রাস্তা জুড়ে রাখা গাড়ি, শহর যানজটে
ঘিঞ্জি বাজারে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা দায়। ভিড় কয়েক হাজার মানুষের। রাস্তা জুড়ে রাখা কয়েকশো মোটরবাইক ও গাড়ি বাড়িয়েছে সমস্যা। দুর্গাপুরে পুরনো নানা বাজারে এই দৃশ্য নিত্যদিনের।
শুধু পুরনো বাজার এলাকা নয়। সিটিসেন্টার এলাকাতেও রাস্তার উপরেই সার দিয়ে দাঁড় করানো থাকে মোটরবাইক, গাড়ি। এমনকী, ‘নো-পার্কিং’ বোর্ড উপেক্ষা করেই রাখা হয় মোটরবাইক। পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় এত ছোট যে রাস্তায় গাড়ি রাখতে বাধ্য হন অধিকাংশই। বাড়ে যানজটের সমস্যা।
গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুর ও তার লাগোয়া এলাকায় কল-কারখানা বেড়েছে। অফিস-কাছারিও বেড়েছে। শহরে নতুন নতুন দোকান খুলেছে। ফলে, শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। সিটিসেন্টারে তিনটি শপিংমল চালু হয়েছে। হয়েছে হোটেল, মাল্টিপ্লেক্স, নানা সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস, টেলিকম সংস্থার অফিস, বিভিন্ন সরকারি দফতর, পুরসভা, এডিডিএ-র কার্যালয়, দমকল, কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র, দু’টি স্টেডিয়াম, স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। শহরবাসীর অভিযোগ, সব কিছুই হয়েছে। হয়নি শুধু পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
বেনাচিতি বাজারে চার হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। আছে ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, নানা বেসরকারি সংস্থার অফিসও। দুর্গাপুর বাজারেও একই পরিস্থিতি। এই শহর ছাড়াও জেলার নানা এলাকা, এমনকী পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও প্রতি দিন বহু মানুষ ভিড় জমান এই বাজারগুলিতে।
নিষেধকে বুড়ো আঙুল। দুর্গাপুর কোর্টের কাছে সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
বহু দিন আগে এই বাজারগুলি গড়ে উঠেছিল নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই। সমস্যা আগেও ছিল। ইদানীং তা মাত্রাছাড়া হয়েছে। বাজারে আসা মানুষজন গাড়ি রাখেন রাস্তার পাশেই। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যানজট হয়। রাস্তার পাশে রাখা মোটরবাইক অনায়াসে চুরি করে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ ও পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটিসেন্টার এলাকার দিনে গড়ে তিন হাজারেরও বেশি মোটরবাইক আসে। যার বেশিরভাগই পার্কিং করা হয় রাস্তার ধারে। এ ছাড়া চার চাকার গাড়ি আসা-যাওয়া করে হাজারেরও বেশি। সেগুলিরও অধিকাংশ রাখা হয় রাস্তার পাশে। সিটিসেন্টার এলাকায় চারটি পার্কিং জোন রয়েছে। সেগুলিতে মোট দু’শো চার চাকা গাড়ি এবং পাঁচশো মোটরবাইক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বেনাচিতি বাজার এলাকায় দিনে গড়ে প্রায় দু’হাজার মোটরবাইক আসে। গাড়ি আসে শ’পাঁচেক। কিন্তু সেখানে মাত্র একটি পার্কিং জোন আছে। যেখানে সব মিলিয়ে একশোটির বেশি গাড়ি রাখা যায় না। দুর্গাপুর বাজারে দিনে গড়ে দেড় হাজারের বেশি মোটরবাইক ও প্রায় পাঁচশো চার চাকার গাড়ি আসে। কিন্তু সেখানে কোনও পার্কিং জোনই নেই। দুর্গাপুর বাজার কমিটির এক কর্তা জানান, নির্দিষ্ট কোনও পার্কিং জোন না থাকায় রাস্তার উপরেই যানবাহন রাখেন ক্রেতারা। দুর্গাপুর সুর্বাবান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে প্রফুল্ল ঘোষ বলেন, “বেনাচিতির মতো বাজারে পার্কিংয়ের সমস্যা তীব্র। ফলে যানজটও নিত্য ঘটনা।”
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পার্কিং জোন থাকলেই যে সবাই গাড়ি রাখেন, তা নয়। পার্কিং জোনগুলি মূলত দেখভাল করে বেসরকারি সংস্থা। চড়া ভাড়ার অভিযোগে অনেকেই সেখানে গাড়ি ও মোটরবাইক রাখতে চান না। ফলে, অনেক সময়ে পার্কিং জোন ফাঁকা থাকলেও রাস্তার ধার গাড়িতে ভরে থাকতে দেখা যায়। সিটিসেন্টারের একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থার কর্মী নিগমানন্দ মজুমদার বলেন, “সপ্তাহে ছ’দিন মোটরবাইক নিয়ে অফিসে আসি। প্রতি দিন ভাড়া দিয়ে পার্কিং করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে অফিসের সামনে রাস্তার ধারে রাখি।” আর এক বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক সীমান্ত সাধুর কথায়, “দিনে একাধিক বার সিটিসেন্টারে আসতে হয়। প্রতি বার ভাড়া দিয়ে পার্কিং জোনে গাড়ি রাখা সম্ভব নয়।”
পুরসভার প্রাক্তন মেয়র রথীন রায় জানান, আগের পুরবোর্ড ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে দুর্গাপুর বাজার এলাকায় পার্কিং জোন তৈরির জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আবেদন করেছিল। জমি পেলে তা পুরসভা কিনে সেখানে পার্কিং জোন তৈরি করতে রাজি ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সে ভাবে এগিয়ে না আসায় তা হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। জায়গার অভাবে বেনাচিতি বাজারেও আর একটি পার্কিং জোন করা যায়নি বলে দাবি তাঁর।
আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “বেআইনি পার্কিং করা হলে নিয়মানুযায়ী পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করে থাকে।” তিনি জানান, মাঝে-মাঝেই ক্রেন ও লরি নিয়ে অভিযান চালানো হয়। মাইকে প্রচারও করা হয়। পুরসভার বর্তমান মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি নিয়ে এডিডিএ-র সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তা ছাড়া নতুন মার্কেট কমপ্লেক্স বা বাণিজ্যিক বহুতল নির্মাণের সময়ে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.