রোগীর আত্মীয়-প্রতিবেশীরা মারধর করেছিলেন এক চিকিৎসককে। আতঙ্কিত ওই চিকিৎসক রবিবার হাসপাতালে আসেননি। হাসপাতালের বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে না পারলে হাসপাতালে আসবেন না বলেও জানিয়েছেন।
শনিবার রাতে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালের এই ঘটনা ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন হুগলির সিএমওএইচ তনিমা মণ্ডল। তিনি বলেন, “রবিবার দফতরে ছুটি থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সোমবার তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
কী হয়েছিল শনিবার রাতে?
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মগরায় মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আহত এক যুবককে চিকিৎসার জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে কিছু লোকজন। ইমার্জেন্সিতে কতর্ব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। রোগীর মাথায় গুরুতর চোট ছিল। মুখ ও কান দিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অস্থিবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরবিন্দ বালা ওই যুবককে দেখে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় স্থানান্তরিত করার কথা বলেন।
তা শুনেই খেপে ওঠে রোগীর সঙ্গে আসা আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। অরবিন্দবাবু তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করার থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়াই তাঁর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। কিন্তু সে সব যুক্তি মানতে চায়নি উত্তেজিত জনতা। চিকিৎসকের জামার কলার ধরে চড়-থাপ্পর মারা শুরু হয়। মারতে মারতে অরবিন্দবাবুকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসে জনতা। ঘটনা দেখে কর্তব্যরত সেবিকা সাহায্যের জন্য চিৎকার শুরু করেন। অরবিন্দবাবুর অভিযোগ, হাসপাতালে কর্তব্যরত পাহারাদারেরা কেউই এগিয়ে আসেনি। রোগীর সঙ্গে কলকাতায় যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিল অরবিন্দবাবুকে। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় ফের এক প্রস্থ হেনস্থা করা হয় তাঁকে। হাসপাতালের তরফে ফোন যায় চুঁচুড়া থানায়। পুলিশ আসার আগেই অবশ্য জখম যুবককে নিয়েই পালায় হামলাকারীরা।
রাতেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন অরবিন্দবাবু। কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেন। রবিবার সকালে এ ব্যাপারে হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান অরবিন্দবাবু। তিনি বলেন, “যে ভাবে মারধোর খেতে হল, তাতে এখানে আর কাজ করার মানসিকতা নেই। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরাও কেউ এগিয়ে আসেননি সাহায্যের জন্য। এই অবস্থায় তো জীবনের কোনও নিরাপত্তাই থাকছে না। হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমি চুঁচুড়া হাসপাতালে কাজ করব না।”
হাসপাতালের সুপার শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “উনি ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালের তরফে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি নিয়ে আতঙ্কিত চিকিৎসকদের একাংশও। এর আগেও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে এই হাসপাতালে। ওই চিকিৎসকদের বক্তব্য, দিনের পর দিন দিন এমন পরিবেশে কাজ করতে করতে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা উচিত। |