দুষ্কৃতীদের দাপটে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল এলাকার বাসিন্দাদের। গত কয়েক মাস ধরে গৃহস্থ বাড়ি থেকে শুরু করে এলাকার কল-কারখানায় প্রায়ই চুরি হচ্ছিল। শুক্রবার গভীর রাতে একটি বাড়িতে চুরি করতে এসে সজাগ বাসিন্দাদের হাতে বমাল ধরে পড়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। গণপ্রহারে মৃত্যু হয় এক জনের। আর এক জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার দাশনগর এলাকার কাশীপুরে। পুলিশ জানায়, মৃত দুষ্কৃতীর নাম শেখ রাজু (৩৬)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশি হেফাজতে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি সুমন সরকার নামে আর এক দুষ্কৃতী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার দাশনগর এলাকার একটি কারখানায় লোহা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করার পরে রাত আড়াইটে নাগাদ ওই দুই দুষ্কৃতী হানা দেয় শ্যামল দাস ও দীনবন্ধু বাছাড় নামে দুই বাসিন্দার বাড়িতে। এক জন শ্যামলবাবুর বাড়ির পাঁচিল টপকে দীনবন্ধুবাবুর নির্মীয়মাণ বাড়ির দোতলায় ওঠে। অন্য জন শ্যামলবাবুর বাড়ির একতলায় ঢোকে।
দীনবন্ধুবাবু জানান, গরমের জন্য ওই রাতে ঘরের মেঝেতেই শুয়েছিলেন তিনি। আচমকা এক শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেখেন, ঘরের ভিতরে কেউ ঘোরাঘুরি করছে। প্রথমে তিনি কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে দেখতে থাকেন ওই ব্যক্তির গতিবিধি। দীনবন্ধুবাবু বলেন, “বুঝতে পারি, চোর ঢুকেছে। কিন্তু চোর বুঝতে পারেনি যে, আমি জেগে আছি।” দীনবন্ধুবাবু জানান, চোর যেই পাশের ঘরে যায়, তখন তিনি বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। চোর ফাঁদে পড়েছে বুঝতে পেড়ে ওই ঘরের বারান্দার দরজা খুলে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়। তিনি বলেন, “বাইরে এসে দেখি, চোর খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুটছে আর তার পিছনে সাইকেলে একটা বস্তা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে আর এক জন। আমি ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করতে লোকজন এসে দু’জনকে ধরে ফেলেন।”
পুলিশ জানায়, এর পরেই শুরু হয় গণধোলাই। এলাকার বাসিন্দা গৌতম সরকার বলেন, “এলাকায় চোরের উৎপাতে আমাদের ঘুম চলে গিয়েছে। পালা করে রাত জাগতে হচ্ছে। পুলিশকে জানিয়ে ফল হয়নি। এলাকায় ক্ষোভ ছিলই। হাতেনাতে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ায় সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে তাদের উপরে।” পুলিশ জানায়, গণধোলাইয়ের খবর পেয়ে দুই দুষ্কৃতীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা শেখ রাজুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হাওড়ার এডিসি (সাউথ) অঞ্জলি সিংহ বলেন, “গণপ্রহারেই ওই দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে। আর এক জনের চিকিৎসা চলছে। পিটিয়ে মারার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।” |