ঈদে নতুন জামা না কিনে সেই টাকায় জুতো ও ট্র্যাকস্যুট কেনেন বহরমপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাসিমা খাতুন। ঝুলন গোস্বামীর মত পেস বোলার হওয়ার স্বপ্ন বুনে চলেছে বহরমপুর মহারানি কাশীশ্বরী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা বণিক। সাগরদিঘির প্রত্যন্ত গ্রাম বয়ার থেকে প্রায় ৬০ কিমি বাসে বহরমপুর যাতায়াত করেন একাদশ শ্রেণির রুখসানা খাতুনও।
জেলা মহিলা ক্রিকেট দলে যে ১৫ জন রয়েছেন, তার মধ্যে ওই তিন জন অন্যতম। ক্রিকেটের টানে রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহরমপুরের এফইউসি ক্লাব ময়দানে ২২ গজ পিচে হাজির হন তাঁরা। প্রতি দিন বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অনুশীলন চলে। প্রশিক্ষক প্রবীর ভট্টাচার্য। সিএবি আগামী ডিসেম্বরে আন্তঃজেলা মহিলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। প্রতিনিধিত্ব করবেন ওই ১৫ জন।
মুর্শিদাবাদ ডিষ্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তরুণ দত্ত বলেন, “সিএবি ২০১২ সাল থেকে জেলা মহিলা ক্রিকেট দল গড়ার কথা জানায়। কিন্তু কোনও কারণে গত বছর জেলা মহিলা ক্রিকেট দল গড়ে তোলা যায়নি। গত ৩১ অগস্ট বৈঠকে সিএবি মহিলা ক্রিকেট দল গড়ার ব্যাপারে বলে। এর পরেই বহরমপুর ও লাগোয়া বিভিন্ন স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে ক্রিকেট আগ্রহী ছাত্রীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেই মত গত ৬-৭ সেপ্টেম্বর ওই ১৫ জন ছাত্রী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।” |
সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলেন, “কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হুগলি ও হাওড়া প্রতিনিধিরা মহিলা ক্রিকেট দল গড়ার ব্যাপারে সম্মতি জানায়। বাকি ৮টি জেলার মধ্যে কোনও জেলায় দুজন, কোনও জেলায় আবার চার জন মহিলা ক্রিকেটার রয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বাকি ৮টি জেলার সম্মিলিত মহিলা ক্রিকেটারদের নিয়ে আরও দুটি দল তৈরি করে মোট ১২টি মহিলা ক্রিকেট দল গঠন করা হবে। তাদের নিয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পরে আন্তঃজেলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন হবে।”
সিএবি’র ওই কর্তা জানান, ওই ১২টি দলকে তিন বা চারটে জোনে ভাগ করে বিভিন্ন জেলায় ওই খেলা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ওই প্রতিযোগিতার শুরুর মাঝে ওই ক্রিকেটারদের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেড় থেকে দু’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বন্দোবস্ত করবে সিএবি। প্রশিক্ষণের জন্য জেলায় মহিলা প্রশিক্ষকও পাঠানো হবে। ক্রিকেটারদের খেলার যাবতীয় সরঞ্জামও দেবে সিএবি।
জেলা মহিলা ক্রিকেটারদের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলনকে। জেলার মহিলা ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ঝুলন জেলা সফরও শুরু করেছেন। মুর্শিদাবাদের মহিলা ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বহরমপুরে আসছেন। মহিলা ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি সেমিনারেও অংশ নেবেন তিনি। এ ছাড়াও ওই সেমিনারে থাকবেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য মিঠু মুখোপাধ্যায়।
বহরমপুর লাগোয়া নওদাপানুরের সলুয়াডাঙা থেকে প্রতি দিন দেড় ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে বহরমপুরে এফইউসি ক্লাবে অনুশীলন করতে আসছেন নাসিমা। তাঁর কথায়, “আমি ক্রিকেট খেলি বাবার পছন্দ নয়। ক্রিকেটের অনুশীলনে আসি বলে বাবা আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমি খেলা বন্ধ করিনি। ঈদের সময়ে চুড়িদার কেনার জন্য বাড়ি থেকে এক হাজার টাকা দিয়েছিল। আমি চুড়িদার না কিনে জুতো ও ট্র্যাকস্যুট কিনেছি।” তাঁর কথায়, “আমি খুব ছেলেবেলা থেকে স্বপ্ন দেখি ক্রিকেটার হওয়ার।” আবার রুকসানার পরিবারের সকলেই চান তিনি বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠুন। |