খেলতে নেমে প্রথম বলেই ছয়। সঙ্কটের মুহূর্তে পরের কয়েকটি বলও এ পর্যন্ত ভালই সামলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২৯তম এবং বয়সের দিক থেকে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ গভর্নর রঘুরাম রাজন। শুরুতেই চটজলদি নেওয়া তাঁর কয়েকটি সিদ্ধান্তে টাকা আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পরপর তিন দিন উঠেছে শেয়ার বাজার। নতুন এসেই নেওয়া কয়েকটি বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত তাঁর সাহসী মনোভাবের পরিচয় দেয়। প্রথমেই তিনি চেষ্টা করেছেন রোগের উপসর্গগুলিকে প্রশমিত করতে। সাফল্যও পেয়েছেন হাতে-হাতে। অর্থনীতির গভীরে ঢুকে মূল রোগ সারাতে তিনি কতটা সফল হন, তা-ই এখন দেখার।
পরপর তিন দিন উঠে শুক্রবার শেষ বেলায় সেনসেক্স থামে ১৯,২৭০ অঙ্কে। তিন দিনে মুম্বই সূচক বাড়ে ১,০২৯ পয়েন্ট। রঘুরামের সিদ্ধান্তে বাজার ‘মুড’ ফিরে পাওয়ার পর সূচককে শক্তি জোগায় সেন্ট পিটার্সবার্গ সম্মেলনে নেওয়া জি-২০ গোষ্ঠীর কয়েকটি সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি লগ্নিকারীদের আবার ক্রেতার ভূমিকায় বাজারে ফিরতে দেখা যায়। শুক্রবার এরা ১,১০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার কেনে বাজার থেকে। সব রকম শেয়ার বাড়লেও গত দু’তিন দিনে বেশি তেতে উঠেছে তলিয়ে যাওয়া ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি। পাশাপাশি বেড়েছে মূলধনী পণ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং তেল শোধন শিল্পের শেয়ারগুলি। বাড়তে দেখা গিয়েছে কিছু মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ারকেও। এটি একটি ভাল লক্ষণ। সস্তার বাজারে খুচরো লগ্নিকারীদেরও সওদা করতে দেখা যায়। |
অর্থনীতির হাল ফেরাতে শনিবার কিছু সাহসী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এটা অনেকটা সেতু ভেঙে পড়ার পর সারাইয়ের কাজে হাত দেওয়ার মতো। সময় থাকতে পদক্ষেপগুলি কেন করা হয় না, এই প্রশ্ন সবার মনে।
পেনশন বিল লোকসভায় পাশ হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পথ সুগম করা হয়েছে। বিদেশে লগ্নির মাত্রা মাত্র কিছু দিন আগে লগ্নিকারী ভারতীয় সংস্থার নিট সম্পদের ৪০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছিল। সুব্বারাওয়ের এই সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়ে রাজন প্রশাসন তাকে আবার ৪০০ শতাংশে ফিরিয়ে এনেছে।
এই সব সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরকার সংস্কারের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসেনি। মুদ্রার উপরে নিয়ন্ত্রণও
তারা জারি করতে চায় না। শেষ কয়েক দিনে নেওয়া সরকারি পদক্ষেপগুলি স্বাভাবিক ভাবেই সদর্থক বার্তা পাঠিয়েছে লগ্নিকারীদের মনে। তারই প্রভাবে বাজার এতটা তপ্ত। টাকার দামে আবার ঊর্ধ্বগতি।
পরিসংখ্যান আপাতদৃষ্টিতে অনেক সময়ে বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। অর্থনীতি যখন বেশ বিপজ্জনক অবস্থায় চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি বা ‘ক্যাড’ বেড়েই চলেছে, নামছে টাকার দাম, সর্বত্র কমছে উৎপাদন, বেড়ে উঠছে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ সেই পরিস্থিতিতে আশ্চর্যজনক ভাবে বেড়েছে প্রত্যক্ষ কর আদায়। এপ্রিল থেকে অগস্ট এই পাঁচ মাসে দেশে এই কর আদায় বেড়েছে ১৪.৪৩ শতাংশ। কোম্পানি কর সংগ্রহ যেখানে বেড়েছে ১২ শতাংশ, সেখানে ব্যক্তিগত করদাতারা জমা করেছেন ১৯ শতাংশ অতিরিক্ত কর। পরিসংখ্যান আশা জাগায়পরিস্থিতি যতটা খারাপ ভাবা হচ্ছে, বাস্তবে হয়তো ততটা নয়। ১৫ সেপ্টেম্বর অগ্রিম কর জমা করার শেষ দিন। কোন কোম্পানি কত অগ্রিম কর জমা দেয়, তা থেকে তাদের ব্যবসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।
পরিস্থিতি যে-ভাবে পাল্টাচ্ছে, তাতে ভারতের রেটিং হ্রাসের সম্ভাবনা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্ভাব্য উন্নতির নানা দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ভারতের অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারাম বলেছেন, ভারতীয় অর্থনীতির রেটিং কমানোর কোনও জায়গা নেই। কর্পোরেট কর্তাদের একটি বড় অংশওমনে করছেন, অর্থনীতির অধঃপতন সম্ভবত থেমেছে। এ বার ওঠার পালা।
মাত্র সাত দিনের মধ্যে অত্যন্ত খারাপ জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনীতিতে উন্নতির অঙ্কুর দেখা দিয়েছে। এই উন্নতি কিন্তু কোনও অলৌকিক জাদুতে ধরে রাখা যাবে না। অনেকগুলি শুভশক্তি একসঙ্গে কাজ করলে তবেই অর্থনীতির বৃদ্ধি সম্ভব। এই উন্নতি অবশ্যই রাতারাতি আসবে না। এতে বিরাট ভূমিকা সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে অর্থনীতিকে। ২০ সেপ্টেম্বর রঘুরাম রাজনের প্রথম ঋণনীতি পর্যালোচনার দিন। চড়া পণ্যমূল্যের বাজারে সুদ হ্রাসের সম্ভাবনা না-থাকলেও বাজারে অনেকেই নতুন চমক আশা করছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের নতুন কর্তার থেকে।
বাজারে আশার ছোঁয়া লাগলেও প্রতিকূল শর্তগুলি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী এবং মাঝেমধ্যেই তারা টেনে নামাবে শেয়ার বাজারকে। অর্থাৎ বাজারে স্থিতি আসতে এখনও অনেক সময় লাগবে। এই কারণে বাজারে যখনই মাঝারি আকারে উত্থান দেখা দেবে, তখন সন্তোষজনক দাম পেলে কোনও কোনও শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসা যেতে পারে। বাজারের অস্থিরতায় লম্বা সময় ধরে অনেকেই লাভের মুখ দেখতে পাননি। লাভ ঘরে তুলতে হলে, উত্থানে বিক্রি এবং পতনে সওদা করতে হবে।
|