জাতীয় সড়কে পথ-কর বাঁচাতে বাসের জেলাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশনে উদ্যোগী উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। সব বাস রেজিস্ট্রেশন কোচবিহার জেলা থেকে করানোর প্রথা চলে আসছে। ফলত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বাসগুলি পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় পেলেও এনবিএসটিসি সেই ছাড়ের সুযোগ পাচ্ছে না।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নিয়মে কোনও বাস যে জেলায় চলাচল করে, সে জেলায় তার রেজিস্ট্রেশন থাকলে রেজিস্ট্রেশন ফি-র পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। নিগমের সদর দফতর কোচবিহার জেলাতেই সংস্থার বাসের রেজিস্ট্রেশন থাকায় সিংহভাগ বাস ওই ছাড় পাচ্ছে না। দিল্লিতে দৌড়ঝাপ করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে সমস্যা মেটাতে জেলাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন করানোর কথা ভাবছেন সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিগমের বাসের ক্ষেত্রে টোল ট্যাক্সে বিশেষ ছাড় দেওয়া নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষর চিফ জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে সংস্থার এমডি জয়দেব ঠাকুর জানান। তিনি বলেছেন, “ওঁরা পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়ের ব্যাপারে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। ভবিষ্যতের সমস্যা এড়ানোর কথা মাথায় রেখে সংস্থার সমস্ত বাসের জেলাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন করানোর কথাও ভাবছি।”
এনবিএসটিসি-র এক সূত্রেই জানা গিয়েছে, নিগমের মোট বাসের সংখ্যা ৬৭০টি। কোচবিহার সদর থেকে সমস্ত বাসের রেজিস্ট্রেশন করাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে টোল টাক্স বাবদ প্রতি বছর গড়ে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে। জেলাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন করে বাস চালানো হলে ওই খরচ অন্তত ৬ লক্ষ টাকা কমবে। বাম আমলে তো বটেই সরকার বদলের পরেও সমস্যা মেটাতে গরজ দেখানো হয়নি বলেও কর্মী মহলের একাংশের অভিযোগ।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী পরিচালন বোর্ডের মিটিংয়ে বাসের জেলাভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন করানোর ব্যাপারে প্রস্তাব দিতে পারেন এমডি। তার পরেই রাজ্য পরিবহণ দফতরের অনুমোদন চেয়ে আর্জি জানানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। পাশাপাশি সংস্থার কর্মীদের ‘গ্রস’ বেতনের ৭৫ শতাংশের বদলে ‘নেট’ বেতনের ৭৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছিল সরকার। ওই ব্যাপারেও পরিবহণ দফতরে চিঠি পাঠানো শুরু করেছেন এমডি। অর্থ দফতরের ওই দাবি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে নিগমের এমডি জয়দেব ঠাকুর বলেন, “বিষয়টি পরিবহণ দফতরে কেউ জানাননি। আমি চিঠি দিয়েছি। অর্থ দফতরের ছাড়পত্র মিললে বাড়তি আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যাবে।” এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, বর্তমান এমডি সংস্থার আর্থিক বিষয় ছাড়াও বেআইনি পদোন্নতি এবং বিধি ভেঙে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অডিট করানোর বিষয় নিয়ে অনেকটা এগিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দু’টি অডিট সংস্থার সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। সংস্থার বেদখল হয়ে যাওয়া জমির নথিপত্র উদ্ধারেও তদ্বির শুরু করেছেন এমডি। ই-টিকিট চালু ও অনলাইন টিকিট বুকিং চালুর প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে। এমনকী কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিয়মিত ভাবে টাকা জমা না হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করেছেন তিনি। এমডি বলেন, “এনবিএসটিসি-র দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের কথা ভেবে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।” |