সম্পাদকীয় ২...
মহাপুরুষ
গুরুর মাধ্যমেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য উপলব্ধি করার বিধান বিশ্বের বহু ধর্মেই আছে। হিন্দু ধর্মে তো গুরুকে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের সমতুল বলিয়া গণ্য করা হইয়াছে। কিন্তু সেই আদর্শ গুরুর ধারণাটি, অন্য অনেক ধারণার মতোই, ভয়ানক ভাবে বাস্তবলাঞ্ছিত। গুরু-আচার্য-ব্রহ্মচারী-বাবারা যদি তত কিছু আধ্যাত্মিক ব্যক্তি না হন, যদি হন মতলববাজ, কুচক্রী, স্বার্থপর, তবে বিশ্বাসী শিষ্যকুল শিকার হইবে, ইহা অস্বাভাবিক নহে। আসারাম বাপুর কাহিনি এই প্রশ্নগুলি নূতন করিয়া তুলিয়াছে। আরও অনেক ক্ষেত্রেই এমন অভিযোগ শোনা গিয়াছে, যাইতেছে, আশঙ্কা হয়, যাইবেও। ধর্ষণ একমাত্র অভিযোগ নয়, হত্যাকাণ্ড, সম্পত্তি লুণ্ঠনের অভিযোগও অগণন। সংশয় হয় যে, বহু ক্ষেত্রেই যথাযথ তদন্ত হয় না, কেননা প্রভাবশালীরা এই সকল মহাপুরুষের পৃষ্ঠপোষকতা করিয়া থাকেন। গণমাধ্যমের শ্যেনচক্ষু ইদানীং তাঁহাদের কেলেংকারি ও অপকর্ম ধামা-চাপা দিবার চক্রান্ত ফাঁস করিয়া দেওয়ায় মাঝে-মধ্যে দুই-একটি অভিযোগের তদন্ত হয়। যেমন আসারাম বাপুর ক্ষেত্রে হইতেছে।
বিরিঞ্চিবাবারা এই দেশে নবাগত নহেন। তাঁহাদের অনেককে হাজতবাসও করিতে হইয়াছে। তথাপি এই ধরনের গুরুদের প্রতি ভক্তদের আস্থা সম্পূর্ণত টুটিয়া যায় নাই।তাঁহাদের আশ্রমে এখনও ভক্তদের ভিড় লাগিয়া থাকে, ধনীরা ভেট লইয়া হাজির হন। মধ্য যুগের ইতিহাসে কবির, তুকারাম, দাদূ, রজ্জব, নামদেব কিংবা রুইদাসের মতো যে সব আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন, তাঁহাদের কোনও আশ্রম ছিল না, শত শত কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি কিংবা ব্যাংক-আমানতও ছিল না, ছিল না বিলাসব্যসনের, আরাম-আয়েশের জীবন। রাজপুরুষরা তাঁহাদের দরজায় ধর্না দিতেন না। সাধারণ মানুষের সাহচর্যেই তাঁহাদের দিন গুজরান হইত। সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন আর সমুচ্চ আধ্যাত্মিক চিন্তাই ছিল তাঁহাদের সম্বল। বর্তমান যুগটি মহাত্মা গাঁধীর ভাষায় ‘অবিশ্বাস’-এর, কিংবা বিশ্বাসহীনতার। এ যুগে যাঁহারা ‘মানুষ হিসাবেই অসম্পূর্ণ’, তেমন ব্যক্তিরাই ভাগবত্‌ পূর্ণতার দাবি লইয়া শিষ্য-ভক্তদের সম্মুখে হাজির। গাঁধী এই সব অসম্পূর্ণ মানুষদের গুরুত্বের দাবি সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দিয়াছিলেন। সদ্গুরু পাওয়া যে ইদানীং দুর্লভ, তাহা উল্লেখ করিয়া তাঁহার হুঁশিয়ারি ছিল: গলায় ভারী পাথর বাঁধিয়া কি কেহ সাঁতার শিখিতে পারে? এই সতর্কবার্তা দেশবাসী গ্রাহ্য করে নাই। পরিণাম চোখের সামনে।
গুরু-বাবা-আচার্যে দেশ ভরিয়া গিয়াছে। তাঁহাদেরই সাক্ষাত্‌ ঈশ্বর গণ্য করিয়া অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভক্তকুল এই সব অসম্পূর্ণ মানুষদের সামনে প্রণিপাত করেন। তাহাদের বিশ্বাসের সুযোগ লইয়া গুরুদের একাংশ নিজেদের যাবতীয় জাগতিক বাসনা-কামনা-লোভ-লালসা তৃপ্ত করিয়া লন। পুলিশ প্রশাসন তাঁহাদের সহসা ঘাঁটায় না। রাজনৈতিক দলের নেতারা ভক্তকুলের ভোট হারাইবার শঙ্কায় নীরব থাকেন, কেহ কেহ নিত্য গুরুদের আশ্রমে যাতায়াতও করেন। অনেক আশ্রমই এই প্রক্রিয়ায় অনাচারের আখড়া হইয়া উঠিয়াছে। দরিদ্র, অসহায়, ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষেরই গুরুর প্রয়োজন বেশি। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিপর্যয় কিংবা তাহার আশঙ্কা অনেককে গুরুদের চরণে শরণ লইতে প্ররোচিত করে। মিথ্যাচার, প্রতারণা, ভণ্ডামির মুখোশে আবৃত শ্বেতশুভ্র কিংবা রক্তাম্বরধারী গুরু-বাবারা স্তোকবাক্য শুনাইয়া প্রায়শ তাঁহাদের সর্বস্ব হরণ করিয়া লন। ধর্ম নির্যাতিতের দীর্ঘশ্বাস হইয়াই থাকিয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.