মেয়ের প্রতি কটূক্তির প্রতিবাদ করতে গিয়ে জয়নগরের শ্রীকৃষ্ণনগর গ্রামের দিনমজুর নারায়ণ প্রামাণিক খুন হওয়ার পরে দু’দিন কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন নিহতের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা। রবিবার রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা ওই গ্রামে গিয়ে নিহতকে দলীয় সমর্থক বলে দাবি করেন এবং তাঁকে খুনের ঘটনায় সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন। সিপিএম অভিযোগ মানেনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে জোরদার তল্লাশি চলছে। শীঘ্রই তাদের ধরা হবে।
শুক্রবার নারায়ণবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পড়শি বাসন্তী অধিকারী এবং তাঁর ছেলে বাসুদেব অধিকারী-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয় থানায়। অভিযোগে জানানো হয়, বছর তিনেক আগে নারায়ণবাবুর মেয়ের শ্লীলতাহানি করে বাসুদেব-সহ চার যুবক। গ্রামে সালিশিতে বিষয়টির মীমাংসা হলেও ওই যুবকেরা নারায়ণবাবু এবং তাঁর মেয়েকে
প্রায়ই কটূক্তি করছিল। তার প্রতিবাদ করাতেই নারায়ণবাবুকে খুন করা হয়। মদত দেন বাসন্তীদেবী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণবাবু বাতাসা কিনতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময়ে বাসুদেব তাঁকে লক্ষ করে কটূক্তি করে এবং ঢিল ছোড়ে বলে অভিযোগ। শুক্রবার দুপুরে সেই ঘটনার কথা নারায়ণবাবু বাসুদেবের মাকে জানাতে যান। তার কিছু ক্ষণ পরেই বাসুদেব চেলাকাঠ নিয়ে নারায়ণবাবুর বাড়িতে চড়াও হয় এবং তাঁকে মারতে মারতে বের করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে গ্রামবাসীরাও চলে আসেন। অভিযোগ, বাসুদেব চেলাকাঠ দিয়ে নারায়ণবাবুর মাথায় বাড়ি মেরে পালায়। নারায়ণবাবুর বাড়ির কাছেই ওই ঘটনা ঘটে। তাঁকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তিনি মারা যান। নারায়ণবাবুর স্ত্রী বলেন, “তিন বছর আগের একটা ঘটনার রাগ যে বাসুদেব পুষে রাখবে তা ভাবতে পারিনি। ওর কটূক্তি স্বামী মানতে পারছিলেন না। তাই প্রতিবাদ জানান। সেই কারণে এই খুন। অবিলম্বে বাসুদেবদের গ্রেফতার করা হোক।”
একই দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরাও। তাঁরা বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের বিরুদ্ধে গ্রামে নানা বিষয়ে খবরদারি এবং অন্য মেয়েদেরও কটূক্তির অভিযোগ তুলেছেন। তবে, তাকে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে কখনও দেখা যায়নি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ দিন অভিযুক্তদের প্রত্যেকের বাড়িই ছিল তালাবন্ধ। থমথমে পরিবেশের মধ্যে দেখা গিয়েছে পুলিশ পিকেট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে এক গ্রামবাসীকে মারধরের অভিযোগে বাসুদেবকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সে জামিন পায়।
তবে, বাসুদেবের বিরুদ্ধে তিন বছর আগে নারায়ণবাবুর মেয়ের শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের হয়নি। কয়েক জন গ্রামবাসী জানান, তখন স্থানীয় সিপিএম কার্যালয়ে সালিশি হয়। বাসুদেব-সহ তিন জনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই রাগেই এত দিন বাসুদেবরা নারায়ণবাবু এবং তাঁর মেয়েকে কটূক্তি করছিল। সেই ঘটনা নিয়ে সিপিএমের জয়নগর জোনাল কমিটির সদস্য দিলীপ হালদার দাবি করেন, “আমাদের কার্যালয়ে সালিশি হয়নি। গ্রামে সালিশি হওয়ার পরে নারায়ণবাবুরা ঘটনার কথা আমাদের জানাতে আসেন। আমরা পুলিশের কাছে যেতে বলি। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওঁরা যাননি।”
এ দিন সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী-সহ জেলা তৃণমূল নেতারা নিহতের বাড়িতে যান। মন্ত্রী নিহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাসও দেন। তিনি বলেন, “নারায়াণবাবু আমাদের দলীয় সমর্থক ছিলেন। সিপিএমের দুষ্কৃতীরাই তাঁকে খুন করল।”
এই অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী
বলেন, “আমাদের দলের নাম জড়িয়ে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। আমরাও
চাই প্রশাসন তদন্ত করে দ্রুত অপরাধীদের ধরুক।”
|