এ বারেও বর্ষার আগে নিকাশি নালার সংস্কার হয়নি। বারেবারে জলমগ্ন হয়েছে এলাকা। বেড়েছে দুর্ভোগ। তাই দফায় দফায় নিম্নচাপ আর বৃষ্টি কবে পুরোপুরি বিদায় নেবে এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকার বাসিন্দারা। বহু জায়গায় আগাছা জন্মে বেহাল হয়ে পড়া নিকাশি ব্যবস্থা কবে পুরোপুরি সংস্কার করা হবে তা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
তহবিলের সমস্যার কথা জানিয়ে পুরপ্রধান তৃণমূলের গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “বর্ষার মধ্যেই নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।”
কয়েকশো বছরের পুরনো হুগলির এই জেলা সদর এক সময়ে পর্তুগিজদের বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। গঙ্গার তীর ঘেঁষা এই শহরে এক সময়ে মাটির নীচ দিয়ে নিকাশি-নালা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে গঙ্গায় মিশত। ফলে, নিকাশি ব্যবস্থার কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু বহু বছর ধরেই সেই সব নালা আর ব্যবহার হয় না। পুরসভার উদ্যোগে রাস্তার ধার দিয়ে নালা তৈরি হয়েছে। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ওই নালাগুলির উপরেই নির্ভর করে। কিন্তু ৩০টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকার নালাতেই সংস্কারের অভাবে আগাছা জন্মে গিয়েছে। ফলে, দূষিত জল বেরিয়ে যেতে বাধা পাচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হচ্ছে এলাকা। জল ঢুকছে বাড়িতেও। গত কয়েক বছর ধরে এই দুর্ভোগই পোহাতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের।
প্রতি বার অল্প বর্ষাতেই যে সব এলাকা জলমগ্ন হয়, তার মধ্যে রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিলিটারি কলোনি, হেমন্ত বসু কলোনি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বলাগড় রোড, ব্যান্ডেল স্টেশন রোডের একাংশ, সুভাষনগর, ৯ এবং ১০ নং ওয়ার্ডের পাঙ্কাটুলি মোড়, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহামায়া কলোনি, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপগড়, অরবিন্দ পল্লি, ১ নং ওয়াডের্র্র ঝাঁপপুকুর এলাকা এবং আইটিআই কলেজ চত্বর। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি নালা পাকা করা এবং সংস্কারের আশ্বাস দেয়। কিন্তু ভোট মিটে গেলে সেই আশ্বাস আর পূরণ হয় না।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বলাগড় এলাকার বাসিন্দা বেণুলাল দে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না হওয়ায় বর্জ্য পদার্থ এবং ময়লা জমে এলাকার নিকাশি-নালাগুলির মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রতি বারই বর্ষায় নোংরা জল নালা উপচে ঘরে ঢুকে পড়ে। বর্ষা না থামলে সেই জল সহজে নামে না। ওই দূষিত জলের মধ্যে দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।” ১ নং ওয়ার্ডের ঝাঁপপুকুরের বাসিন্দা মলয় মজুমদার বলেন, “বর্ষার আগে পুরসভা কেন নালাগুলি সংস্কারে উদ্যোগী হয় না কে জানে! এলাকার অনেক নালাই এখনও কাঁচা রয়েছে। সেগুলি পাকা করাও জরুরি।”
পুরসভা সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যে কিছু নালা পাকা করার কাজ শেষ হয়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইঞ্জিনিয়ার বাগানে নতুন গভীর নালা তৈরি করা হয়েছে। তার ফলে, ওই এলাকা এ বার বর্ষা-বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়নি।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা কমল দাস অবশ্য সার্বিক ভাবে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডকেই দুষেছেন। তিনি বলেন, “২০১০ সালে পুরবোর্ডে আমরা ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে (জেএনএনইউআরএম) নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেই টাকার নালা সংস্কার এবং গঙ্গার সঙ্গে সংযোগ গড়ার ৭০ শতাংশ কাজ এগিয়েছিল। তার পরে পুরবোর্ডের ক্ষমতা বদল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে কাজও বন্ধ হয়ে যায়।”
বর্তমান পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, বাম আমলে যে সব নালা তৈরি হয়, তার মধ্যে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় নিকাশি সমস্যা দূর হয়নি। একই সঙ্গে তিনি এও স্বীকার করেছেন, “কিছু নিকাশি নালার কাজ করার সময়ে বরাদ্দ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা শেষ হয়ে যায়। ফলে, নতুন নালা তৈরির কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।” |