গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির কাজে রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় যতটা রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা ছিল, আর্থিক বছরের পাঁচ মাস পরে পশ্চিমবঙ্গ তার মাত্র ১৮ শতাংশ করে উঠতে পেরেছে। পরিস্থিতির বদল না-হলে কেন্দ্রের পক্ষে যে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। রাজ্যের অবশ্য বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোট এবং বর্ষা সত্ত্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার কাজ বেশিই হয়েছে।
মনমোহন সিংহের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে তৃণমূল ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর থেকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক কিঞ্চিৎ মিঠেকড়া। গত বছর অক্টোবরে একশো দিনের কাজের টাকা মঞ্জুর করার সময় মমতাকে দেওয়া চিঠিতে কটাক্ষ করে জয়রাম লেখেন, মুখ্যমন্ত্রী যে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘ব্রেন ডেড’ বলে মন্তব্য করেছেন, তারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চাহিদা সম্পর্কে কতটা সহানুভূতিশীল, তা যেন মনে রাখা হয়। এই জয়রামই পরবর্তী কালে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
এ বারের চিঠিতে জয়রাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনায় ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে মোট ১৫৮৬ কোটি টাকা খরচ করে ৫২০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করার কথা রাজ্যের। কিন্তু আর্থিক বছরের ৫ মাস কেটে যাওয়ার পরও পঞ্চায়েত দফতর মাত্র ২৮৫ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১৮%। জয়রামের বক্তব্য, কেন্দ্র পরবর্তী পর্যায়ে টাকা বরাদ্দের জন্য প্রকল্পের অগ্রগতিকেই গুরুত্ব দেয়। কিন্তু রাজ্যে এই প্রকল্পের যা অবস্থা, তাতে পরের ধাপের অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। সেই কারণে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পঞ্চায়েত দফতরকে উদ্যোগী হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকেও এ নিয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
জয়রামের এই চিঠিতে কিছুটা অবাকই হয়েছেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, “আমাদের সাফল্য মোটেই খারাপ নয়। জানি না, কার পরামর্শে উনি চিঠি লিখেছেন।” যদিও জয়রাম এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার পর্যালোচনা করতে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি লিখেছি। তাতে যে রাজ্যের যেমন অবস্থা, তা জানানো হয়েছে।”
সুব্রতবাবুর দাবি, “গ্রামসড়ক যোজনায় এ বার যা খরচ হয়েছে, অতীতে কখনও তা হয়নি। তা ছাড়া, গত তিন মাস তো পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সবাই ব্যস্ত থেকেছে। এখন বর্ষা চলছে। পশ্চিমবঙ্গে এই ক’টা মাস কাজের সময় নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এটা বুঝতে হবে। আমরা যে টাকা খরচ করব বলেছি, আর্থিক বছর শেষে দেখিয়ে দেব সেই টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে।” জয়রামকে পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে বলেও জানান পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
রাজ্য গ্রামোন্নয়ন সংস্থার (যারা গ্রাম সড়ক যোজনা রূপায়ণ করে) অতিরিক্ত সিইও সত্যব্রত চক্রবর্তীও জানান, ২০১২-’১৩ সালে এই প্রকল্পে রাজ্য ৪১৭ কোটি টাকা খরচ করেছিল। এ বার এখনও পর্যন্ত ২৮৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে টাকা খরচ করা যাচ্ছে না, এ কথা ঠিক নয়। তাঁর ব্যাখ্যা, “গ্রাম সড়ক যোজনায় প্রথম ধাপে মাটির কাজ হয়। তখন খরচ কম হয়। পরের ধাপে যখন পাথর, পিচ ঢালার কাজ হয়, তখন খরচ হয় অনেক বেশি। ফলে গোড়ায় কম খরচ হয়েছে মানেই কাজ মন্থর গতিতে হচ্ছে, এমন ভাবা ঠিক নয়।”
তবে শুধু প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নয়, গরিবদের বাড়ি তৈরি করার ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়েও সন্তুষ্ট নন জয়রাম। হিসেব পেশ করতে না-পারার জন্য কয়েকটি জেলা যে প্রকল্পটির টাকা পায়নি, এ কথা বলেও রাজ্যকে সতর্ক করেন তিনি। এমন একটি প্রকল্পের সুবিধা নিতে সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন। এ প্রসঙ্গে ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত দফতরের যুগ্ম-সচিব দিব্যেন্দু সরকার জানান, সব সময়ই কিছু জেলা ভাল কাজ করে, কিছু জেলা খারাপ করে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের অবস্থান খারাপ নয়। |
গ্রাম সড়কের সে কাল এ কাল |
বাম জমানা ২০০০-’১২ |
তৃণমূল জমানা ২০১২-’১৩ |
অনুমোদন |
১৬ হাজার কিমি, ২৯২৬টি রাস্তা |
৬১৪৪ কিমি, ১৪২৫টি রাস্তা |
নির্মাণ |
বছরে গড়ে ৯৯৩ কিমি, ১৭৩টি রাস্তা |
বছরে ১২৮১ কিমি, ২৭৫টি রাস্তা |
খরচ |
বছরে গড়ে ৩৩১ কোটি |
বছরে ৪১৭ কোটি |
|