দ্রুত গতিতে ছুটছে একের পর এক গাড়ি। তার মধ্যেই এদিক ওদিক দেখে রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন স্কুলপড়ুয়া থেকে বয়স্ক সকলেই। যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় এটাই নিত্যচিত্র বুদবুদ থেকে বর্ধমান যাওয়ার ভিড়সিন মোড় ও বুদবুদ বাইপাসের পানাগড় থেকে বুদবুদ বাজারে ঢোকার রাস্তার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে ঢোকা বা বেরোনো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তাঁরা জানান, স্কুল ছাত্রছাত্রীরাও এই রাস্তা পার করে স্কুলে যায়। ফলে সবসময়েই তাদের রাস্তা পার করিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের আসতে হয়। অসুবিধের কথা জানান বাসচালক ও মোটরবাইক আরোহীরাও। তাঁদের দাবি, এই দু’জায়গায় ট্রাফিকের ব্যবস্থা করুক স্থানীয় প্রশাসন।
২০১০ সালের ১৩ মে লরির ধাক্কায় স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল এই ভিড়সিন মোড়ে। জাতীয় সড়কের উল্টোদিকের ভিড়সিন গ্রামের অনেক মানুষই নানা কাজে প্রতিদিনই জাতীয় সড়ক পার করে বুদবুদ বাজারে আসেন। কেউ হেঁটে রাস্তা পার হন। কেউ আবার সাইকেল বা মোটরবাইকে। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে বুদবুদ বাজারে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তেও যায়। তাঁদেরও ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় রাস্তা। বর্ধমানগামী বাসগুলিও এখান দিয়েই জাতীয় সড়কে ওঠে। ফলে দিনভরই ভিড় থাকে রাস্তার ওই অংশে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও দুর্ঘটনা ঘটার পরে কিছুদিন ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়। তারপর আবার যা ছিল তাই। বাসিন্দাদের পাশাপাশি বাসচালক থেকে মোটরবাইক আরোহী, বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা সকলেই জানান, বুদবুদ থেকে বর্ধমান যাওয়ার জাতীয় সড়কের এই অংশটি বেশ নীচু। ফলে দূর থেকে দ্রুত গতিতে আসা গাড়ি অনেকসময় নজরে পড়ে না। রাস্তার ওপারে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেকক্ষেত্রে ঠিক ভাবে বোঝা যায় না। ফলে সবসময়েই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। |
স্কুল ছুটির সময় জাতীয় সড়কের এই অংশে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের সুরক্ষিত ভাবে রাস্তা পার করার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এমনই একজন ভিড়সিন গ্রামের আনন্দময় ঘোষ বলেন, “রাস্তার যা হাল, রোজই মেয়ের স্কুলে যাওয়া ও ফেরার সময় দাঁড়িয়ে থাকি।” নবম শ্রেণির রিয়া বাগ্দী বলে, “একা রাস্তা পার হতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।” স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবস্থা করলে রাস্তা পারপার করা অনেকটা বিপদমুক্ত হবে।
২ নম্বর জাতীয় সড়কের বুদবুদ বাইপাস দিয়েও সারাদিন প্রচুর বাস, লরি, ছোট গাড়ি, মোটরবাইক চলাচল করে। পানাগড় সেনাছাউনি পেরিয়ে এই বাইপাস থেকে একটি রাস্তা বুদবুদ বাজারে ঢুকেছে। বর্ধমানগামী প্রায় সব বাসই এই রাস্তায় ঢোকে। ফলে নিত্য প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার বাজারে যাওয়াআসা করা বাসিন্দারা রাস্তা পার করতে সমস্যায় পড়েন। দুরন্ত গতিতে যাওয়া রাস্তার একপাশ দিয়ে পার হতে হয় তাঁদের। প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনা লেগে থাকে বলেও তাঁদের অভিযোগ।
বুদবুদ থানার তরফেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনের কথা স্বীকার করা হয়েছে। থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ। নজরদারি চালানো হয়। তবে কর্মী কম হওয়ায় সবসময় পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব হয় না। |