মায়ের সামনেই স্কুলগাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল সাত বছরের এক ছাত্রীর।
মঙ্গলবার, বেলা সাড়ে ১২টা। স্কুল ছুটির পরে স্কুলগাড়িতে (স্কুলের নিজস্ব গাড়ি নয়) চেপে রোজের মতোই মা শবনম বেগমের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল সেন্ট জন ডায়োসেশন স্কুলের কিন্ডারগার্টেনের ছাত্রী কাশিরা ইউসুফ। তার বাড়ি ১৭ নম্বর সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে। পুলিশ জানায়, রোজের মতো এ দিনও বাড়ির কাছে ঝাউতলা
|
কাশিরা ইউসুফ |
রোডে স্কুলগাড়ি এসে দাঁড়ায়। মা আগে স্কুলগাড়ি থেকে নেমে পড়েন। পিছনে নামছিল কাশিরা। শবনমের অভিযোগ, মেয়ে নামার আগেই চালক গাড়ি চালাতে শুরু করে। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাশিরা পড়ে যায়। তার উপর দিয়ে চলে যায় স্কুলগাড়ির চাকা। অভিযোগ, দুর্ঘটনা ঘটেছে বুঝে চালক সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কড়েয়া থানা ও পূর্ব ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। জড়ো হন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা কাশিরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানায়, কাশিরার পেটে গুরুতর চোট লেগেছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার নাক ও কান দিয়ে রক্ত বেরোয়। তার ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত শিশুটির পরিবার ওই চালকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছে। স্থানীয়দের সাহায্যে স্কুলগাড়ির নম্বর জোগাড় করেছে পুলিশ। গাড়ির মালিক ও চালকের খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।
এ দিন কাশিরার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা শবনম ঘনঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। আত্মীয়-পরিজনেরা ঘিরে রেখেছেন তাঁকে। কাশিরার মামা সুলতান আহমেদ জানান, ওই ছাত্রীর বাবা পাপ্পু ইউসুফ দুবাইয়ে একটি টেলিফোন সংস্থায় কাজ করেন। দু’বছর অন্তর বাড়ি আসেন। তিনি বলেন, “জামাইবাবুকে কী করে খবরটা জানাব, বুঝতেই পারছি না। এইটুকু জানিয়েছি, কাশিরা দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলেছি।”
স্কুল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই দুর্ঘটনার দায় নিতে চাননি। স্কুলের তরফে শিক্ষিকা ক্যারোলিন নিওনের যুক্তি, যে গাড়িতে দুর্ঘটনা হয়েছে, স্কুল সেই গাড়িকে ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসার ব্যাপারে কোনও অনুমোদন দেয়নি। অভিভাবকেরা নিজেদের দায়িত্বে পড়ুয়াদের এই ধরনের গাড়িতে চাপিয়ে স্কুলে পাঠান।
ক্যারোলিনের বক্তব্য, স্কুলের নিজস্ব ১৪টি বাস রয়েছে। ছাত্রীদের অভিভাবকদের বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা স্কুলের নিজস্ব বাসে পড়ুয়াদের পাঠান না। তবে একই সঙ্গে স্কুল-কর্তৃপক্ষ বলেন, “ওই ছাত্রীর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অভিভাবকেরা সচেতন হচ্ছেন না।” এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ওই ছাত্রীর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। যাঁরা বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসার কাজ করেন, তাঁদের বলব একটু সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে। আর পাঁচটা গাড়ির থেকে তাঁদের গাড়ি চালানোটা আলাদা হলে ভাল হয়।”
প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় বাসন্তী হাইওয়েতেও এ দিন ছোট একটি ট্রাকের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শম্পা মণ্ডল (১০)। সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে ভ্যানরিকশায় চেপে বাড়ি ফিরছিল শম্পা। ওই সময়েই ট্রাকটি ভ্যানরিকশাকে ধাক্কা মারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত ট্রাকচালক পলাতক। তার বিরুদ্ধে প্রগতি ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। |