প্রবন্ধ ৩...
সমাজের অন্দর থেকে
বেগম রোকেয়া সেই কবে ডাক দিয়েছিলেন, ‘আর ঘুমাইও না; এখন আর রাত্রি নাই, এখন সুব্হে সাদেক মোয়াজ্জিন আজান দিতেছেন।’ এই আহ্বান ছিল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের নাগরিক অধিকার বুঝে নেওয়ার ডাক। রোকেয়া বিশ্বাস করতেন, সমস্ত ব্যাধির মহৌষধ হল প্রকৃত আধুনিক শিক্ষা। সে আহ্বানের পর কেটেছে প্রায় একটা শতাব্দী। কিন্তু এই রাজ্যের মুসলমান সম্প্রদায় রোকেয়ার দেখানো পথে কতটা পাড়ি দিয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহের নিরসন এখনও হয়নি। এই ধারণাই বহুলপ্রচলিত যে, রাজ্যের মুসলিম সমাজ এখনও শিক্ষা তথা উন্নয়নের পথে পা বাড়াতে প্রস্তুত নয়। অথচ সরকারি স্তরে, অন্তত খাতায়-কলমে চেষ্টার কোনও খামতি নেই। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর জন্য, বিদ্যালয় স্তর থেকে পিএইচ ডি পর্যন্ত আছে নানা রকম স্টাইপেন্ড ও স্কলারশিপ। আছে ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর এবং মেধাবী ছাত্রদের মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য বিশেষ ঋণ। সরকারি প্রচেষ্টার সাফল্য নিয়ে সমালোচনা চলতেই পারে।
কিন্তু এর বাইরেও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সেই প্রচেষ্টা কারা করবেন এবং কী ভাবে করবেন?
এই প্রসঙ্গে উঠে আসে মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা, যেগুলি রাজ্যের শিক্ষামঞ্চে মুসলিমদের পিছিয়ে পড়া অবস্থান বদলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কয়েকটি এই দশকে প্রতিষ্ঠিত হলেও অধিকাংশই বিগত শতাব্দীর শেষের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। তাদের প্রচেষ্টার ফলাফল মুসলমান সমাজ আজ লাভ করছে। এই সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে অবশ্যই উল্লেখ্য হাওড়ার খলতপুরের আল-আমীন মিশন। প্রায় সাতাশ বছর আগে চালু হয় এই বিদ্যালয়। ১৩টি জেলায় ৩২টি ক্যাম্পাসে আল-আমীন মিশনের মোট আবাসিক ছাত্রছাত্রী এখন ৬৬১৯ জন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও এই বিদ্যালয়ের জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষার সাফল্যও উল্লেখযোগ্য। এর পরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সফল হয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আল-আমীন সহ এই সমস্ত বিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। প্রথমত, বিদ্যালয়গুলির বেশির ভাগ হল আবাসিক। ফলে নিয়মনীতির নিগড়ে ছাত্রদের তৈরি করা কিছুটা সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, স্কুলগুলি ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত মফস্সল এবং ছোট শহরগুলিতেও। ছোট শহর এবং গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিম পরিবার তাই অনায়াসে স্কুলগুলির দিকে হাত বাড়াতে পারে। তৃতীয়ত, এই সমস্ত স্কুল রাজ্য সরকার অনুমোদিত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাঠক্রম অনুসরণ করে যা কিনা দরিদ্র, সাধারণ মুসলমান পরিবার চেনা ও সহজ বলে মনে করে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলিতে জয়েন্ট এনট্রান্সের মতো পরীক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মতো স্বপ্নের স্বাদও পায়। চতুর্থত, এই সব স্কুলে মুসলমানি আদবকায়দা এবং ইসলামি ধর্মনীতিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে ধর্মপ্রাণ অভিভাবক এই ভেবে আশ্বস্ত হন যে, তাঁদের সন্তান ধর্মাচরণ করতেও শিখবে।
কিন্তু যে বৈশিষ্ট্যটি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রকৃত স্বাতন্ত্র্য দেয়, সেটি তাদের অর্থনৈতিক পরিচালন ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত। প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার সিংহভাগ খরচ আসে মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনের ধর্মীয় দান থেকে। এই রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে থেকে পাঠানো জাকাত ও ফিতরা-র অর্থ কাজে লাগানো হয় স্কুল বিল্ডিং বা হস্টেল তৈরিতে, স্কলারশিপ দেওয়ার কাজে এবং বিদ্যালয়গুলির দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য। এই সব তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষাক্ষেত্রে জাগরণের এই আভাস আক্ষরিক অর্থেই মুসলমান সমাজের অভ্যন্তর থেকে উত্‌সারিত হয়েছে।
তাই আশা জাগে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অঙ্গনে জন্ম নেবে নতুন সময়। সুবেহ্ সাদেক এখনও স্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান না হলেও পুব আকাশে আলোর দিশা দেখা যাচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.