অকারণে বন্ধ হোক হর্ন বাজানো, সচেতন করতে পথে পড়ুয়ারা
রুবি মোড়ের সিগন্যালে গাড়ির হর্নের প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে গিয়েছিল গড়িয়ার প্রদীপ রায়ের। নিজের গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িতে তিনি দেখেন, তাঁর পিছনেই এক যুবক টানা হর্ন বাজিয়ে চলেছেন। প্রতিবাদ করায় ওই যুবক পাল্টা গালিগালাজ করতে শুরু করেছিল প্রদীপবাবুকে। প্রদীপবাবু একা নন। এ রকম অভিজ্ঞতা শহরের নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই হয়। বিদেশ তো বটেই, দেশের অন্য শহর থেকে আসা মানুষও কলকাতার গাড়ির চালকদের এই হর্ন বাজানোর প্রবণতা দেখে বিস্মিত হন। কলকাতায় বিকট শব্দে হর্ন বাজে এমনকী স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের সামনেও। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে গাড়িচালকদের সচেতনতা বাড়াতে এ বার রাস্তায় নামল পড়ুয়ারা। সোমবার শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে চালকদের সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “শহরের ১১১টি স্কুলের প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। হর্ন বাজানোর ফলে পরিবেশ ও নাগরিকদের উপরে কী কী প্রভাব পড়ে, সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এ দিন প্রচার চালানো হয়েছে।”
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ-গুরুসদয় দত্ত রোড সংযোগস্থল, গড়িয়াহাট মোড়, মল্লিকবাজার, সিঁথি মোড়, বেলেঘাটা মেন রোড, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়-সহ শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এ দিন চালকদের সচেতনতা বাড়াতে পড়ুয়ারা রাস্তায় নেমেছিল।
গাড়িচালকদের হর্ন বাজানোর প্রবণতা কমাতে উদ্যোগী পড়ুয়ারা।
সোমবার, গুরুসদয় দত্ত রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
কেন এই উদ্যোগ?
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা শহরে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শব্দদূষণের মাত্রা ৬৫ ডেসিবেলের বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় সেই মাত্রা ৭০ ডেসিবেলও ছাড়িয়ে যায়। শব্দদূষণে গাড়ির হর্ন অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের কর্তারা। হর্ন বাজিয়ে শব্দদূষণ বন্ধ করতে মাঝেমধ্যে বিশেষ অভিযান চলে। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, এ কথা জানিয়েছেন কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের কর্তারাই।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, হাসপাতালের সামনে গাড়ির হর্ন বাজলে সেখানে ভর্তি থাকা রোগীদের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। যাঁদের হৃদ্যন্ত্র বা স্নায়ুর অসুখ রয়েছে, তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্কুল, কলেজের সামনে হর্ন বাজানো হলে পড়ুয়াদের মনোযোগই কেবল নষ্ট হয় না, দীর্ঘ দিন জোরালো হর্নের আওয়াজ শুনতে শুনতে পড়ুয়ারা বধিরও হয়ে যেতে পারে।
রাজ্য দূর্ষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন আইনি উপদেষ্টা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, আদালতের সামনে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু শহরের সব জায়গাতেই অকারণে হর্ন, বিশেষ করে ইলেকট্রিক হর্ন বাজানোয় অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। কারণ, শহরের অধিকাংশ গাড়িচালকের হর্ন বাজানোর বদ অভ্যাস রয়েছে।”
লালবাজারের এক কর্তা জানান, রাজভবন, মহাকরণ বা কলকাতা হাইকোর্টের সামনে হর্ন বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কখনও কখনও হর্ন বাজিয়ে চালকেরা চলে যান। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় চালকদের বিরুদ্ধে সব সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে ওই কর্তার দাবি, কলকাতা শহরে ইলেকট্রিক হর্ন নিষিদ্ধ। এখানে চালকেরা এই ধরনের হর্ন বাজান না বলে তাঁর দাবি। তবে, শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই পাল্টা অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে কমবয়সী ছেলেরা যে ধরনের প্রযুক্তির মোটরবাইক চড়েন, তাতে ইলেকট্রিক হর্ন লুকিয়ে লাগানো হয়। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.