাঁরা সরে গিয়েছিলেন, তাঁরা আপনা-আপনি সিপিএমের সঙ্গে আসবেন না। বোঝাতে হবে। মানুষকে যদি বন্ধু করতে পারা যায়, তবেই বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব।” |
|
|
|
|
|