জল বাড়ছেই ফুলহারে। রবিবার অসংরক্ষিত এলাকায় এই নদী বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। জলস্তর না কমায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়নি। রতুয়ায় দুর্গতদের ত্রাণ, নৌকা ও পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা হলেও হরিশ্চন্দ্রপুরে ত্রাণ দূরের কথা প্রশাসনের কর্তার দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। আবেদন জানিয়েও ত্রাণ না মেলায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশ করে রাজ্যের ত্রাণমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেন। বিধায়ক বলেন, “সামান্য কয়েকজনকে ত্রিপল দেওয়া হয়। দুর্গতদের অবস্থা এখন ভয়ানক। প্রশাসনকে বলে ফল হয়নি। আজ, সোমবার কলকাতা গিয়ে ত্রাণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা পরিস্থিতি জানাব।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ফুলহার ২৮.০২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বইছে। যা অরক্ষিত এলাকায় লালসীমা ও সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সীমার থেকে ৫৯ সেন্টিমিটার বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় ফুলহারের জল ৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। মালদহের নির্বাহী বাস্তুকার (মহানন্দা) সুজিত কুমার বসু বলেন, “ফুলহারের জল বাড়ছে। দু-এক দিনের মধ্যে জল কমার সম্ভাবনা রয়েছে।”
ফুলহারের জল উপচে গত দেড়মাসে তৃতীয় বার প্লাবিত হয়েছে রতুয়ার পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের ইসলামপুর ও দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টিরও মত এলাকা। উত্তর-দক্ষিণ ভাকুরিয়া, কাওয়াডোল, মীরপাড়া, রশিদপুর, দিয়াড়া এলাকায় ঘরদোড়ে জল ঢুকে পড়েছে। চারদিকে জল জমে থাকায় কাজকর্মও জুটছে না বাসিন্দাদের। পাশাপাশি পানীয় জলেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত শনিবার রতুয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়েছিলেন মালদহের জেলাশাসক। হরিশ্চন্দ্রপুরের বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রশাসনের কারও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিধায়ক। হরিশ্চন্দ্রপুর-২ বিডিও কৌশিক পাল বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “দুর্গতদের প্রত্যেককেই ত্রাণ দেওয়া হবে। রতুয়ায় পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুরেও দুর্গতরা ত্রাণ পাবেন।”
অন্য দিকে, গঙ্গার জল কমতে শুরু করলেও এখনও মানিকচক ও কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার (গঙ্গা) অমরেশ কুমার সিংহ বলেন, “গঙ্গার জল কমতে শুরু করেছে। বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের জল দ্রুত কমছে।” তবে মানিকচক ও কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী এই দিন বলেন, “নানা জায়গায় ১০ দিন থেকে ১ মাসের বেশি দিন ধরে লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি হয়ে আছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন কয়েক দিন ত্রাণ দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে প্রশাসন দলবাজি করছে। দল না দেখে দুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” জেলাশাসক জানান, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম তিন দলই এখন ত্রাণ নিয়ে দলবাজির অভিযোগ করছেন। দলবাজির অভিযোগ বন্ধ করতে প্রত্যেক বিডিওকে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
|