সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের প্রমাণ ১৩টি ভিডিওয়, মার্কিন দাবি
হাত পা ছড়িয়ে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে লোকগুলো। সঙ্গে খিঁচুনি। থরথর করে কাঁপছে বাচ্চারাও। চার দিকে আতঙ্কের চিৎকার।
ওবামা প্রশাসনের হাতে এসেছে এমনই ফুটেজসমেত ১৩টি ভিডিও। সিরিয়ায় গত ২১ অগস্ট যে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, তার কিছু দৃশ্য ধরা রয়েছে তাতে। সেই ভিডিওগুলো মার্কিন কংগ্রেসের বিশেষ কয়েক জন সেনেটর গোপনে দেখেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে সেগুলি যাচাই করে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও সেগুলো দেওয়া হয়েছে। এর অনেকগুলি ইউটিউবে আগেই পোস্ট করা হয়েছিল।
সিরিয়ায় আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ। তাই আসাদকে শাস্তি দিতে সেখানে সীমিত অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু তিনি অভিযান প্রসঙ্গে দেশের অন্দরে-বাইরে খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পাননি। পরম বন্ধু দেশ ব্রিটেনও এই প্রশ্নে সরে গিয়েছে তাঁর পাশ থেকে।
লাগাতার হানাহানির মধ্যে একটু আনন্দের খোঁজ। দামাস্কাসের রাস্তায় আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত তরুণীরা। রয়টার্সের ছবি।
আপাতত মার্কিন কংগ্রেসের সমর্থনের মুখাপেক্ষী ওবামা। সেখানেও কত দূর তিনি সমর্থন পাবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাই মার্কিন কংগ্রেসে ভোটাভুটির ঠিক আগে ওই ভিডিওগুলি প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ওবামার এটাই কৌশল। তিনি ভাবছেন, আম মার্কিন জনতার পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরাও এই ভিডিও দেখার পরে হয়তো বুঝতে পারবেন সিরিয়ায় সীমিত সামরিক অভিযান কতটা জরুরি। প্রাথমিক ভাবে তিন দিন আক্রমণের কথা ভাবছে পেন্টাগন।
সিরিয়ার ভিডিওগুলি বিভিন্ন জায়গা থেকে তোলা হয়েছে। একটি অন্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ভাবে জোড়া। মার্কিন প্রশাসন সেনেটরদের বলছে, ভিডিওগুলি শুধু দেখার জন্য নয়। ওদের চিৎকার শুনুন, বুঝবেন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল। একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, একটি লোক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন একটা বাচ্চার জ্ঞান ফেরাতে। আর একজন এগিয়ে এলেন একটা জলের বোতল হাতে। দু’জনে মিলে বাচ্চাটির মুখ ভিজিয়ে দিলেন জলে। বুকটা যেন সামান্য একটু নড়ল ছেলেটার। কিন্তু হাত দু’টো অসাড় হয়ে পড়ে। নড়াচড়া নেই। আর একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে একটা ঘরের ছবি। যাতে সার বেঁধে শোওয়ানো রয়েছে শিশুদের। লাল, হলুদ, সুবজ, বেগুনি, নীল কত রকম জামার রং। মুখগুলো সব সাদা। কারও দেহে প্রাণ নেই।
সেনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারউওম্যান ডায়ান ফেনস্টেন জানিয়েছেন, ওই ভিডিওগুলি সোমবার দুই কক্ষের সদস্যদের সামনেই তুলে ধরা হবে। বিদেশসচিব জন কেরি, প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও সেখানে থাকবেন। ফেনস্টেন বৃহস্পতিবার ইঙ্গিত দেন, ভোটে ওবামার জন্য নেতিবাচক কিছুই অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু এই ভিডিওগুলো হাতে আসার পরে পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টাবে বলে মত ফেনস্টেনের। হোয়াইট হাউসের তরফে এ দিন দাবি করা হয়, সিরিয়ায় অভিযান নিয়ে যথেষ্ট আন্তর্জাতিক সমর্থন আমেরিকার আছে।
রাশিয়ায় জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে আশানুরূপ সাড়া না মিললেও কংগ্রেসের সমর্থন পেতে মরিয়া ওবামা দেশে ফিরেই ফোন করতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সদস্যদের। ইতিমধ্যেই তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন, সিআইএ অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল ডেভিড পেট্রাইউস, যিনি ওবামার পাশে দাঁড়াতে বলছেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের। পাশে রয়েছেন প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনও।
যুদ্ধে সায় না দিলেও ব্রিটেনের একটি গোপন তথ্যানুসন্ধান অভিযানে বেরিয়ে এসেছে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ। একটি ব্রিটিশ দৈনিক দাবি করেছে, সিরিয়ার বিরোধী দল ন্যাশনাল কোয়ালিশনের নেতা আহমেদ আসি আল-জার্বা তাদের জানিয়েছেন, দামাস্কাসের ঘৌটা এলাকায় ২১ অগস্ট তিন জনের শরীরে সারিন গ্যাস প্রয়োগের প্রমাণ মিলেছে। লন্ডনে গত সপ্তাহে গোপনে ওই তিন জন চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তাঁদের শরীর পরীক্ষা করেই সারিন গ্যাসের উপস্থিতি মিলেছে। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। আপাতত চিকিৎসার জন্য তাঁরা ব্রিটেনেই থাকছেন।
এর মধ্যেই রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্রিটেন। সে দেশের প্রশাসন এই প্রথম স্বীকার করেছে, গত ছ’বছর ধরে মারণাত্মক রাসায়নিক সামগ্রী সিরিয়ায় রফতানি করেছে ব্রিটেন। যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। ওই সব রাসায়নিক থেকে সারিন গ্যাস তৈরি সম্ভব। তবে ব্রিটেনের দাবি, প্রসাধনী এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সামগ্রী তৈরির জন্য তাদের কাছ থেকে রাসায়নিক কিনেছিল সিরিয়া। তাই তারা তাতে অনুমোদন দেয়। রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার হবে জানলে অনুমতি দেওয়া হত না।

টুকরো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.