|
|
|
|
দিল্লি গণধর্ষণ রায় |
ছেলে নির্দোষ, কৌঁসুলির পা জড়িয়ে মায়ের কান্না
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি ও ঔরঙ্গাবাদ |
ভরা আদালতে রায় পড়ে শুনিয়েছেন বিচারক যোগেশ খন্না। আইনজীবী ভি কে আনন্দ আদালত কক্ষের বাইরে আসতেই তাঁর দু’টি পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন এক মহিলা। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। ও তো বাস চালাচ্ছিল। জানতই না ভিতরে
কী ঘটছে।’’
ইনি দিল্লি গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত মুকেশ সিংহের মা।
ন’মাস ধরে এই দিনটা অপেক্ষায় ছিলেন আর এক মহিলাও। তিনি নির্ভয়ার মা। বললেন, “ন’মাস অপেক্ষা করেছি। খালি ভেবেছি মেয়েটা কত কষ্ট পেয়ে মারা গেল। অথচ নাবালক বলে একটা ছেলে মাত্র তিন বছরের শাস্তি পেল? এর পর আমি ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনও শাস্তির কথা ভাবতে পারছি না।”
মায়ের ইঙ্গিত ১৭ বছরের ছেলেটির দিকে। যে ক’দিন আগেই দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের রায়ে মাত্র তিন বছর সংশোধনাগারে থাকার শাস্তি পেয়েছে। ১৯ বছরের পবন গুপ্ত কিন্তু ছাড় পাচ্ছে না। তার বাবা হিরালাল গুপ্ত এদিন হতাশ গলায় বলেন, কুসঙ্গে পড়ার খেসারত দিচ্ছে ছেলেটা। একটাই প্রার্থনা করছি, যেন প্রাণদণ্ড না হয়!”
বিনয় শর্মার দুই বোন আজ স্কুলে যায়নি। বস্তির ছোট্ট ঘরটায় বসেই ঠায় টিভির দিকে চোখ রেখেছিল। একটা কাঠের বাক্সের উপরে বসেছিলেন মা চম্পা দেবী। বলছিলেন, ভগবানই ভরসা। রায় ঘোষণার পরে জানলেন, ভরসা শেষ। বিনয়ে ছোট বোন বলে উঠল, “টিভিতে দাদার ছবি দেখিয়েই চলেছে। ওর তো শাস্তি হচ্ছেই! এ বার ওকে একা থাকতে দেওয়া হোক না!” |
ছেলে দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষী। আদালতে দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর মায়ের কান্না। ছবি: রয়টার্স |
২৮ বছরের অক্ষয় ঠাকুরের বাড়ি বিহারের ঔরঙ্গাবাদে। একচালা বাড়ি। বিদ্যুৎ নেই। জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের কাছ থেকেই ছেলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কথা জানতে পারেন মা মালতী দেবী। তার পর থেকেই কেঁদে চলেছেন তিনি। “আমি জানি ও দোষ করেনি। ওর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা এনেছে পুলিশ। আমাদের যা আছে সব নিয়ে নাও তোমরা। কিন্তু আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও”, কাতর আর্জি মালতীর।
ঔরঙ্গাবাদ থেকেই অক্ষয়কে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। তিন ভাইয়ের মধ্যে অক্ষয়ই ছোট। বাড়িতে স্ত্রী ও দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। দুই দাদার সঙ্গে অক্ষয় দিল্লি গিয়েছিল চাকরির খোঁজে। সেখানে বাস পরিষ্কারের কাজ করত। বাবা সরজু সিংহ পেশায় দিনমজুর। অনেক কষ্টে তিন ছেলেকে মানুষ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ঘটনার পরে দেশের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। রায় শুনে হতাশ সরজু সিংহ উঠে ঘরের ভিতরে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “গত আট-নয় মাস যে কী ভাবে কেটেছে তা বলার নয়। আমি আর কিছু ভাবতে চাই না। কাল যা হওয়ার হবে। ভগবান সব দেখছেন।” প্রতিবেশীদের বেশির ভাগই এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, অক্ষয় এমন কাজ করতে পারে। অক্ষয়ের ছেলেবেলার বন্ধু সন্তোষ মিশ্র বললেন, “অক্ষয় চিরকালই শান্ত স্বভাবের। কখনও কোনও খারাপ কাজে
জড়ায়নি। এ যে কী হয়ে গেল? দিল্লিতে গিয়ে নিশ্চয়ই খারাপ লোকের
খপ্পরে পড়েছিল।”
সন্তোষের মতোই গোটা ঘটনাটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না অক্ষয়ের স্ত্রী পুনিতা দেবী। স্বামীর মঙ্গলকামনায় ব্রতও রেখেছিলেন। কান্না চেপে বললেন, “আমি নিশ্চিত ও ফিরে আসবে। যখন পুলিশ খুঁজছিল আমরাই তো ওকে থানায় নিয়ে গেলাম। দোষী হলে কি এ ভাবে নিজে থেকে কেউ থানায় যায়? ওকে ফাঁসানো হয়েছে।” |
|
|
|
|
|