|
|
|
|
চা-পাটের দর নেই, পুজোয় বিষণ্ণ চাষি
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
পাটের দাম তলানিতে। আশানুরূপ দাম নেই। কাঁচা চা পাতার দর বাজারে কমেছে। ফলে টাকার আমদানি কম। চাষির বিষণ্ণ মুখ দেখে পুজোর বাজার কেমন জমবে, তা নিয়ে সংশয়ে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যবসায়ী মহল। উত্তরবঙ্গের ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অব নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পাট ও কাঁচা চা পাতার দাম না থাকায় উত্তর বঙ্গের বাজারগুলিতে অর্থের আমদানি কমেছে। ওই কারণে মন্দার ছায়া গভীর হচ্ছে। তাই পুজোর বাজার উত্তরবঙ্গের কোথাও ভাল হওয়ার আশা নেই।”
পাটের কেতাবি নাম হল গোল্ডেন ফাইবার বা সোনালি তন্তু। কিন্তু দাম জলের মতো। অন্তত এ বারের বাজার এমনটাই। এক মন পাট বিক্রি করে চাষির হাতে ৯০০ থেকে হাজার টাকার বেশি জুটছে না। এক বিঘা জমিতে পাঁচ মন পাট হয়। উৎপাদন খরচ প্রায় ৬ হাজার টাকা। মন প্রতি দাম ৯০০ টাকা পাওয়া গেলে এক বিঘা জমির পাট বিক্রি করে হাতে আসছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। লোকসানে জেরবার দশা চাষিদের। গ্রাম জুড়ে তাই প্রশ্ন ঘুরছে মা আসছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁকে হাসি মুখে বরণ করার সঙ্গতি কোথায়?
উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় এ বছর প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাটের মন্দা বাজার ওই সমস্ত এলাকায় বাঙালির সেরা উৎসবের উচ্ছ্বাস আনন্দের অনেকটা কেড়ে নিতে বসেছে বলে বাসিন্দারা মনে করছেন। শুধু তো জামা জুতো কেনাকাটা নয় পাট বিক্রির টাকা দিয়ে চাষিরা পুজোর আগে বাড়ি মেরামতের কাজ করেন। টিন, ইঁট, সিমেন্টের চাহিদা বেড়ে যায়। অনেকে সাইকেল, টিভি, মোবাইল ফোন কেনেন। কিন্তু পুজোর এক মাস আগেও বাজারে কেনাকাটার তেমন লক্ষণ না দেখে হতাশ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষি বলয়ের ব্যবসায়ীরা। জলপাইগুড়ি জেলা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক সাধন বসু বলেন, “চাষিরা পাটের দাম না পাওয়ার জন্য গ্রামীণ এলাকার বাজারগুলিতে খারাপ প্রভাব পড়েছে। পুজোর আগে এই পরিস্থিতি পাল্টাবে আশা করতে পারছি না।”
কেউ আশা করবেন কেমন করে?
কয়েক বছরে গ্রামাঞ্চলে ছোট চা বাগানের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় উত্তরবঙ্গে পুজে-বাজারে প্রাণ ফেরাতে পাটের পাশাপাশি বড় ভূমিকায় এসেছে কাঁচা চা পাতা। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা যায়, ৬ টাকা থেকে ১২ টাকা কেজি দরে কাঁচা পাতা বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় ১৫ টাকা। সংস্থা সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেছেন, “উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, ও শিলিগুড়ি মহকুমায় ৪০ হাজার ছোট চা বাগান রয়েছে। অনেক মালিকই শ্রমিকদের বোনাস দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে। জানি না কী পরিস্থিতি হবে।”
|
মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের |
• পাট, কাঁচা চা পাতার আশানুরূপ দর না মেলায় উত্তরবঙ্গের
বাজারগুলিতে টাকার আমদানি অনেকটাই কমে গিয়েছে। |
• চাষির হাতে টাকা না থাকায় পুজোর মাসখানেক আগেও
তাই নতুন জামা-জুতো কেনার ভিড় সে ভাবে চোখে পড়ছে না। |
• এই অবস্থায় কী ভাবে শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া যায়,
তা নিয়ে চিন্তায় ছোট চা বাগান মালিকরা। |
|
|
|
|
|
|