খুচরো পয়সার অভাব মেটাতে সর্বত্র যখন ত্রাহি ত্রাহি রব, তখন নবদ্বীপের ভিক্ষুকরা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর ভুমিকা নিচ্ছেন। নবদ্বীপের গোপালতলা, বড়ালঘাট, রানিরঘাট-সহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের কয়েকশো ভিক্ষুক প্রতিদিনের পাওয়া পয়সা দিয়ে শুধু সঙ্কটই মেটাচ্ছেন না, বিনিময়ে বাড়িয়ে নিচ্ছেন উপার্জনও।
রানিরঘাটের রাধারানি মন্দিরে ভিক্ষা করেন লক্ষ্মীরানি মণ্ডল, মুক্তি দাস। তাঁরা বলেন, “দশ টাকার বদলে আমরা নয় থেকে আট টাকার খুচরো দিই। অনেক সময় দোকানে গিয়ে সব টাকা দিয়ে আসি। সে ক্ষেত্রে চুক্তি করা থাকে। অন্য কাউকে দিতে পারব না।” গোড়ামাতলার সন্ধ্যা বিশ্বাস বলেন, “আমি যাকে খুচরো দিই সে অনেকের কাছ থেকে নেয়। প্রতি একশো টাকায় বারো টাকা সে দেয়।”
প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও ভিক্ষাজীবীদের খুচরোর উপর অনেকটাই নির্ভর করেন ছোট ছোট দোকানের মালিকেরা। শহরের এক খাবারের দোকানের মালিক মধু বৈষ্ণব বলেন, “প্রতিদিনের কেনাবেচার খুচরো যাতে ঠিক মতো পাই, তার জন্য ওদের প্রাপ্য ‘বাটা’ ছাড়াও মিষ্টি-কচুরি নিয়মিত দিই। ইনসেনটিভও বলতে পারেন।”
সব্জি বাজার বা খুচরো জিনিস কিনতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন ক্রেতারা। ছয়-সাত টাকার জিনিস কিনে ক্রেতা দশ টাকা দিলে বিক্রেতা খুচরো দিতে না পেরে অতিরিক্ত মাল দেন। আর দু’ তিন টাকার জিনিস কিনলে হিসাব মিলাতে ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে চকোলেট। খুচরো নিয়ে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন বাস কন্ডাক্টররা। কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ রুটের কন্ডাক্টর আশিস সাহা বলেন, “প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া, হাতাহাতি পর্যন্ত হচ্ছে। সাড়ে নয় টাকা ভাড়া হলে পঞ্চাশ পয়সা কী করে দিই?” যাত্রীরাই বা ছাড়বেন কেন? রিকশা, খেয়াঘাট থেকে দোকানের চা-বিস্কুটের দাম মেটানো নিয়ে
নিত্য অশান্তি।
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির অসীম দত্ত বলেন, “আমরা বাটা দিয়ে খুচরো সংগ্রহ করি। সে ক্ষেত্রে ভিক্ষাজীবীরা আমাদের অন্যতম ভরসা।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “ক্রেতারা পয়সার বদলে চকলেট বা অন্য কিছু পেতে অপছন্দ করেন।” খুচরো সঙ্কট কবে কাটবে তা না জানলেও ছোট ব্যবসায়ীরা ভরসা রাখেন মুক্তি, সন্ধ্যা বা লক্ষ্মীরানিদের উপরেই। |
মেলায় বিক্রির জন্য মাটির ফল আর সব্জি বানাতে বসেছেন কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির বাসিন্দা সৌমেন্দ্রনাথ পাল। পুজো থেকেই শুরু হবে মরসুম। চলবে শীতকাল অবধি। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে তাঁর দুই মেয়ে সুরূপা আর সুরভি। তারা জানায়, যা বানায় সবই বিক্রি হয়ে যায় মেলায়। সৌমেন্দ্রবাবু জানান, একেকটা মাটির ফল বানাতে খরচ পড়ে ২টাকা। একশোটা ফল বানিয়ে পাওয়া যায় তিনশো টাকা। শিল্পীর কাছ থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে কেউ কেউ আবার তা বাইরে সাত-আট টাকাতেও বিক্রি করেন। |