রবিবার ভোর চারটে। বাগবাজার বাটার কাছে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছিলেন ৩ পুলিশকর্মী। পুলিশ দেখে গতি বাড়িয়ে দেয় শ্যামবাজারগামী একটি মিনিডর। রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে এসে একটি ট্রেলারকে ওভারটেক করে ধাক্কা মারে কর্তব্যরত এএসআই ইন্দ্রজিৎ হালদারকে (৫৫)। মাথায় গুরুতর চোট-সহ ইন্দ্রজিৎবাবুকে মল্লিকবাজারের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। ২৪ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। মিনিডরের চালক সুমন্ত্র ঘোষ গ্রেফতার হয়েছে।
|
ইন্দ্রজিৎ হালদার |
গত মাসে বেকবাগানে মোটরবাইক থামাতে গিয়ে আহত হন এক কনস্টেবল। লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের নিরাপত্তায় প্রতি রাতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলিতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চলে। রাতে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচল আটকাতে পথের মাঝখানে বসানো হয় ‘গার্ড রেল’। তবে গার্ড রেল লাগিয়ে তল্লাশি নিয়ে অনেক সময়েই সাধারণ মানুষ ও গাড়িচালকদের অভিযোগের মুখে পড়ে পুলিশ। অভিযোগ, গার্ড রেল বসিয়ে তল্লাশির সুযোগ নিয়ে রাতে চালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নেয় পুলিশ। শহরের রাস্তায় পুলিশের একাংশ যে ঘুষ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল পুলিশকর্তারাও। এই প্রবণতা কমাতে গত সপ্তাহের ‘ক্রাইম কনফারেন্স’-এ প্রতিটি গার্ড ও থানার ওসিদের সতর্ক করেন সিপি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। এ ব্যাপারে থানা ও ট্রাফিক গার্ডের ওসিদেরই নজর রাখতে বলা হয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তার দায়ও যে ওসিদের উপরেই বর্তাবে, তা-ও বলে দেন কমিশনার।
কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলেই পুলিশের একাংশের বক্তব্য। অভিযোগ, গার্ড রেল বসিয়ে তল্লাশির সময়ে ঘুষ নেওয়া চলছেই। অনেক সময়েই টাকা না দিতে চেয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পালাতে চেষ্টা করছেন চালকেরা। কলকাতার বিভিন্ন মোড়ে রাতের দিকে এই চিত্র চোখে পড়েছে সাধারণ মানুষেরও। রবিবারও সে রকম কিছু ঘটেছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা জানান, রাতে টাকা তুলতে গিয়ে কয়েক বছর আগে রেড রোডে মৃত্যু হয় কিছু পুলিশকর্মীর।
পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামপুকুর থানার এএসআই ইন্দ্রজিৎবাবু এক কনস্টেবল ও এক হোমগার্ডকে নিয়ে ডিউটি করছিলেন। রাস্তার মাঝখানে ছিল একটি ‘গার্ড রেল’। তার ডান দিক দিয়ে যাচ্ছিল একটি ট্রেলার। পুলিশ জেনেছে, ট্রেলারের পিছনেই ছিল মিনিডরটি। আচমকাই সেটি বাঁ দিক দিয়ে ট্রেলারটিকে ওভারটেক করে যেতে চেষ্টা করে। প্রতক্ষ্যদর্শী পুলিশকর্মীরা জানান, ‘গার্ড রেল’-এর বাঁ দিকে ছিলেন ইন্দ্রজিৎবাবু। মিনিডরটি সোজা তাঁকে ধাক্কা মারে।
পুলিশ জানায়, গত বছরের গোড়ার দিকে ট্রাফিক পুলিশ থেকে এএসআই হয়ে শ্যামপুকুর থানায় যোগ দেন ইন্দ্রজিৎবাবু। তাঁর বাড়ি ডায়মন্ড হারবারের আব্দুলপুরে। দুর্ঘটনার পরেই খবর দেওয়া হয় ইন্দ্রজিৎবাবুর স্ত্রী ও ছেলেকে। তাঁর ছেলে স্থানীয় একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। রবিবার সে জানায়, শনিবার বিকেলে ডায়মন্ড হারবারের বাড়ি থেকে বেরোন ইন্দ্রজিৎবাবু। বলেছিলেন, নাইট ডিউটি করে রবিবার বাড়ি ফিরবেন।
দুর্ঘটনায় পুলিশকর্মীর আহত হওয়ার খবর পেয়ে এ দিন হাসপাতালে যান সিপি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-সহ কলকাতা পুলিশের একাধিক কর্তা। সকাল থেকেই তাঁর চিকিৎসার দেখভাল করার জন্য হাসপাতালে ছিলেন শ্যামপুকুর থানার ওসি-সহ অন্য সহকর্মীরা। |