আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা হস্তান্তর ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার পরামর্শ দিল ভারী শিল্প মন্ত্রক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্ত অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এই কারখানা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারী শিল্প মন্ত্রকের পরামর্শ পাওয়ার পরে তৎপরতা বাড়িয়েছেন হিন্দুস্তান কেবলস ও অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্তারা।
হিন্দুস্তান কেবলস সূত্রে খবর, ভারী শিল্প মন্ত্রকের যুগ্ম সচিবের সভাপতিত্বে সম্প্রতি দিল্লিতে একটি বৈঠকে দু’পক্ষকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। কেবলস কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের অধিকর্তা বাসুদেব দে জানান, কারখানার ভবিষ্যৎ, কাজের পরিকল্পনা দ্রুত শেষ করার জন্য তাঁদের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছেন সংস্থার কর্পোরেট দফতর এবং অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের আধিকারিকেরা। বাসুদেববাবু বলেন, “কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে আমরা দ্রুত ওই সব তথ্য পাঠাচ্ছি। আমাদের আশা, হস্তান্তর ও অধিগ্রহণ শীঘ্র হয়ে যাবে।” গোটা প্রক্রিয়াটি দেখাশোনার জন্য দুই সংস্থার আধিকারিকদের নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দল তৈরি হয়েছে। হস্তান্তর ও অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত এই দলটি দুই সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলবে। দুই সংস্থার তরফে এই কারখানার সম্ভাব্য নামকরণ হয়েছে এইচসিএল (সেল) লিমিটেড। |
সুদিনের আশায়। রূপনারায়ণপুরের ফাইল চিত্র। |
প্রায় দু’দশক ধরে রুগ্ণ অবস্থায় পড়ে কেবলস কারখানা। উৎপাদনশূন্য এই কারখানার পুনরুজ্জীবনের জন্য বিআইএফআর-এ কমপক্ষে ৩০টি বৈঠক হয়েছে। একাধিক সংস্থা অধিগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েও ফিরে গিয়েছে। মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে থেকেছেন কর্মীরা। অবশেষে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখায় অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড।
কেবলস কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাইয়ে শেষ বার কারখানা ঘুরে যান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের ডিরেক্টার জেনারেল পদমর্যাদার পাঁচ আধিকারিক। কেবলস কারখানার আধিকারিকেরা জানান, ওই কর্তারা প্রাথমিক ভাবে রূপনারায়ণপুরে যুদ্ধ রকেট তৈরির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। একটি উন্নত গবেষণা কেন্দ্রও গড়বে তারা। নতুন প্রকল্প শুরুর আগে এখানে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার নির্মাণকাজ হবে। নতুন কারখানাটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করবে বলে জানা গিয়েছে।
অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষের আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্তারা ইতিমধ্যে দেখে গিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জল। কারখানার জলের চাহিদা মাইথন জলাধার থেকে মেটাতে চান তাঁরা। কী ভাবে সেই জল আসবে, সেই পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বাতাসের গতি, জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা, মাটির শক্তি ও জলধারণ ক্ষমতাএ সব বিষয়ে বিশদে তথ্য কেবলস কর্তৃপক্ষের তরফে অর্ডন্যান্স বোর্ডের কর্তাদের দেওয়া হয়েছে। কেবলস সূত্রে জানা যায়, লোয়ার কেশিয়ার পিছনে প্রায় আড়াইশো একর জমিতে বনসৃজন, হাসিপাহাড়ি লাগোয়া ৩০ একর জমিতে আধুনিক হাসপাতাল ও টাউনশিপ গড়ার পরিকল্পনা করেছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড। কেবলস-এর প্রায় সাড়ে ন’শো একর এলাকার উঁচু পাঁচিল, শহরে নজরদারির জন্য ১৫টি ওয়াচ টাওয়ারও গড়া হবে। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের এই সব পরিকল্পনায় খুশি কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্তমান শ্রমিক-কর্মীদেরই নতুন কারখানায় বহাল করা হবে বলে কেবলস সুত্রে জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপে যে সব শ্রমিক-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁদের তালিকাও তৈরি হয়েছে বলে খবর। বাসুদেববাবু জানান, কারখনার বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কাজে লাগবে না। সেগুলি বিক্রির জন্য ভারী শিল্প মন্ত্রক অনুমোদন দিয়েছে। সরকারের কাছে কেব্লসের ভূমি সম্পত্তির যে খাজনা বকেয়া রয়েছে। সে সবও মেটানোয় উদ্যোগী হয়েছেন কেবলস কর্তৃপক্ষ। |