মোবাইল-কর্মী খুনের রহস্যভেদ মোবাইলের অস্ত্রেই
সাড়ে পাঁচ মাস আগে খুন হন এক যুবক মোবাইল-কর্মী। খোয়া যায় তাঁর দু’টি মোবাইল।
আবার একটি মোবাইল ফোনের সূত্রেই রহস্যভেদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করলেন গোয়েন্দারা।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, বছর তিরিশের কৃশানু দত্ত একটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার রিজিওনাল ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। গত ১৫ মার্চ রাতে তিনি খুন হন। তদন্তে নেমে সিআইডি দেখে, হত্যার পরে অবিবাহিত কৃশানুর দামি আংটি, ঘড়ি, টাকা-ভর্তি মানিব্যাগ, এমনকী মোটরসাইকেল সব কিছুই রয়েছে। আততায়ীরা শুধু নিয়ে গিয়েছে তাঁর দু’টি মোবাইল ফোন। তার মধ্যে একটি মোবাইলই গোয়েন্দাদের ওই হত্যারহস্যের কিনারা করতে সাহায্য করেছে। সিআইডি সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীরা ছিল মোট চার জন। সকলেই সম্প্রতি ধরা পড়েছে। লুঠপাটে বাধা পেয়েই তারা কৃশানুর মাথায় চপারের কোপ মেরে তাঁকে খুন করে বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা।
হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দারা তখন সূত্র হাতড়াচ্ছিলেন। টাকা এবং অন্যান্য দামি জিনিসপত্র অকুস্থলে পড়ে থাকায় খুনের কারণ হিসেবে লুঠপাটের তত্ত্বও ঠিক দাঁড় করানো যাচ্ছিল না। সেই অবস্থায় কৃশানুর খোয়া যাওয়া মোবাইল থেকে সূত্র মিলতে পারে, সেই আশায় সিআইডি ওই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে। কৃশানুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে ছিল কৃষ্ণনগরের অদূরে ভাতজংলা এলাকায় রাস্তার ধারে। তদন্তকারীদের কেউ কেউ সন্দেহ করেছিলেন, খুনের পিছনে স্থানীয় কারও হাত থাকতে পারে এবং কৃশানুর খোয়ানো মোবাইল সে নতুন সিমকার্ড দিয়ে ব্যবহার করতে পারে। সিমকার্ড পাওয়া যায়, ভাতজংলায় এমন দোকানের সংখ্যা সাত-আটটি। নতুন সিমকার্ড বিক্রি হওয়া মাত্র তার নম্বর সিআইডি-কে জানিয়ে দিতে বলা হয় দোকানগুলিকে। উদ্দেশ্য, ওই সিমকার্ড কোন আইএমইআই নম্বরের মোবাইল ফোনসেটে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জেনে নেওয়া। তার আগে কৃশানুর দু’টি মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরই পেয়ে গিয়েছিল সিআইডি। কিন্তু খুনের ঘটনার পর থেকে ওই ফোন দু’টি চালু করা হয়নি। ওই ফোন দু’টির যে-কোনও একটিতে সিমকার্ড ভরে চালু করলেই তাঁরা কিছুটা এগোতে পারবেন বলে আশা ছিল গোয়েন্দাদেরা। কিন্তু দু’টি ফোনের একটিও চালু হয়নি।
তা হলে কী ভাবে দুষ্কৃতীদের হদিস পেল সিআইডি?
খুনের মাস দেড়েক পরে হঠাৎই এক দিন একটি সিমের টাওয়ার লোকেশন দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। ফোনের টাওয়ার কখনও ভাতজংলা, কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের ফুলিয়া। কখনও দেখা যাচ্ছে, টানা দু’তিন দিন সেই মোবাইল থাকছে ভাতজংলায়। আবার কখনও ভাতজংলায় কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে ফোনটি চলে যাচ্ছে ফুলিয়ায়। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, শঙ্কু শর্মা নামে ফুলিয়ার দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র ওই সিমকার্ড ব্যবহার করছে। ফুলিয়ার ছেলে ভাতজংলা থেকে সিমকার্ড কিনল কেন, খোঁজখবর শুরু করে সিআইডি। শঙ্কু প্রথমে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। তাকে আটক করে ইন্টারনেটে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাইটে গিয়ে কৃশানুর সেই দু’টি মোবাইল ফোনের ছবি দেখিয়ে বলা হয়, এই রকম দু’টি সেটের খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা। তার মধ্যে একটি ফোনের ছবি দেখেই শঙ্কু বলে ওঠে, এই ফোন সে ভাতজংলাতেই এক জনের কাছে দেখেছে। শঙ্কু জানায়, ভাতজংলার এক কিশোরীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং সে-ই তাকে সম্প্রতি ওই মোবাইল ফোনটি দেখায়। ভাতজংলার বছর তেইশের যুবক রঞ্জিত দুর্লভের বোন ওই কিশোরী।
খোঁজ নিয়ে সিআইডি দেখে, তল্লাটে রঞ্জিতের ব্যাপক বদনাম আছে। প্রকাশ্যে নেশা করা, মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ ইত্যাদি কারণে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সে প্রহৃত হয়েছে একাধিক বার। রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু প্রথমে সে মোবাইলের বিষয়টি অস্বীকার করে।
দিন পাঁচেক পরে রঞ্জিতের বাবা-মা এবং শঙ্কুর মা-বাবাকে ভবানী ভবনে ডাকা হয়। চাপের মুখে রঞ্জিতের মা স্বীকার করেন, কৃশানু-হত্যার রাতে রঞ্জিত বাড়ি ছিল না এবং পরের দিন ভোরে সে দু’টি মোবাইল নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল। সিআইডি তল্লাশি চালিয়ে সেই বাড়ির একটি ঘুলঘুলি থেকে কাপড়ে মোড়া অবস্থায় কৃশানুর মোবাইল দু’টি উদ্ধার করে।
কী ভাবে সে মোবাইল পেল?
জেরায় রঞ্জিত জানায়, সে এবং তার তিন সঙ্গী শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগরে খুব ভোরে ঢোকা প্রথম লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে লুঠপাট করে। ১৫ মার্চ রাতেও তারা লুঠপাটের জন্য ভাতজংলায় অপেক্ষা করছিল। মোটরসাইকেলে কৃশানুকে আসতে দেখে তারা পথ আটকায়। লুঠ করতে গেলে কৃশানু বাধা দেন। তখনই রানা দাস নামে রঞ্জিতের এক সঙ্গী তাঁর মাথায় পরপর চপারের বাড়ি মারে বলে অভিযোগ। কৃশানুর আর্তনাদে আশপাশের লোকজন জেগে যাওয়ায় আততায়ীরা শুধু দু’টি মোবাইল নিয়েই পালিয়ে যায়। অন্যান্য জিনিস, টাকা বা মোটরবাইক নিতে পারেনি।
রঞ্জিত, রানা এবং তাদের অন্য দুই সঙ্গী সঞ্জয় দাস ও উদয় দুর্লভকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, “আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত এক রকম কাকতালীয় ভাবেই রহস্যভেদ হল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শঙ্কুর কোনও রকম যোগ নেই। তবে লুঠ হওয়া একটি মোবাইল সে দেখেছিল। সেই সূত্রেই জট খুলল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.