জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বার সরকারি বাসে সব্জির বাজার বসাচ্ছে রাজ্য সরকার। ক্রেতাদের হাতে ন্যায্য দামে তা তুলে দেওয়ার কাজটি করবে পুর-প্রশাসন। পুরকর্তাদের মহাকরণে ডেকে সম্প্রতি এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব শীঘ্রই শহরের বিভিন্ন জায়গায় সব্জির পসরা নিয়ে ঘুরবে কয়েকটি বাস। তাতে সব্জির সঙ্গে থাকবে মাছ এবং মাংস। সরকার-নির্ধারিত দামে তা কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরে সরকারি ব্যবস্থায় মুরগির দোকান খুলে দর নিয়ন্ত্রণে সাফল্য মিলেছে। সরকারি দরে বিক্রি করা মুরগির মাংসের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দাম কমাতে হয়েছে বেসরকারি মুরগি-বিক্রেতাদের। এতে উপকৃত হয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। একই ভাবে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে মনে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই সরকারি ভাবে সব্জি বিক্রি করার উপরে গুরুত্ব দিতে চান তিনি। |
পুরসভার বাজার দফতরের এক অফিসার জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই রাজ্য পরিবহণ নিগমের কাছ থেকে বাস চাওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত বাস অনেক দিন ধরেই গ্যারাজে পড়ে রয়েছে, তেমন ১৫টি বাস নিতে চায় পুরসভা। মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “মেরামতযোগ্য ১৫টি বাস পুরসভাই সারিয়ে নেবে। কোলে মার্কেট ও পোস্তা থেকে পাইকারি দরে সব্জি কিনে সেই সব বাসে রাখা হবে। শহরের ১৫টি বরোর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে বাসগুলি।” পুরসভা সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে শহরে মুরগির মাংস কিলো প্রতি ১৮০-১৯০ টাকা হয়েছিল। মাংসের দামে লাগাম টানতে শহর জুড়ে ২৭টি মাংসের দোকান খোলে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন নিগম ও পুরসভা। তার ধাক্কায় এখন মুরগির মাংসের দাম ১২০-১৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে সব্জির দাম বাড়া নিয়ে চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে পুরসভা, টাস্কফোর্স ও এনফোর্সমেন্ট শাখাকে কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এক শ্রেণির ফড়ের দাপটে সব্জির দরে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন একাধিক টাস্কফোর্সের সদস্য। তাঁদের কথায়, কোলে মার্কেট বা পোস্তা থেকে মাল কিনে শহরে বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে। কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখার অফিসারেরা বাজারে ঘুরে তা প্রত্যক্ষও করেছেন। যাচাই করে দেখেছেন ১০০ টাকা কিলোগ্রাম আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ১৫ টাকা কিলোগ্রাম পটল কিনে তা বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকায়। ৪০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। অথচ ওই সব্জির উৎপাদক চাষি কিন্তু তা বেচে খুবই কম দাম পাচ্ছেন। আবার সাধারণ ক্রেতাকেও তা কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। মাঝখান থেকে মুনাফা করছে এক দল ফড়ে। পুরসভা বা পুলিশ কেউই এই অসাধু কারবার বন্ধ করতে পারছে না। মুখ্যমন্ত্রীর মনে করেন একমাত্র আলাদা ভাবে সরকারি ব্যবস্থায় দোকান খুলে ওই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
বাসের খরচ চলবে কী ভাবে?
তারকবাবু বলেন, “বাসগুলি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে। বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। যে সব সংস্থা বাস সারানো ও চালানোর খরচ দেবে, তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারবে।” এ ছাড়া জনকল্যাণমূলক এই কাজের জন্য শহরের কয়েকটি নামী কর্পোরেট সংস্থার সহায়তা চাওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এর পাশাপাশি সব্জির দাম কত হওয়া উচিত, কেন সব্জির দর বাড়ছে এ নিয়ে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সকে দিয়ে সমীক্ষা করাতে চায় পুর প্রশাসন। এক পুর অফিসারের কথায়, “সব্জি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় মালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে বার বার বলা হয়। কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব তার কোনও পরিকাঠামো নেই। সেই কাজটাই করানো দরকার।” |