পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পর্যালোচনা বৈঠকে দলের ব্লকস্তরের নেতাদের কাছে সমালোচিত হলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব। উঠল নেতৃত্ব বদলের দাবিও।
রবিবার পুরুলিয়া শহরে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্যনেতা হাফিজ আলম সৈরানি এবং জেলা কমিটির সমস্ত সদস্য। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল পঞ্চায়েত ভোটের পর্যালোচনা। ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দলের বিভিন্ন জোনাল কমিটির সদস্য নেতৃত্বের কড়া সমালোচনাই শুধু করেননি, কেউ কেউ তুলোধোনাও করেছেন। ব্লক বা জোনাল স্তরের নেতারা সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, বাঘমুণ্ডি, ঝালদা ১ ও আড়শায় পঞ্চায়েত সমিতি হাতে থাকা সত্ত্বেও দলের ভরাডুবি হল কেন। উল্লেখ্য, জেলায় ফরওয়ার্ড ব্লকের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই ব্লকগুলিতে দীর্ঘদিন ধরেই শাসন ক্ষমতায় ছিল ফরওয়ার্ড ব্লক (মাঝে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝালদা ১ ব্লকের ক্ষমতা হারানো ছাড়া)। অন্য ব্লকের নেতারা প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের সরকারের আমলে অন্য ব্লকগুলিতে যখন সরকারি প্রকল্পের সুফল পৌঁছচ্ছে, তখন এই তিনটি ব্লকের ক্ষেত্রে ওই সব প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দেওয়ার প্রশ্নে জেলা নেতৃত্ব কী করছিলেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, গত লোকসভা নিবার্চনে দলের বিজয়ী প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান কমতে কমতে কুড়ি হাজারে ঠেকেছিল। তখনই পঞ্চায়েত ভোটে ভরাডুবির ইঙ্গিত মিলেছিল। তার পরেও কী করছিলেন দলীয় নেতৃত্ব?
সরাসরি মুখের উপরে না হলেও এই ফলের পরে বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের আর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা উচিত কি না, রবিবারের বৈঠকে উঠেছে সে প্রশ্নও। এমনকী, যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে দলের জন্য যেভাবে নেতা তুলে আনা দরকার ছিল, তা হয়েছে কি না সে প্রসঙ্গও উঠেছে। কিছু কিছু নেতা বলেন, “অনেক জায়গায় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে মৌরসিপাট্টা চালিয়েছেন দলের কেউ কেউ। অথচ সব দেখেও বা জেনেও নেতৃত্ব চুপচাপ থেকেছেন।” ফব-র এক জেনাল কমিটির নেতার কথায়, “হাফিজ আলম সৈরানি সবই শুনেছেন। এবার দেখা যাক কী হয়।”
ফব-র জেলা সম্পাদক তথা সাংসদ নরহরি মাহাতো বলেছেন, “জেলা কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন জোনাল কমিটির নেতা আলোচনা করেছেন। আলোচনার পরে আমরা ঠিক করেছি, নতুন ভাবে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করব সম্মেলনের মধ্যে দিয়েই।” নেতৃত্ব বদলের প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, “এই বিপর্যয় যে শুধু আমাদের ঘাঁটিতে হয়েছে, এমন নয়। সিপিএমের ফলও একই রকম খারাপ হয়েছে। কর্মীরা নেতৃত্ব বদলের দাবি করতেই পারেন। তবে, সাংগঠনিক রদবদলের কাজ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া, কিছুদিন পরেই কলকাতায় দলের বৈঠক হবে। সেখানেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।” আপাতত বাঘমুণ্ডি জোনাল কমিটি ও এই কমিটির অধীনে থাকা দু’টি লোকাল কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে নরহরিবাবু জানিয়েছেন। তবে, একদা দলের আঁতুড়ঘর বাঘমুণ্ডিতে জোনাল ও দু’টি লোকাল কমিটি ভেঙে দেওয়ায় ওই অঞ্চলের একাধিক ফব নেতা-কর্মী দল ছাড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন ফব-র জেলা নেতাদেরই একাংশ।
অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটে জেলার জয়পুর ব্লকে ভরাডুবির পরে এই ব্লকের সভাপতি বদল করল কংগ্রেস। রবিবার পুরুলিয়া শহরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নিবার্চনে জয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে দিনভর সাংগঠনিক সভার আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। সভার পরে দলের সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো জানান, জয়পুরের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি পদত্যাগ করেছিলেন। সেই জায়গায় ব্লক কমিটির অন্য নেতা চঞ্চল মৈত্রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো জানিয়েছেন, কর্মীদের নিয়ে জেলায় নতুন ভাবে সংগঠন গড়ে তোলা হবে। |