সাধ্যমতো সাহায্য, পরিশ্রম আর উদ্যোগ- এই তিনের ভরসাতেই বাজিমাত করে ফেললেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েতের আশ্বাসের অপেক্ষায় না থেকে বর্ষায় ভেঙে যাওয়া সেতু জোড়া লাগিয়ে ফেললেন নিজেরাই। আর তাতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন দু’পাড়ের প্রায় বেশ কয়েক হাজার মানুষ।
দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে কিছুটা এগিয়ে দামোদরের মূল স্রোত থেকে বেরিয়েছে একটি শাখা। কয়েক কিলোমিটার সমান্তরাল ভাবে বয়ে গিয়ে কাঁকসার সিলামপুরের কাছে গিয়ে মূল স্রোতের সঙ্গে ফের মিশেছে সেটি। এই শাখা ও মূল দামোদরের মাঝের এলাকায় প্রায় হাজার চারেক মানুষের বাস। ব্লক বাঁকুড়ার বড়জোড়া। কিন্তু বাজারহাট থেকে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাস, ট্রেন সবেই তাঁদের ভরসা দুর্গাপুর। আবার দুর্গাপুরের মানুষেরও ওপারে যাতায়াত লেগেই থাকে। ফলে বড়জোড়ার চকবাজার, সাহা মানা, বিহারি মানা, বড় মানা, উঁচু মানা, বড়িশালপাড়া এবং দুর্গাপুরের ছোট মানা, রামকৃষ্ণপল্লি মানা, শ্যামপুর মানার বাসিন্দাদের নিত্য যোগাযোগের ভরসা ছিল ওই পাকা সেতু। কয়েকবছর আগে বড়জোড়া পঞ্চায়েতই সেটি গড়ে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে ওই সেতুটির একাংশ। জলে নেমে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও সাইকেল, ভ্যান, রিক্সা বা মোটরবাইক চলাচল একরকম বন্ধই হয়ে যায়। |
এতে ওপারের সব্জি চাষি বা নডিহার হাইস্কুলে পড়তে আসা পড়ুয়ারা থেকে বরিশাল পাড়ার প্রাথমিক স্কুলে পড়তে যাওয়া এপারের খুদেরাও মুশকিলে পড়ে। সেতু সারাইয়ের কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়েন গ্রামবাসীরা। কেউ বাঁশ, কেউ গাছের গুঁড়ি, কেউ বালির বস্তা, আবার কেউ পেরেক কিনে দিয়ে দিনভর পরিশ্রম করে সম্প্রতি তৈরি করে ফেলেন একটি বাঁশের সাঁকো। গ্রামবাসীরাই জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রাধেশ্যাম দাসের উদ্যেগেই এ কাজ হয়েছে। নিজের বাঁশ ঝাড় থেকে ৩০টি বাঁশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের তিন শিক্ষক আবার কিনে দিয়েছেন কেজি দশেক পেরেক আর কিছু বালির বস্তা। কয়েকজন ফুল চাষি এগিয়ে এসেছেন বালির বস্তা, কাঠের গুঁড়ি নিয়ে। কাজের মাঝে পেট ভরাতে মুড়ি-চানাচুরের ব্যবস্থাও করেছিলেন একজন। সাঁকো তৈরির দিনভর পরিশ্রমের পরেও তাই মুখে হাসি স্থানীয় বাবলু হালদার, কার্তিক বিশ্বাস, সুরেন সরকার, নিত্যানন্দ ব্যাপারী, মন্মথ কীর্তনিয়াদের। আর বড়জোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জবাব, নতুন বোর্ড এখনও কাজ শুরু করেনি। তাই সমস্যা হচ্ছে। তবে রাধেশ্যামবাবু বলেন, “কবে পঞ্চায়েত কাজ করবে তা না ভেবে আমরাই ব্যবস্থা করে নিয়েছি।” |