পুরভোটে ডায়মন্ড হারবার: অভিযোগ রাস্তা, যানজট, নিকাশি নিয়েও |
চার বছরেও শেষ হয়নি পানীয় জল প্রকল্পের কাজ
দিলীপ নস্কর • কলকাতা |
নদীর জল শোধন করে বাড়িতে বাড়িতে সরবরাহ করার কথা ছিল পুরসভার। কিন্তু ২০০৯ সালের ওই প্রকল্প এখনও বিশবাঁও জলে। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড-সহ বেশ কিছু এলাকায় আজও পানীয় জলের সঙ্কটের সমাধান হয়নি। পানীয় জলের মতো জরুরি ক্ষেত্রেও প্রকল্পের কাজ না শেষ হওয়ায় এ বার পুরভোটে স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে তৃণমূল। অন্যদিকে, পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে এটাই বিরোধী দলগুলির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। |
|
ডায়মন্ড হারবার রোডে নিত্য এমনই যামজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। |
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরপত্বপূর্ণ ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। নথিভুক্ত বাসিন্দারা ছাড়াও ভাড়াটিয়া, নতুন বাড়ি তৈরি করে বাস করছেন অথচ এখনও পুর এলাকার বাসিন্দা হিসাবে শংসাপত্র পাননি এমন নাগরিকদেরও পুর পরিষেবা দিতে হয়। সব মিলিয়ে পুর পরিষেবার আওতায় রয়েছেন লক্ষাধিক বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। গরমের সময় যা চরমে পৌঁছয়। এ হেন পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পুরবোর্ড উদ্যোগী হয়। সেই মতো ২০০৮ ও ২০০৯ আর্থিক বছরে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর অধীনে শহরে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ছোট বাজেটের মাঝারি শহর (ইউআইডিএসএসএমটি) প্রকল্পে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। সেই মতো ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজের পিছনে হুগলি নদী লাগোয়া সেচ দফতরের প্রায় ২০ বিঘা জমির উপর ২০০৯ সালের প্রথম দিকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঠিক হয় নদী থেকে জল প্রথমে ট্যাঙ্কে তোলা হবে। ওই ট্যাঙ্ক থেকে জল শোধন হয়ে চলে যাবে শহরের আরও তিন ট্যাঙ্কে। সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল পৌঁছে যাবে বাড়িতে বাড়িতে। |
“গাফিলতির জন্যই এতদিনেও পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শেষ করতে
পারেনি পুরসভা। ফলে জলের সমস্যা থেকেই গিয়েছে।”
সময় নাইয়া (সিপিএমের জোনাল সম্পাদক) |
“জল প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পাইপ লাইন বসানোর
কাজও শুরু হয়েছে। তিনটি ট্যাঙ্কের মধ্যে একটি বসে গিয়েছে।”
পান্নালাল হালদার (বিদায়ী পুরপ্রধান) |
|
প্রকল্প শুরুর পর চার বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজও পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন পুর এলাকার বাসিন্দারা। আর এই প্রকল্প নিয়েই পুরভোটের মুখে শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিরোধী দলগুলির চাপানউতোর। গত ১০ বছর ধরে পুরসভা দখলে ছিল তৃণমূলের। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ না করতে পারার দায় স্বাভাবিক ভাবেই চেপেছে বিদায়ী তৃণমূল কংগ্রেস বোর্ডের। আর এই বিষয়টাকেই মূল হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি। পুরসভা যে পানীয় জল পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিরোধী প্রার্থীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সে কথা তুলে ধরছে। তুলে ধরছে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যর্থতার ১০ বছরের খতিয়ান। যার মধ্যে পানীয় জলের সমস্যা ছাড়াও রয়েছে নিকাশি নালার অভাব, যানজট সমস্যা, বস্তি উন্নয়ন, রাস্তাঘাট সংস্কার। |
|
অসমাপ্ত পানীয় জল প্রকল্প। |
যদিও ব্যর্থতা নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণকে একপ্রকার নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। জলপ্রকল্প নিয়ে তাঁরা পাল্টা প্রচারে নেমেছেন সিপিএমের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের যুক্তি, যে সময় ওই প্রকল্পের টাকা অনুমোদন হয় তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বামফ্রন্টের সরকারের বাধায় সময়মতো প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। ফলে অনেক দেরিতে কাজ শুরু হয়। তবে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। আগামীতে তাঁরা ফের পুরসভায় ক্ষমতায় ফিরলে কয়েক মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।
প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রীতার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে অবশ্য নারাজ সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, এই প্রকল্পের খরচের ৮৫ শতাংশ কেন্দ্র দেয়। ১৫ শতাংশ দেয় রাজ্য সরকার। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার ব্যর্থতার কারণেই প্রকল্পের কাজ এগোয়নি। পুর এলাকায় তিনটি ট্যাঙ্ক তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও এতদিনে একটি মাত্র তৈরি হয়েছে। সেটি ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালের মাঠে। বাকি দুটি কোথায় হবে কেউ জানে না। পাইপ লাইন পাতার কাজও শুরু হয়নি। ডায়মন্ড হারবার সিপিএম-এর জোনাল কমিটির সম্পাদক সময় নাইয়া বলেন, “গাফিলতির জন্যই এত দিনেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি পুরসভা। ফলে পানীয় জলের সমস্যা থেকেই গিয়েছে।”
পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের পান্নালাল হালদার অবশ্য বলেন, “জল প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পাইপ লাইন বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। তিনটি ট্যাঙ্কের মধ্যে একটি ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। আরও একটি বসানোর কাজ চলছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তৃতীয়টি হবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রকল্পের কাজ বাকি বলতে নদী থেকে জল তোলার জায়গা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে পরে তার সমাধান হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতায় ফিরলে কয়েক মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করে জল সরবরাহ করতে পারব।”
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|