সকাল-বিকেল সবুজ মাঠে দাপাদাপি কমবয়সীদের। নেটের মধ্যে কংক্রিটের পিচে ব্যাট-বলের লড়াই। সন্ধ্যা নামলেই গান-নাটক-আবৃত্তির আসর। ছুটির দিনে গমগমে গল্ফ ক্লাব।
এক যুগ আগেও এমন দিন দেখতে অভ্যস্ত ছিল কুলটি। কিন্তু শহরে ইস্কোর কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ায় ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে আঁধার নেমে আসে। বছর তিনেক আগে ফের চালু হয়েছে কারখানা। তাই আবার সুদিনের আকাঙ্খায়, আলো ঝলমলে শহর দেখার আশায় বুক বাঁধছেন কুলটির বাসিন্দারা।
কুলটির এই কারখানা গড়ে ওঠে ১৮৭১ সালে। তার চার বছর পরেই আধিকারিকদের জন্য তৈরি হয় গল্ফ ক্লাব। পরপরই কারখানা কর্তৃপক্ষের অনুদানে মাথা তোলে কুলটি ক্রিকেট ক্লাব ও ফুটবল ক্লাব। সেখানে ক্রিকেট-ফুটবলের প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। ১৯২৯ সালে কুলটি সম্মিলনী তৈরি হয়। ১৯৬২ সালে গড়া হয় রবীন্দ্রভবন। শহরের প্রবীণেরা জানান, এক সময়ে এই সব ক্লাব নানা বড় খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। শহরের প্রবীণেরা জানান, কুলটি সম্মিলনীতে রবিশঙ্কর থেকে কিশোরকুমার, বহু নামী শিল্পীই অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন।
২০০৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। তার বছর দুয়েক আগে থেকেই খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়তে থাকে। শহরবাসী জানান, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এ সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে ফের চালু হয়েছে কারখানা। আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা উদ্যোগ। সম্প্রতি শহরে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমির উদ্বোধন হয়েছে। সেল গ্রোথ ডিভিশনের কুলটি ওয়ার্কস এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের যৌথ উদ্যোগে তা গড়া হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির হবে। মহামেডানের প্রতিনিধিরা মাঠ ঘুরে দেখেও গিয়েছেন। ২০১০ সালে রবীন্দ্রভবনেও সংস্কার কাজ হয়েছে। |
নতুন এই সব কাজকর্মে খুশি কুলটির মানুষজন। প্রাক্তন খেলোয়াড় সুভাষ কবিরাজ, রেফারি নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়েরা জানান, সেই সময়ে শহরের ক্রিকেট ক্লাবে খেলা রানা চৌধুরী পরে রঞ্জি খেলেছেন। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে জাতীয় স্তরে খেলেছেন অভিষেক ঘোষ, অরুণ রায়, তপী চন্দ্রেরা।
ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতেন ইসিএল কর্মী সমীর মাজি। তিনি জানান, ক্লাবের প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ২০০১ সালে তিনি সাঁকতোড়িয়া ক্রিকেট কোচিং সেন্টার চালু করেন। সেখানকার ছাত্র ইজাজ আনসারি, অলোকপ্রতাপ সিংহেরা পরে উঁচু স্তরে খেলেছেন। সমীরবাবু বলেন, “কুলটি ক্রিকেট ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক খেলোয়াড় নানা সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন। আবার যদি সত্যিই সে সব চালু হয় শহরের জন্য তা ভীষণ খুশির খবর।” মহামেডান স্পোর্টিংয়ের হাত ধরে ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও তাঁরা আশাবাদী।
অতীতে ক্রিকেট মাঠে অনুশীলনের জন্য কংক্রিট এবং ম্যাচে খেলার জন্য মোরামের পিচ ছিল। এ বার দু’টি পিচই কংক্রিটের করা হল। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ক্রীড়া ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করলে অপরাধমূলক কাজকর্মও কমে। অল্প বয়সীদের মাঠে ফেরানোই লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা তথা সঙ্গীতশিল্পী ও সাহিত্যিক সমীপেন্দ্র লাহিড়ি, ছড়াকার নীতিশ চৌধুরীদের অবশ্য, “বছরখানেক আগে রবীন্দ্রভবন সংস্কার হলেও সাংস্কৃতিক কাজকর্ম চালু হয়নি। একটি বড় গ্রন্থাগার তালাবন্ধ হয়ে পড়ে। কুলটি সম্মিলনী ভবনও আগাছায় ভর্তি হয়ে পড়ে।” তাই যত দিন না হাতেকলমে সব কিছু হচ্ছে, আনন্দে ভাসতে নারাজ তাঁরা। |